Ameen Qudir

Published:
2020-02-18 21:09:11 BdST

সদ্যপ্রয়াত অভিনেতা তাপস পালকে শেষ সময়ে যেমন দেখেছি


ডা. অনিন্দ জ্যোতিপ্রিয় বন্দোপাধ্যায়
___________________________
মাত্র ৬১ বছর বয়েসে মহাপ্রয়াণে চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের এই মহানায়ক। আমি মুম্বই এ বড় হওয়া, ডাক্তার হওয়া , ডাক্তারি করা বাঙালি। মা মাসীমার কাছে তাপস পালকে চিনেছি। তাদের কাছে শুনেছি:" দাদার কীর্তি"র কথা।
তার চলচ্চিত্রের ভক্ত নন, এমন বাঙালি দেখিনি। এই মানুষটার শেষ সময়টা দেখার দুর্ভাগ্য আমার হয়েছিল। তিনি স্নায়ু সমস্যায় খুব ভুগছিলেন। সে সূত্রে হাসপাতালে যখন এলেন, সব শেষ হয়ে গেল। বেশ কষ্ট পেয়েছেন তিনি। তার কষ্ট আমি অন্যভাবে অনুভব করছিলাম। শুধু বাংলার বাইরের অনাবাসী বাঙালি হিসেবেও নয়, তার কষ্টে ডাক্তার হিসেবে নিরাসক্ত থাকতে পারি নি।
আমার মা জানতেন, তাপস পাল আমাদের হাসপাতালেই চিকিৎসা নেন। তিনি নিয়মিত খোঁজখবর নিতেন। ঠিক যেন তাপসবাবু আমাদের পরিবারেরই মায়ের কোন পরমাত্মীয়।
তাপস পাল সম্পর্কে নানা কথা মায়ের কাছে শুনেছি। তিনি নিজের বাড়ি থেকে তার নিজের মাকে বের করে দিয়েছেন। আমার মা সে সব একদম বিশ্বেস করেন নি। বলতেন, অন্য কিছু ব্যাপার আছে রে জ্যোতি। তুই কি পারবি আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে। পারবি নে। তাহলে তাপস কেমন করে পারবে!
মা যেন আপন ভাই বা দেবরকে আগলে রাখতে সওয়াল করতেন। আমিও তখন পরম আবেগে মাকে জড়িয়ে ধরতাম।
কি আর বলব, তাপসবাবু এসব প্রশ্নের জবাব দিতে হয়তো পারেন নি। কিন্তু তার ভক্তরা একদমই বিশ্বাস করেন না , তার মাকে বের করা নিয়ে গল্পগুলো।
অভিনেতা , মহামানবদের পাওনা এটুকুই। অনেক সময় তাদের নিয়ে মিথ্যা রটনা হয়। আবার অনেকসময় সেসব রটনা জলজ্যান্ত সত্য হলেও ভক্তরা বিশ্বেস করেন না।
_____________

প্রয়াত অভিনেতা তাপস পাল সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য



প্রয়াত তাপস পাল। ফাইল চিত্র।
প্রয়াত অভিনেতা ও প্রাক্তন সাংসদ তাপস পাল। বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় এই অভিনেতা মঙ্গলবার ভোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মুম্বইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।

বাংলা ছবিতে তিনি পাশের বাড়ির ছেলে। আজও বাংলা চলচ্চিত্র এবং বাঙালি দর্শক বসন্ত এলে বার বার সেই ‘দাদার কীর্তি’র তাপসকেই মনে করেন। সেই ছবিতে তাঁর নিপাট ভালমানুষি, যাঁকে হয়তো আমরা ‘বোকামি’ বলে পরিহাস করেছি। কিন্তু তা আজও প্রেমের বার্তা দিয়ে ফেরে। এখানেই বোধহয় তাপস পালের অভিনয়ের দক্ষতা। যা দেখে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী পর্যন্ত বলেছিলেন, ‘‘দাদার কীর্তিতে তাপস পাল যে অভিনয় করেছেন তা আমি করতে পারতাম না।’’ ‘দাদার কীর্তি’র মতো ‘সাহেব’ ছবিতেও তিনি উজ্জ্বল। বার বার এমন চরিত্র নির্বাচন করছেন যা বাংলার তথাকথিত ‘হিরোইজম’কে ভেঙে দিয়েছে। এই স্বাভাবিক, সারল্যই তাপস পালের ইউএসপি। যে কারণে তাঁর একের পর এক পারিবারিক গল্পের ছবি হয়ে উঠেছিল তৎকালীন বাংলার ‘কমার্শিয়াল ছবি’। এক দিকে নিপাট সারল্য অন্য দিকে ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে বীরত্ব প্রদর্শন করে নায়িকাকে উদ্ধার। এমন বহু দৃশ্যে তিনি অভিনেতা থেকে স্টার হয়ে উঠেছিলেন। এই কর্মাশিয়াল স্টারকে অভিনয়ের জন্য ডেকেছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মতো পরিচালক। দর্শক দেখেছে ‘উত্তরা’ বা ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ ছবিতে তাঁর অসামান্য অভিনয়। এসব তথ্য আনন্দবাজার পত্রিকার সৌজন্যে পাওয়া।
শুধু কী তাই? তাঁর সহজিয়া অভিনয় তাঁকে আরব সাগরেও টেনে নিয়ে গিয়েছিল। ১৯৮৪তে হীরেন নাগের ছবিতে তাঁর বিপরীতে নায়িকা ছিলেন মাধুরী দীক্ষিত। রাখী গুলজারের সঙ্গেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু তাপস পাল পুরোদস্তুর বাংলার অভিনেতা। কলকাতায় তরুণ মজুমদারের ডাকে মুম্বই থেকে কলকাতা ফিরে এসে দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে অভিনয় করেন ‘ভালবাসা ভালবাসা’ ছবিতে। ১৯৮৫-তে এই ছবি বক্স অফিসে বিপুল সাফল্য এনে দেয়।
বাংলা ছবিতে তৈরি হয় দেবশ্রী-তাপস জুটি। একে একে বাড়তে থাকে ছবির তালিকা। ‘অর্পণ’, ‘সুরের সাথী’, ‘সুরের আকাশে’, ‘নয়নমণি’, ‘চোখের আলোয়’, ‘তবু মনে রেখো’। তপন সিংহ থেকে অঞ্জন চৌধুরি, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় থেকে তরুণ মজুমদার আশি থেকে নব্বই দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের প্রেম, অভিমান, অনুরাগ এবং লড়াই— বাঙালির সমস্ত আবেগের মিশেল সেই তাপস পাল।
পরবর্তীকালে দেবশ্রী পেরিয়ে শতাব্দীর সঙ্গে জুটি বাঁধেন এই নায়ক। হরনাথ চক্রবর্তী, তরুণ মজুমদারের হাত ধরে এই জুটির ম্যাজিক ক্লিক করে বক্স অফিসে। শুধু শতাব্দী বা দেবশ্রী নয় ইন্দ্রাণী হালদার থেকে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। দেবাদিত্যের ‘আটটা আটের বনগাঁ লোকাল’ ছবিতে শেষ বারের মতো দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
রুপোলি পর্দার নায়ক থেকে সংসদের গণ্ডিতে। ২০০৯ সালে মোড় ঘুরে যায় তাপস পালের অভিনেতা জীবনে। ওই বছর রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের টিকিটে কৃষ্ণনগর থেকে জিতে সাংসদ হন তাপস পাল। নানা মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে রোজভ্যালি কাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁকে গ্রেফতারও করে সিবিআই। শেষ পর্যন্ত অভিনয়ের চেনা জগতেও ফিরতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অসুস্থতা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে গেল সবার অলক্ষ্যে।
সামনেই দোল। বসন্তের মন কেমন করা হাওয়ায় ভরে গিয়েছে শহর। ‘দাদার কীর্তি’র ‘কেদার’ আবার পথে নামবেন রঙ মাখতে। কিন্তু বাস্তব ‘কেদারের’ জীবনে বসন্ত এনে দিল নির্মম মৃত্যুর হাতছানি।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়