Ameen Qudir

Published:
2018-05-30 16:18:11 BdST

রাফার চিঠি: পায়ের পাতা থেকে চুল পর্যন্ত সারাদিন ব্যাথায় দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে


 


জারিন তাসনিম রাফা
_________________________


জীবনটা কতটা বিষাদ হয়ে গেছে, কি করে বোঝাবো? যার পায়ের পাতা থেকে চুল পর্যন্ত সারাদিন ব্যাথায় দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে! তবু কেউ আসলে হাসি মুখে তাকাই!

২ মিনিটের জন্য ফেবুতে ঢুকেছিলাম, যা দেখলাম আর চুপ থাকা সম্ভব না। অপারেশনের খরচ নিয়ে কিছু মানুষের কত মন্তব্য, এত টাকা দিয়ে কি করবে? আসলে তো এত টাকা লাগে না।

আসুন, দেখি লাগে কি না....
১ লক্ষ টাকা সমান = ৭৬-৮০ হাজার রূপি
একেক জায়গায় একেক রেট। ধরুন পুরো ৮০ লক্ষ টাকা নিয়ে গেলাম যা রুপিতে আরও অনেক কম। তবু আমার শুধু মূল অপারেশনের খরচই ৫০-৬০ লক্ষ রূপি। এছাড়াও আইসিইউ কতদিন লাগবে তা অবস্থা নির্ভর, এর সাথে আরেকটি দু:সংবাদ হলো আমার ডোনার নেই। ভাইয়ের সাথে ১০:১ মিলেছে যা দিয়ে সম্ভব না। বাবা মা দুজনই severe patient! তাদেরটা রিজেক্ট হতে পারে ডাক্তার স্বয়ং নিজে বলেছে। তাহলে আমার বাঁচার জন্য ডোনারকেই দিতে হবে ৮-১০ লক্ষ রুপি (কেউ বলবেন বানিয়ে বলছি, plz contact to Tata Medical). এতকিছুর পর আমার শংকা হলো এই টাকায় হবে কিনা আর সেখানে ৮০ লক্ষ টাকার অর্ধেক ওঠার আগেই এমন প্রশ্ন। টাকা দিতেন না, প্লিজ! অন্তত মানসিক শান্তি তো দিতে পারেন। একটা সাপোর্ট??? মুম্বাই একটা এক্সপেনসিভ শহর সেখানে থাকা খাওয়া ও রূগী পালা কতটা বড় ধাক্কা যারা ওখানে আছেন তাদের অনেকে আমাকে জানিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, এপোলো হসপিটালে আমি কেন???
আমি প্রথমেই বিএসএমএমইউ তে গিয়েছিলাম, সেখান থেকেই আমাকে ডাক্তার আবু জাফর সালেহ্ স্যারের আন্ডারে ভর্তি করা হয়। আমি এপোলোতে আরাম করতে এসেছি তা নয়, আমার যাকে প্রয়োজন সে অ্যাপোলো হসপিটালের ডক্টর! আজ আমি যতটুকু দেখছেন এটা তার অবদান। আমার ৮৫% ব্লাস্ট রক্তে, যার অবস্থা এত খারাপ তাকে তিনি রেমিশনে নিয়ে এসেছেন।
আমার WBC 0 তেও নেমে আসে তবু highest isolation এ রেখে আমি এখনো বেঁচে আছি। দামী থেকে দামী এন্টিবায়োটিক যা বাংলাদেশে এভেলেবেল না, আমি নিজে দেখেছি সেগুলো আমাকে দিয়ে বাচিয়ে রাখতে। Post chemo reaction বা life threatening infection হয়ে সবচেয়ে বেশি দূর্ঘটনাগুলো ঘটে। আমি ইন্ডিয়া যাবার পর আমাকে বলা হয়েছিল তুমি একজন high risk patient. যেকোন সময় তোমার অবস্থা খারাপ হবে। তুমি আমাদের এখানে এফোর্ড করতে পারবেনা। Apollo তেই থেকো। বার বার ডক্টর চেন্জ করবে না। কেমো নিতে থাকো, আইসোলেশন মেন্টেইন কর। তোমার চিকিৎসক যা দিয়েছেন, এই চিকিৎসা এখানেও পাবে। শুধু বোন ম্যারো না করে কেমো দেয়ার ব্যাপারে তারা কনফিউসড ছিলেন। তাই আমি ৭/৫ না ভেবে এপোলোতে ফিরি। দেশে অনেক স্বনামধন্য ডাক্তার প্রফেসর আছেন, আমি অনেকেরই কন্সালটেশন নিয়েছি। আমার যে পরিবেশ দরকার সেটা অ্যপোলোতে আছে। আইসোলেশন।

যার WBC 0, 50,80 সে যদি হাজারো রোগীর সাথে গিয়ে শোয়, বিএমটি পর্যন্ত যাওয়ার আগেই শেষ! একটা infection আর সব শেষ!

এই শরীরে এত কিছু লিখলাম। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখব....
কারো মিথ্যা অপবাদ নিয়ে মাথা ঝুকিয়ে চলবো না, আর পরিবারকেও ছোট হতে দেব না।
২.
যারা এপোলো হাসপাতালের ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিট খোলা নিয়ে আমাকে বারবার একই কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন তাদের জন্য বলছি,

এপোলো এর ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিটের অন্যতম প্রধান ডাক্তার আবু জাফর সালেহ্ স্যার কালই আমাকে জানিয়েছেন, যেহেতু আমার ভাইয়ের সাথে আমার HLA ৮০ থেকে ১০০ ভাগ ম্যাচ হয়নি সুতরাং ভাইয়ের সাথে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট হবে না। এখন মা বাবাই অপশন। তাদের সাথে ৫০ ভাগ মিলে গেলে তাদেরটা নিয়ে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট হবে, সেটা নরমাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট এর মত না এবং সেটা এপোলোতে হবে না। এটা করাতে দেশের বাইরে যেতে হবে। সুতরাং আমার ডাক্তার স্বয়ং নিজে এই ব্যাপারটা ক্লিয়ার করেছেন।

আর বাবা মায়ের সাথেও যদি ম্যাচ না করে সেক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল বোনম্যারো ডোনার ব্যাংক এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং ডোনারকে দিতে হবে ২৫০০০ ইউএস ডলার।
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের দোয়া, আপনাদের কষ্ট, আপনাদের সাহায্য যেন বৃথা না যায়।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়