Ameen Qudir
Published:2018-05-25 18:05:27 BdST
বিশ্বাসঘাতকঃ মেয়েটা ফোন ধরতে এতো দেরি করছে কেন?
প্রতিকী ছবি
ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন
_____________________________
আমি তুলিকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম।তুলি একেবারেই অপ্রস্তুত ছিলো,আমি যে তাকে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিতে পারি এটা তার ভাবনার বাইরে ছিলো।ভালোই হলো,না হলে হয়তো ধস্তাধস্তি হতো,শেষ সময়ের স্মৃতিগুলো এখনকার মতো মধুর হতো না।
তুলি আমার স্ত্রী।আমাকে অনেক ভালোবাসে,অন্তত বাসতো বলেই জানতাম গতকাল পর্যন্ত।কিন্তু ওই একটা ম্যাসেজ আমার সব জানা মিথ্যে করে দিলো।আমি সাধারণত অন্যের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রে হাত দেয়া একেবারেই পছন্দ করি না।মোবাইল তো আরো না।বিয়ের প্রথম কয়েকদিনেই তুলিকে জানিয়ে দিয়েছিলাম,আমার একদম ছোট্ট একটা ব্যক্তিগত জীবন থাকবে,একদম ছোট্ট।চাইলে তুলির নিজেরও এমন একটা ভুবন থাকতে পারে,আমি তাতে কোনদিন উকি দিয়ে দেখতে যাবো না।
এভাবেই চলছিলো বেশ ভালো।আমরা দাম্পত্য জীবনে সুখী ছিলাম,অন্তত ওই ম্যাসেজটা আসার আগে পর্যন্ত তো অবশ্যই।
আমাদের বিবাহ বার্ষিকী ছিলো গতকাল।কাছের আত্মীয়দের দাওয়াত দিয়েছিলাম।বেশ হৈ চৈ আনন্দে কেটেছিলো পুরো সন্ধ্যা আর রাতের প্রথমটুকু।সবাইকে বিদায় দিয়ে তুলি শাওয়ার নিতে ঢুকলো,সারাটা দিন অনেক খাটুনি গেছে মেয়েটার।আমিও ক্লান্ত ছিলাম কিছুটা,বিছানায় শুয়ে চ্যানেল ঘুরাচ্ছিলাম,কিছু একটা করতে হবে তাই।তুলি বের হলে আমি ঢুকবো,এই ছিলো প্ল্যান।
এমন সময় কালবৈশাখী ঝড়ের মতো এসে হাজির হলো সেই ম্যাসেজ।ম্যাসেঞ্জারে টুং টুং করে পর পর ম্যাসেজ আসছিলো,বিরক্ত লাগছিলো খুব।তাই ওর ফোনটা সাইলেন্ট করার জন্য হাতে নিতেই দেখি ওর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী পাঠিয়েছে ম্যাসেজটা,
"তুমি যা জেনেছো,তার সবই সত্যি।রায়হান সত্যিই নাজিয়ার সাথে গোপনে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে অনেকদিন ধরে।আমি আজ নিশ্চিত হয়েছি।তোমার নামে যে পার্সেলটা পাঠিয়েছিলাম,পেয়েছো নিশ্চয়ই।জানালে না তো কিছু।ওতে যে বিষটুকু আছে,কোন রকমে একবার রায়হানের চায়ের কাপে মিশিয়ে দিতে পারলেই যথেষ্ট।কেউ সন্দেহ করতে পারবে না,কেউ কিছু প্রমাণ করতে পারবে না।পোস্টমর্টেমেও কিছু পাওয়া যাবে না।নিশ্চিন্ত থাকো।ঝামেলা শেষ করে আমাকে ম্যাসেজ দিয়ো।আর সব ম্যাসেজ আর কল লিস্ট ডিলিট করে দিয়ো।সাবধানে থেকো।"
আচ্ছা,তলে তলে এই ব্যাপার তাহলে?বান্ধবীর সাথে মিলে যুক্তি করে আমাকে খুন করার চেষ্টা?বিশ্বাসঘাতক।মনে মনে খুব খানিকটা হেসে নিলাম।মনটা হালকা হয়ে গেলো অনেক।এখন আমার সিদ্ধান্ত নেয়া অনেক সহজ হয়ে গেলো।
পরের দিন রাতে তাই ওকে সারপ্রাইজ দেবার কথা বলে ছাদে নিয়ে এলাম।তারপর রেলিঙের কাছে নিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোটে আলতো করে চুমু খেলাম।দীর্ঘ চুমুটা শেষ করেই হাল্কা একটা ধাক্কা-ব্যাস;গল্পের সমাপ্তি টানা হয়ে গেলো,আমার জীবন থেকে,কিংবা পৃথিবী থেকেই তুলির অধ্যায় শেষ হয়ে গেলো।অবশ্য শেষমুহুর্তে আমার মতো এতো নিষ্ঠুর হতে পারেনি তুলি,আমার চা'য়ে বিষ মেশানোর চেষ্টাও করেনি বোকা মেয়েটা।যদি করতো কিংবা আমি ম্যাসেজটা না দেখতে পেতাম,কে জানে গল্পের সমাপ্তি হয়তো অন্যরকম হলেও হতে পারতো।
মোবাইলটা বের করে নিশ্চিন্ত মনে ফোন দিলাম নাজিয়াকে।আজ আর 'তুলি শুনে ফেলছে কি না' চিন্তা করতে হবে না বার বার।রাতের আকাশে একটা একটা করে তারা ফুটে উঠছে।ফোন বাজছে,মেয়েটা ফোন ধরতে এতো দেরি করছে কেন?
_____________________________

আপনার মতামত দিন: