Ameen Qudir

Published:
2018-11-17 17:10:55 BdST

স্বামী হত্যার মিথ্যা মামলায় জেল খাটাও যখন স্বস্তিদায়ক


 

 

লেখকের ছবি

 


ডা. মিথিলা ফেরদৌস
_______________________

ট্রেনিং পিরিয়ডে আমার প্রিজন সেলে ডিউটি ছিলো।প্রিজন সেল বলতে প্রিজনদের জন্যে আলাদা কিছু না,ওয়ার্ডেই থাকতো,কিন্তু ওইসব রুগীদের ভর্তি থেকে শুরু করে,বিদায়ের দায়িত্ব আমার ছিল। এইখানে ডিউটির একটা ভাল দিক,এরা খুবই নিয়ম কানন মেনে চলতো,যে কন্সটেবল রুগী আনতো,সে স্যার স্যার করে বেশ সম্মান করতো।সবচেয়ে বড় সুবিধা,ওটির ড্রাগগুলি সুন্দর গুছায় দিতো।এই ডিউটি করতে অনেকে বিরক্ত হলেও আমি হতাম না।

আমি ব্যক্তিগত ভাবে কোন প্রিজন নিয়ে কোন আগ্রহ প্রকাশ করতাম না।কারণ আমার সবসময় মনে হয়, আমাদের দেশের যাদের জেল হাজত হয়,তারা হয় নির্দোষ আর নাহয় সামান্য দোষে অসহায়ভাবে জেলে যেতে হয়েছে।কোন বড় অপরাধী জেল খাটেনা,এই দেশে।

যাইহোক,একবার এক কমবয়সী মেয়ে কয়েদীর এপেন্ডিক্স অপারেশন করে,বাইরে এসে রুগীর লোক বা জেলখানার কাউকে বাইরে এসে কিছু জিনিস বুঝিয়ে দিতে খুঁজতেছিলাম।একজন মধ্যবয়সী মহিলা কাছে এলেন।আমি জিজ্ঞেস করলাম,
:আপনার কে হয়?
:কেউ না ম্যাডাম,আমি নিজেও কয়েদী।
একটু অবাক হয়ে বললাম,
:কয়েদীকে এমন ছেড়ে দিয়ে রেখেছে কেন?
:ম্যাডাম জেলখানায় আমার ১৬ বছর হচ্ছে।ওরা জানে আমি পালাবো না তাই।
এইবার আমি আগ্রহী হয়ে উঠি।সে তখন যে গল্প বলল,সেই গল্প এখনও ভাবলে আমার নিজের অজান্তে দীর্ঘশ্বাস চলে আসে।

১৬/১৭ বছরেই বিয়ে হয়ে যায় মেয়েটির,বিয়ের পর সব ঠিকঠাক চলছিল।স্বামী পরিশ্রমী এবং মেয়েটিকে খুব ভালবাসতো।সুখেই কাটছিল জীবন।যৌথ পরিবার, শ্বাশুরী প্রায় যৌতুকের জন্যে ছেলেকে চাপ দিচ্ছিল।ছেলে এইসবে গুরুত্ব দিতো না।মেয়ের উপর চলে অমানবিক নির্যাতন। একপর্যায়ে ছেলে তার বউকে নিয়ে আলাদা হতে চায়।বিয়ের দেড়বছরের মাথায় খুন হয়ে যায় মেয়েটির স্বামী।মেয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই স্বামীর খুনের দায়ে জেল হয় মেয়েটির।জেল হবার কয়েকবছর পর উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায় মেয়েটি।

জেলের বাইরে এসে দেখে, বাইরের জগৎ জেলখানার চেয়েও ভয়াবহ।কারো কাছেই ঠাই হয় না।কম বয়স,চারিদিকে কু প্রস্তাব।মেয়েটি না পেরে জেলার সাহেবের হাতে পায়ে ধরে আবার জেলেই ফিরে আসে(কিভাবে আসা যায় সেইটা অবশ্য আমি ব্যাখ্যা করতে পারবোনা)।এরপর ষোলো বছর জেলখানার জীবনে অভ্যস্ত মেয়ে,জেলখানাকেই আপন করে নিয়েছে।এখন তার দায়িত্ব অসুস্থ এইসব মেয়ে কয়েদীদের দেখাশুনা করা।মোটকথা জেলখানায় নিজের একটা অবস্থান পাকা করে নিয়েছে মেয়েটি।

কিছু কিছু অসহায় মেয়েদের জন্যে জেলের বাইরেটাই বড় একটা জেলখানা,যেখানে নিশ্বাস নিতে তাদের কষ্ট হয়।সমাজে এমন কত অসহায় মেয়ে যে আছে!!যাদের জন্যে স্বামী হত্যার মিথ্যা মামলায় জেল খাটাও স্বস্তিদায়ক ।
________________________

©মিথিলা ফেরদৌস । লেখক লোকসেবী চিকিৎসক।

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়