Ameen Qudir

Published:
2019-10-01 18:23:48 BdST

স্ত্রৈণ বি চৌধুরীকে নিয়ে জুয়াড়ি নাছিরের ২০ লাখ টাকার বাজি


ডা. সাঈদ এনাম
সাইকিয়াট্রিস্ট
____________________

 

বোরহান চৌধুরী বি এন্ড বি কোং এর কর্ণধার। তার স্ত্রী'র নাম বেবী চৌধুরী। তাই নামটি এমন। দোর্দন্ডপ্রতাপ, চৌকস, আর নিয়মানুবর্তিতায় জুড়ি নেই। যদি বলেন অফিসে ৭ টায় আসবেন তবে ৬ঃ৫৫ তে এসে বসবেন চেয়ারে। আজ পর্যন্ত সময়ের হেরফের হতে দেখেনি কেউ। মিসেস চৌধুরীও অফিসের সেকেন্ড ইন কমান্ড। তিনিও সে রকম সমান তালে।
ক'দিন যাবৎ বি চৌধুরীকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। বিষয়টি আর কেউ টের না পেলেও মিসেস চৌধুরী টের পেলেন। শোবার আগে মাথার চুলগুলো টেনে টেনে বললেন, "তুমি ক'দিন আনমনা, কেনো?"।
স্ত্রৈণ বি চৌধুরী আমতা আমতা করে বলেই ফেললেন, "ঠিকই ধরতে পেরেছো। তোমাকে লুকাবো না। আমাকে কয়েকদিন ধরে টেলিফোনে এক লোক বলছে আমার উরুতে নাকি গুলির দাগ। কিন্তু আমার উরুতেতো তেমন কিছু নেই। একটা নখেরও দাগ নেই"।
হু হু করে হেসে উঠলেন মিসেস চৌধুরী। "বিয়ের পর তোমাকে এই প্রথম চিন্তিত আর অন্যমনস্ক দেখলাম। তাও আবার হাস্যকর হাস্যকর উপলক্ষ "। ডার্লিং হেসো না, আমি তামাশা করিনা। হকার থেকে শিল্পপতি আমি এমনি এমনি হইনি। রং তামাশা নয়...", চোখেমুখে সিরিয়াস ভাব নিয়ে ঝাঁঝালো জবাব দিলেন চৌধুরী।
হাসি থামিয়ে এবার মিসেস চৌধুরী ও সিরিয়াস। 'কি হয়েছে?'
'লুলা নাছির' পরিচয়ে এক মাস্তান ফোন করছে কয়েকদিন যাবৎ। আমার উরুতে নাকি পুরাতন গুলির দাগ। তরুন বয়সে ডাকাতিতে ধরা পড়ে পুলিশের গুলি খাই, সেই দাগ এখোনও আছে। সে বাজী ধরেছে গুলির দাগ না দেখাতে পারলে দশলাখ টাকা দিয়ে দিবে.., বলেই বি চৌধুরী লুংগী তুলে বউকে বললেন, 'তুমি দ্যাখোতো কোন দাগ টাগ ছিটে ফোটা তিল ও আছে কিনা উরুতে। আমি এ দান হারতে চাইনা। আমিও জুয়া খেলি, সেটা আমার ব্যবসার খাতিরে। অনেকের সাথে ডিলিং এ যাই, রিক্স নেই। হারি জিতি, আমার এত্তো বড় প্রতিষ্ঠান একদিন দুই দিনে হয়নি, এসব করে করেই..'
ভালো করে দেখেটেখে মিসেস বি চৌধুরী বললেন, 'তুমি নিশ্চিন্তে বাজী ধরো। হা হা.. কোন পাগলা জুয়াড়ি আইছে। মনে হয় মদটদ বেশি খাইছে, তার ছিড়ে গেছে'
নাছিরের ফোনে ফোন দিলেন বি চৌধুরী, 'নাছির, আমি রাজি। কি করতে হবে..?'
'স্যার কিছুনা, আমি আসুম, আপনার উরুতে গুলির দাগ দেখামু, আর পাঁচলাখ নিয়া যামু..'
'যদি না দেখাতে পারো..?'
'পাঁচলাখ আপনার টেবিলে থুওইয়া যামু..,জুয়াড়িগো দানের হের ফের অয়না। একবার জুয়ায় হাইরা আমার বউরে দিয়া দিছি আরেকজনরে মাগার কতার বরখেলাপ করিনাই...'
'নাছির, তাহলে দশলাখ নিয়ে অফিসে চইলা আইসো কাল...'
'আপনার পনেরো লাখ রেডি..., আপনি হারলে ১৫ লাখ। গুলির দাগ কিন্তু আছে, আমি দেখামু, আপনি হারবেন...'
চৌধুরী হো হো করে হেসে উঠলেন। 'নিশ্চয়ই নাছির, অল আর ইন ক্যাশ..'
রাতে শেষমেশ আবার বি চৌধুরী নিজের উরু দেখলেন, স্ত্রীকেও দেখালেন।
