Ameen Qudir

Published:
2018-05-31 18:12:33 BdST

প্রফের ভাইভা নিতে এসে অজ্ঞান যখন এক্সটারনাল ম্যাডাম


প্রতিকী ছবি।



ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন
____________________________


১.
প্রফ চলছে,প্যাথলজি ডিপার্টমেন্ট।হঠাৎ হৈ চৈ।বাইরে দাঁড়ানো ছাত্রছাত্রীরা সব উৎসুক হয়ে ভেতরে উঁকিঝুঁকি মারছে,কি হয়েছে কিছু যদি।বোঝা যায়।

কি হয়েছে?
একটু আগেই প্রফের ভাইভা দিতে ঢুকেছে মাত্র একজন,মেডিকেলের বহুল পরিচিত বিখ্যাত নাফিস ফাইয়াজ।সে কি ভাইভা দিতে যেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো-টেলো নাকি?না,অজ্ঞান হয়েছে একজন ঠিকই,কিন্তু সেটা নাফিস ফাইয়াজ না,এক্সটারনাল ম্যাডাম।

পাশের চেয়ারে বসা ইন্টারনাল ম্যাডাম হতভম্ব।কি হলো কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।কাকে যেন পানি আনতে বলে এক্সটারনাল ম্যাডামের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ডাকতে লাগলেন,"আপা,এই আপা,কি হয়েছে আপনার?"

২.
ইমন আর শায়লা ছোটবেলার বন্ধু।একই স্কুল,একই কলেজ পেড়িয়ে তারা এবার মেডিকেলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে একই কোচিং সেন্টার থেকে।যথাসময়ে পরীক্ষা হয়ে গেলো কিন্তু এবার বিধিবাম।ইমন সরকারি মেডিকেলে চান্স পেলেও শায়লা ছিটকে গেলো।সে কি কান্না শায়লার,সেটা সরকারি তে ভর্তি হতে না পেরে নাকি এতোদিনের বন্ধুর থেকে আলাদা হতে হবে ভেবে কে জানে।আসলে শায়লা সেদিনই প্রথম বুঝতে পারে,সম্পর্কটা আর শুধু বন্ধুত্ব নেই,সেই গণ্ডি ছাড়িয়েছে বহু আগেই।
শায়লার পরিবারের অনেক ইচ্ছা,শায়লা ডাক্তার হবে।শায়লারও তেমনটাই ইচ্ছে ছিলো।সবদিক ভেবেচিন্তে শায়লাকে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি করে দেয়া হলো।
শায়লা আর ইমনের সম্পর্ক প্রথম দিকে ভালোই চলছিলো,কিন্তু কোথায় যেন তাল কেটে যাচ্ছিলো ধীরে ধীরে।একসময় আর আকাশ আগের মতো সময় দিতে পারছিলো না,মাঝে মাঝেই দেখা যেত ঝগড়া হচ্ছে,অভিমান হচ্ছে খুব-তবে সেটা শায়লার তরফ থেকেই ছিলো বেশি।
এরপর একদিন ইমন শায়লাকে রেস্টুরেন্টে ডেকে সামনে বসিয়ে সরাসরি বলে ফেলে,
"দেখো,তোমার সাথে আমার হচ্ছে না।কই তুমি আর কই আমি?আমি সরকারি মেডিকেলের ছাত্র,আর তুমি বেসরকারি তে পড়ছো।আমার ক্যারিয়ার আর তোমার ক্যারিয়ারে আকাশপাতাল তফাৎ।তোমার সাথে আমার সময় মিলে না,ইদানীং কথাবার্তাও না।তারচেয়ে ভালো তুমি তোমার সার্কেল নিয়ে ভালো থাকো,আমি আমারটা।আর এখন পড়ালেখার সময়,এখন এইসব আজাইরা সম্পর্ক টম্পর্ক ভাল্লাগতেসে না আমার আর।"

কিছু বলার মতো ভাষা খুজে পাচ্ছিলো না শায়লা।অভিমানে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলো ইমনের কাছে থেকে।এমনিতেই ইমন ঢাকার বাইরে পড়তে যাওয়ায় দেখা হতোই না প্রায়,এখন শায়লার অনিচ্ছায় সেই সম্পর্কে ছেদ পড়ে গেলো বরাবরের মতো।

৩.
সেদিনকার মতো পরীক্ষা শেষ।এক্সটারনাল ম্যাডাম খানিকবাদেই সুস্থ হয়ে পরীক্ষা শেষ করেছেন,শুধু নাফিস ফাইয়াজের পরীক্ষাটাই নেয়া বাকি।ইন্টারনাল ম্যাডামকে অনুরোধ করেছিলেন,নাফিস ফাইয়াজের পরীক্ষাটা তিনি একাই নেবেন সবার শেষে।

মুখোমুখি বসে আছেন এক্সটারনাল ম্যাডাম আর নাফিস ফাইয়াজ।রুমে আর কেউ নেই।ম্যাডামই প্রথম মুখ খুললেন,
'কেমন আছো নাফিস ফাইয়াজ?এই নামেই সবাই তোমাকে চেনে এখানে?কাউকে জানাওনি যে তোমার ডাকনাম ইমন?'
মাথাটা আরো নিচু করে ফেলে ইমন।
"জানবে না কেন?কিন্তু খুব অল্প মানুষই জানে।আর কেমন আছি সে তো দেখতেই পাচ্ছো।"

সেদিনের কথা মনে পড়ে গেলো আজ বহুদিন পর।সেদিনও তারা এমন মুখোমুখি বসেছিলো,আজকেও তাই।অথচ তাদের মাঝে দূরত্ব আজ আকাশ ছুয়েছে।
দুঃখে হাসি এসে গেলো শায়লার।আজ সে পরীক্ষা নিতে এসে এমন একজনকে তার পরীক্ষার্থী হিসেবে পেয়েছে,যে কিনা তাকে অবজ্ঞাভরে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো সরকারি বেসরকারি মেডিকেলের অজুহাত দেখিয়ে।আজ শায়লা যেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে,সেখানে ইমন এখনো এমবিবিএসের গণ্ডীই পেরোতে পারেনি।

বলতে শুরু করে শায়লা,
"বাসার সবাই ভালো?"
'হু,তোমার?'
"ভালো।এতোদিনে প্যাথো দিচ্ছো যে?"
'নিজের দোষে কিছু,বাকিটা ভাগ্যের।বাদ দাও,অনেক কথা।এসব বলতে ভাল্লাগে না এখন আমার।'
"আচ্ছা থাক,বলতে হবে না।যাও তুমি,ভালোমতো পড়ালেখা করো।আর ভালো থেকো।সরকারি বেসরকারিতে কি আসলেও অনেক তফাৎ,ইমন?"
কিছুই বলে না ইমন।চুপ করে বসে থাকে।
শায়লা ক্লান্ত গলায় বলে,
"তোমাকে অনেক দিন পর দেখে ভালো লাগলো ইমন।আরো ভালো লাগতো,যদি তোমাকে টেবিলের ওই প্রান্তে না পেয়ে আমার পাশে পেতাম।
ভালোবাসাটা সত্যি ছিলো ইমন,তুমি শুধু বুঝলে না।"

৪.
নাফিস ফাইয়াজ ইমন সেবার পাশ করে গিয়েছিলো।ভালোবাসাটা সত্যিই খাটি ছিলো শায়লার।

_____________________________

ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন
শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ
০২ ব্যাচ।



আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়