Ameen Qudir

Published:
2019-03-03 19:37:20 BdST

ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের দামামা : যেভাবে বিশ্লেষণ করছেন চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞ


 


ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ
______________________

জলে ভিজে নেতিয়ে গেলো পাক-ভারত যুদ্ধের দামামা।
পুলওয়ামা ম্যাসাকারে পাকিস্তানের সুড়সুড়িতে সাড়া দিয়ে মোদিজি যে যুদ্ধের দামামা বাজিয়েছিলেন শেষ পর্যন্ত তা আর বেশীদূর গড়াতে পারেননি তিনি!

বেশীদূর না গড়ানোর পেছনে নিজ দেশের ভিতর থেকেই তিনি একরকম প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন বললে বোধ করি কথাটি ভুল হবে না।

এই যুদ্ধে কংগ্রেসসহ ভারতের ২১টা বিরোধীদল শেষ পর্যন্ত মোদিজির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং তারা বলতে চেয়েছে যে ভারতের আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে মোদিজি দেশের অভ্যন্তরে তার ক্ষয়িষ্ণু জনপ্রিয়তাকে আবার চাঙ্গা করতে এই যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন!

এমনকি তারা এমন প্রশ্নও তুলেছেন যে এই যুদ্ধে মোদিজি যতটা না দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখেছেন তার চেয়ে বেশি তার নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার স্বার্থটাকেই বড় করে দেখেছেন!

ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এমন আচরন ও বক্তব্য আমার কাছে অনেকটা অভিনব ও অপ্রত্যাশিত লেগেছে!
কারন ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আগে কখনো এমন শুনেছি বলে মনে করতে পারিনা বরং পক্ষ বিপক্ষের উর্ধ্বে উঠে জাতীয় ইস্যূতে ভারতের সরকারিদল বিরোধিদল অতীতের মতো এবারও একইসুরে কথা বলবে এমনটাই ধারনা ছিলো আমার!

এছাড়া ভারতের এক বায়ুসেনা(অভিনন্দন বর্তমান) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি হওয়ায় সেটাও মোদিজির জন্য এক বড় সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।

যতক্ষণ পর্যন্ত না আটক ভারতের বায়ুসেনার জীবন পাকিস্তান কর্তৃক বিপন্ন হচ্ছে কিংবা যতক্ষণ পর্যন্ত না পাকিস্তান বলছে যে তাদের আটককৃত বায়ুসেনাকে মুক্তি দেওয়া হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত মোদিজি যুদ্ধটাকে আর একবিন্দুও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নৈতিক বৈধতা পাচ্ছিলেন না!
এখানেই মোদিজি থামতে বাধ্য হয়েছেন!

এখানেই আসল খেলাটা খেলে দিয়েছেন ইমরান খান!
বলটা আসলে তার কোটেই ছিলো!
বলটা আসলে রসগোল্লার মতোই ছিলো তাই একজন খ্যাতিমান ও পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে তিনি সহসাই ছক্কা হাকিয়ে দিয়েছেন!

তিনি আটককৃত ভারতের বায়ুসেনাকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং মুক্তিও দিয়ে দিলেন!

ইমরান খান যদি আটককৃত এই বায়ুসেনাকে মুক্তি না দিতেন কিংবা মুক্তি না দিয়ে হত্যা করতেন তাহলে মোদিজি যেমন যুদ্ধ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বৈধতা পেতেন তেমনি জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘনের দায়ে ইমরান খানও সারাবিশ্বে বন্ধুহীন হয়ে চরম বিপাকে পড়তেন!

পক্ষান্তরে এক্ষেত্রে যুদ্ধ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সারাদেশের জনগণসহ সরকার ও বিরোধীদল এবং সারাবিশ্বের সমর্থন পেতে মোদিজিকে মোটেও বেগ পেতে হতো না!

তাই আটককৃত বায়ুসেনাকে মুক্তি দেওয়ার মাঝে যারা ইমরান খানের মহত্ব খুঁজছেন কিংবা ইমরান খানকে নোবেল পাইয়ে দেওয়ার দৌড়ে নেমেছেন তারা যে আসলেই কঠালপাতার খাদক এ বিষয়ে আর কোন সন্দেহ রাখার বিন্দুমাত্র কারন নেই!!

সেইসব কাঠালপাতা খাদকদের জেনে রাখা উচিৎ ইমরান খান যদি একজন যুদ্ধবন্দীকে মুক্তি দিয়ে নোবেল পাওয়ার যোগ্যতা পেয়ে যায় তাহলে তো একাত্তরে প্রায় তিরানব্বই হাজার পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীকে ফেরৎ দেওয়ার কারিশমায় জগতের শুরু থেকে শেষদিন পর্যন্ত সকল নোবেলের বৈধ দাবিদার আমরা!!

অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য যে ইমরান খান মহত্ব দেখিয়ে আটক যুদ্ধবন্দীকে মুক্তি দেননি বরং নিজের পিঠ বাঁচাতেই তাকে মুক্তি দিয়েছেন!

পারমানবিক শক্তি বলেন কিংবা সামরিক শক্তি বলেন সবদিক দিয়েই ভারত পাকিস্তান থেকে এগিয়ে।

আর অর্থনৈতিক অবস্থান!?
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিস্তারিত নাইবা বললাম! পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তো যাচ্ছেতাই! আজকের বিশ্বে এতো সর্বজনবিদিত যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিশ্বের দ্বারে দ্বারে আজ ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরছেন!

তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক শক্তি সমানে সমান এবং যদি ধরেও নিই যে যুদ্ধ কন্টিনিউ হলে দু'দেশেরই সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সমানে সমান হতো তারপরেও সেই অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা ভারতের জন্য যতটা সহজতর হতো পাকিস্তানের পক্ষে বর্তমান ভঙ্গুর অর্থনীতি মোটেও ততটা সহজতর হতো না!

সেক্ষেত্রে যদি যুদ্ধটা কন্টিনিউ করতো তাহলে পাকিস্তানের যে অবস্থা হতো বোধ করি তা সোমালিয়ার চেয়েও করুণ হতো!
চরম দূর্ভিক্ষ আর হাহাকারে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে পাকিস্তান দেশটি হারিয়ে যেতে পারতো!!

এ যাত্রায় পাকিস্তানকে বাঁচিয়ে দিলেন ইমরান খান।
তাই যুদ্ধবন্দীর প্রতি ইমরান খানের মহত্বের গল্প না ফেঁদে বরং শুধুমাত্র পাকিস্তানকে ইম্পেণ্ডিং ধ্বংসের হাত রক্ষার জন্য এদেশীয় পাকিবান্ধব কাঠালপাতা খাদকেরা তাকে বাহ্ বাহ্ দিতে পারেন।
তাতে আমরা কোন আপত্তি করবো না ।
__________________________

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ।
সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ,স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক পরিষদ, বিএসএমএমইউ।
Doctor ,t Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University
Former Secretary General বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ,দিনাজপুর।
Studied MBBS. at Dinajpur Medical College, Dinajpur

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়