Ameen Qudir

Published:
2018-08-21 04:18:39 BdST

উৎসব মানেই ভ্রমণ বাংলার কেরালা স্বরূপকাঠি : নামমাত্র খরচে স্বর্গের কাছাকাছি



স্বরুপকাঠি ৷ সবকিছু ছবির মতন ৷

 


ডা.শতদল সাহা
______________________________

স্বরুপকাঠি কোন অংশেই কেরালার চেয়ে কম নয়। বরং ঢাকা থেকে নদী পথে কাছাকাছি এই ভ্রমণস্বর্গ। না গেলে জীবনই বৃথা। বরিশাল নগরী থেকে মাত্র আধা ঘন্টা দূরে আশ্চর্য এক সুন্দর ভূমি।
বর্ষাকালে স্বরূপকাঠির খালে খালে পেয়ারা ভরা ছোট ছোট নৌকা। ভাসমান সেই পেয়ারা ঘাটের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ অনেকে। শীত মৌসুমে স্বরূপকাঠি নিজেকে মেলে ধরে অন্য রূপে। যত দূর চোখ যায়, শুধু ফুল আর ফুল। নানা রঙের রঙিন কার্পেট যেন বিছিয়ে রাখা হয়েছে নদীর তীর ঘেঁষে। লাল নীল, হলুদ, গোলাপি, বেগুনি—আরও কত যে রং আর কত নামের যে ফুল!
সন্ধ্যা নদীর তীর ঘেঁষে গ্রামের পর গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে আছে নার্সারিগুলো। বরিশালের সন্ধ্যাতীরের অপরূপ এই স্বরূপকাঠি থেকে ঘুরে আসতে পারেন এখনই। ভাবছেন, নার্সারি আবার দেখার কী আছে! দুটি রাত আর মাঝে একটি দিনের পরিকল্পনা করুন। আজীবন মনে রাখার মতো এক অভিজ্ঞতা হবে। যে দুটো রাতের কথা বলছি, তার দুটোই কিন্তু কাটবে নদীর ওপর। মানে ‘জার্নি বাই লঞ্চ’;

 

থাইল্যান্ড বা কেরালা নয়। এ ছবি স্বরূপকাঠির।

 

যশোরে যেমন ফুলের চাষ হয়, সারা দেশে ছড়িয়ে যায় সেই ফুল, ঠিক তেমনি সারা দেশে বিভিন্ন ফুল-ফলের চারার একটা বড় অংশই যায় স্বরূপকাঠির এই নার্সারিগুলো থেকে৷ গোলাপ, ডালিয়া, জিনিয়া, জারবেরা, কসমসসহ নানা রকম জানা-অজানা রংবেরঙের বাগানে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে সময় কেটে যায় অনেকটা। অলংকারকাঠির অলংকার এসব নার্সারিতে দিনভর ঘুরলেও ক্লান্ত হবেন না৷ ফুলের চারা চাইলে কিনে আনতে পারবেন একদম কম দামে। এরপর যেতে পারেন মাহমুদকাঠি, সমুদয়কাঠি, আরামকাঠি, কামারকাঠি, জগন্নাথকাঠি গ্রামে। এসব গ্রামেও আছে অসংখ্য নার্সারি। ভাবছেন, সব নাম কাঠিসহ কেন? স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই অঞ্চলের লোকজনের আদি পেশা ছিল কাঠের ব্যবসা। আর অধিকাংশ লোক কাঠ কাটার সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাই গাছ কাটি থেকে ‘কাঠি’র জন্ম। আর বিভিন্ন নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই কাঠিগুলোই রয়ে গেছে নাম হিসেবে। তবে স্বরূপকাঠি নামটি এসেছে তত্কালীন জমিদার স্বরূপ দত্তের নামানুসারে। গ্রামগুলোতে ঘোরার জন্য বাহন হিসেবে বেছে নিতে পারেন রিকশা বা নৌকা। চারদিকে নারকেল, সুপারিগাছ ঘেরা গ্রামগুলোতে রিকশায় ঘুরতে বেশ লাগবে। কারণ, রাস্তাঘাট প্রায় পুরোটাই পাকা। পুরো এলাকাটিকে জালের মতো জড়িয়ে রেখেছে সন্ধ্যা নদীর অসংখ্য শাখা-প্রশাখা। স্থানীয় ভাষায় যা বড় খাল ও ছোট খাল হিসেবে পরিচিত। তাই নৌকায়ও ঘুরতে পারেন.

 

মিষ্টি, ইলিশ আর নারকেল
এত ঘোরাঘুরির মাঝে স্বরূপকাঠি বাজারের সাহা বা ঘোষের দোকানের মিষ্টি খেতে ভুলবেন না। বিশেষ করে রসমালাই। এখানকার রসমালাই ঢাকার রসমালাইয়ের মতো নয়, বেশ বড় আকারের এই রসমালাই একবার খেলে জিবে স্বাদ লেগে থাকবে বহুদিন। সন্ধ্যা নদীর মোহনায় প্রায়ই ধরা পড়ে ইলিশ, জেলেদের কাছ থেকে তাজা ইলিশ কিনতে পারবেন কপাল ভালো হলে। আর তাজা সামুদ্রিক মাছও পাওয়া যায় বেশ কম দামে। বর্ষাকালে এই অঞ্চল আলোচিত থাকে পেয়ারা আর আমড়ার জন্য। বিশেষ করে আটঘর কুড়িআনার পেয়ারার ফ্লোটিং মার্কেট তো বেশ পরিচিত এখন। শীতে এই স্বরূপকাঠিকেই প্রকৃতি সাজায় এক ভিন্ন রূপে। এখানকার ডাব বা নারকেল খেয়ে যেতে ভুলবেন না। এত মিষ্টি ডাব বা নারকেল শেষ কবে খেয়েছেন, সেটা মনে করার চেস্টা আসবে নিজ থেকেই.

 

থাইল্যান্ড বা কেরালা নয়। এ ছবি স্বরূপকাঠির।

কীভাবে যাবেন :
ঢাকার সদরঘাট থেকে সরাসরি লঞ্চে যাওয়া যায় স্বরূপকাঠি। চাইলে বরিশাল পর্যন্ত লঞ্চে গিয়ে বাসে বা মাইক্রোবাসে স্বরূপকাঠি যেতে পারেন। সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস আছে। বাস ছাড়ে সকালে আর লঞ্চ সন্ধ্যায়। বরিশাল পর্যন্ত বিমানেও যেতে পারেন। এরপর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে যেতে পারবেন স্বরূপকাঠিতে। লঞ্চে গেলে আরাম করে যাওয়া যায়, তবে আগে থেকে কেবিন বুকিং দিয়ে রাখলে ভালো। রাত লঞ্চে কাটাতে হয় বলে রাতে থাকার ঝামেলা নেই। তবে কেউ থাকতে চাইলে ভালো বোর্ডিং আছে বা উপজেলার গেস্টহাউসে থাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আগে অনুমতি নিয়ে রাখতে হবে।

মাইলের পর মাইল চোখে পড়বে নার্সারিতে ফুটে থাকা বিভিন্ন রঙের ফুল.।
স্বরূকাঠিতে ইদানিং বেশ কিছু রিসোর্ট গড়ে তোলার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। আশা করা যায় অচিরেই থ্রি স্টার মানের ভ্রমণ সেবা এখানে পাওয়া যাবে।

______________________________
ডা.শতদল সাহা । বরিশাল।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়