অফিসে নিরাপত্তা জোরদার করলেন চৌধুরী । জুয়ায় অনেক রকমের ডিল থাকে। কোন রিস্ক নিতে চাননা তিনি। বাজিতে তাকে জিততেই। হাতের মুঠোতে দশলাখ। সামান্য এক ল্যাংড়া জুয়াড়ি তাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে দিয়েছে।
চমৎকার পরিপাটি হয়ে অফিসে এসছেন চৌধুরী। অফিস পুলিশ পাহারাও দিয়েছেন। এমনি এমনি নাকি দিয়েছেন।
পি এস শাকিলা কে ডেকে সব ঠিকঠাক আছে কিনা জিগ্যেস করলেন। যদিও নিশ্চিত তবুও ক্যাশ পনেরো লাখ রেডি কিনা তাও জিগ্যেস করলেন। শাকিলাকে দরজা লক করে আবার তার উরুটা দেখতে বললেন, তিল পরিমাণ দাগটাগ আছে কিনা বের করতে বললেন। শাকিলা নির্ভয় দিলো, "স্যার দশ লাখের দান এবার নিশ্চিত। আমার পঞ্চাশ হাজার কিন্তু বলে রাখলাম'। শাকিলা হাসে।
বি চৌধুরী কাছে শাকিলাকে কাছে টেনে বললেন, "নিশ্চয়ই আমার টিয়া পাখি। তুমিইতো আমার ব্যবসার লক্ষী.."। "স্যার লোকটা ব্লাফ মারছেনাতো..?" শাকিলা ভারী গলায় জিগ্যেস করে।
"নাহ", জুয়াড়িরা এক কথার হয়, জবাব দেন চৌধুরী।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, "স্যার আপনি সত্যি সত্যি বাজিতে রাজী, দাগ কিন্তু আছে, আপনি হারবেন..!" ল্যাংড়া নাছির ফোন দিয়ে কনফার্ম হয়।
"হা হা...,নাছির, আমি হারতে চাই", তুমি আসো।
'আমার সাথে স্বাক্ষী থাকবে একজন'
'কিসের স্বাক্ষী..? '
'বাজির স্বাক্ষী, আপনি যদি গুলির দাগ অস্বীকার করেন।ইচ্ছা করলে আপনিও স্বাক্ষী রাখতে পারেন। অবশ্য আপনিতো পুলিশ রাখছেন...হা হা হা..' নাছির হাসে।
নাছিরের কথায় হো হো করে হেসে উঠেন চৌধুরী, 'সমস্যা নাই নাছির একজন স্বাক্ষী আনতে পারো। আমার কোন স্বাক্ষী লাগবেনা'।
টেবিলের দু পাশে দুজন বসা। একজন সমাজের দোর্দন্ডপ্রতাপ শালী, সম্মানী লোক আরেক জন জুয়াড়ি, ল্যাংড়া নাছির। পোড়া ইটের মতো লাল তার চোখ। পাশে অচেনা এক লোক। বেশভূষায় অনেকটা নাছিরের মতোই।
নাছিরের সামনে বি চৌধুরী সাহেব একে একে শার্ট প্যান্ট খুলতে লাগলেন। নাছির মুচকি হাসছে। প্রায় দশ মিনিট বি চৌধুরী ল্যাংটা হয়ে ঘুরলেন টেবিলের এপাশে থেকে ওপাশে। তারপর নাছিরের কাছ থেকে একটা পুটুলি হাতে নিলেন, দশ লাখ টাকার পটুলি।
বেল টিপে শাকিলাকে ডাকলেন, "নাও, ভালো করে দেখো। পুটুলিতে সব ঠিকঠাক আছে কিনা? আর হেসে হেসে বললেন, এক জগ ঠান্ডা পানি দাও নাছির কে.."
নাছির ও মুচকি হাসে। 'পানি লাগবেনা না', সে বেরিয়ে যায় বি চৌধুরীর অফিস থেকে।
খোঁড়া নাছির পা টেনে টেনে এগিয়ে চলে, " দে পনেরো লাখ, তুইতো হারলি বাজিতে। বললাম না, এ শহরের সবচেয়ে নামি-দামি দোর্দন্ডপ্রতাপশালী বি চৌধুরী সাহেব আমাকে দেখলেই প্যান্ট খুলে ল্যাংটু হয়ে নাচতে থাকবে....", সাথে থাকা স্বাক্ষীর কাছে হাত পাতে নাছির।
নাছির বাজি ধরেছিলো আরেক জুয়াড়ির কাছে, 'যদি বি চৌধুরী সাহেব তাকে দেখা মাত্রই ল্যাংটা হয়ে নাচানাচি না করে তাহলে তাকে নাছির বিশ লাখ টাকা দিবে'।
__________________

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়