Ameen Qudir

Published:
2020-02-23 00:27:29 BdST

ডাক্তারকে চড় মারায় আমি ক্ষুব্ধ নই:ডাক্তারদের মৃত্যু অনেক আগেই হয়েছে


ডাক্তার অনির্বাণ বিশ্বাস
লোকসেবী চিকিৎসক,কবি
_______________________
ডাক্তারের মৎস্যমুখী।
CMRI হাসপাতালে প্রসূতির মৃত্যুর পর ডাক্তারবাবুকে চড় মারার ঘটনায় আমি আর ক্ষুব্ধ নই। আমার আর কোন অনুভূতি হয় না। কেননা,ক্রমান্বয়ে ঘটতে থাকা এমন সব ঘটনায় আমার অথবা আমার মত ডাক্তারবাবুদের মৃত্যু অনেক আগেই হয়েছে। আমি এখন জীবিকাবদ্ধ শব। এক পচাগলা সমাজে চিকিৎসার নামে নাটক করি।

আসলে হিন্দু মতে,মৃত্যুর পর সমস্ত ক্রিয়া কলাপ মৎস্যমুখী(নিয়ম ভঙ্গ)র পর সমাপ্ত হয়। ডাক্তার নিগ্রহের নামে এই প্রতিদিনের মৃত্যুর পর মৎস্যমুখীর সময় আর হয়ে উঠছে না। তাই,আমাদের ডাক্তারদের মুক্তি হচ্ছে না। প্রেতের মত,এক প্রেত লোকে বিচরন করি এখন আমরা।

অথচ,আমাদের মৃত্যুর সঙ্গে কোন সখ্যতা থাকার কথা নয়। বরং চূড়ান্ত বৈরীতাই সত্য। আপনারা বিশ্বাস করবেন কি না জানিনা, আমরা ডাক্তাররা মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে শিখেছি। এও জানি,সব লড়াই জেতা সম্ভব নয়। ডাক্তারীতে এটাই শেখানো হয়,এই লড়াইটা তোমরা লড়বে।চূড়ান্ত ক্ষমতায়। ফলের আশা করবে না,কিন্তু লড়াই যেন সৎ হয়।

কিন্তু..তবু.. নাঃ..থাক।

আমার কথা বলি।

আমার ডাক্তার হিসাবে এই ক্রমাগত মৃত্যুতে মনে হয়...আমার মৎস্যমুখী কবে হবে ?
আমার এখন মৃত্যুকে মনে হয় সমূদ্রের হাওয়ায় উড়তে থাকা চুল।কখনো মনে হয়,মৃত্যু, অবিরাম ঝরতে থাকা বৃষ্টির দিনের ভিজে মাটির চেয়ে মহত্তর কোনো কাব্য ।
মৃত্যুকে এখন বিষন্নময়ী গোধূলির আলো স্নাত প্রেমিকার মতো লাগে,যে আর্দ্র স্বরে ডাকে "চলে এস,তোমায় ছাড়া থাকাই যায় না..."

ডাক্তার হিসেবে আমার কাছে এই মৃত্যু মানে এখন উড়তে পারা...
কালসময়ের নীরব উল্লাসে ,স্থবিরতা ভেঙে বেরিয়ে আসা..
অবিরাম অনন্তের কান্না ভেজার ঘাটে , মৃত্যু হল আমার অস্থি বিসর্জন।

আমার মৎস্যমুখীতে নিমন্ত্রন রইল। পাবদার ঝাল,রুইয়ের কালিয়া,চিতল মাছের মুইঠ্যা,ইলিশের পাতুড়ি...আপনাদের পাতে পড়বে,এ আমি নিশ্চিত করে যাব।
আসবেন কিন্তু। প্রেতলোক থেকে আমায় মুক্তি দেবেন,এই আশা রাখি।

______________________

- ডাক্তার অনির্বাণ বিশ্বাস

( যারা ডাক্তারদের ঘৃণা করেন,আজ অন্তঃত বিরূপ মন্তব্য করবেন না। চলেইতো যাচ্ছি,আমি/আমরা..)

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়