Ameen Qudir
Published:2017-09-25 15:11:01 BdST
লিখতাম না, কিন্তু
রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সান্যাল
____________________________________
অভিজিৎ দত্ত আমার পোস্টে দুটো মন্তব্য করেছে- সেগুলো দিয়েই শুরু করি :-
১।এটা একদম খোলা চিঠির মত আমার খোলা কমেন্ট।
আমি অনেকবার বলেছি, ডাক্তার মানেই ডাকাত নয়। কিছু ডাক্তার আছেন যারা সত্যি সত্যিই রুগিদের জন্য ভাবেন কিন্তু তার পারসেন্টেজ কতটা?
ডাক্তাররা ওষুধ কম্পানিগুলোর থেকে কমিশান খায় না?
ডাক্তাররা যেই টেস্টের দরকার নেই সেই টেস্ট করিয়ে কমিশান খান না প্যাথলজিকাল টেস্ট করিয়ে?
জেনেরিক নেম দিয়ে অষুধ লেখেন না কেন?
এই যখন এপোলোতে গন্ডগোল হউএছিল তখন তো ডাক্তারদের মাকা নাকা করেছেন অনেকেই।
আজকে Ramkrishnaবাবু বললেই মেনে নেব।
ঠিক করে ডাক্তাররা যা করে। আমি ডাক্তার হলেও তাই করতাম। কোন অন্যায় করেন না তবে ওই নোবেল প্রফেশান মারাবেন না। সরি ভাষা খারাপ করলাম বলে। এখন তো আর ডাক্তারবাবুকে স্যার বলে না কেউ বা বাড়িতে ভিসিট করতে এলে ব্যাগ বয়েও নিয়ে যায় না।
আমার প্রচুর ডাক্তার বন্ধু আছে, ওরাই গল্প করেছে ওরা কি করে। আমার প্যাথলজিকাল টেস্ট করার পরে ওকে যে কমিশান দিয়েছে সেটা আমাকে ফেরত দিয়েছে।
প্লিজ ডাক্তারেরাও মানুষ ওদের লোভ থাকবে না। খালি ভগবান বানাবেন না। আজকে ডাক্তার না হয়ে ওটা পুলিশ দেখালে আপনারাই আনন্দে দু হাত তুলে নাচতেন।
২। এটা কিন্তু সমস্ত রাজ্যে নয়।
আমি কিন্রু পশ্চিমবঙ্গর ডাক্তারদের কথা বলছি।
চিন্তা করা যায়, অনেক ডাক্তার আছেন, প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করতে দেবার পরে টেস্ট রিপোর্ট দেখালে পরে আবার ভিজিট নেয়। জাস্ট মুখে বলে দেয়, যেমন ওষুধ দিয়েছি তেমনই চলবে। কি প্রেস্ক্রিপশান করেছিল সেটা দেখেও না।
আমার ইচ্ছে করে কানের গোড়ায় একটা দিয়ে বলি, বল, কি ওষুধ লিখেছিলি?
প্যান্ট গিলি হো জায়গা।
( বানান অপরিবর্তিত)
এবারে বলি – অবসর নিলেও আমি কিন্তু তোমার থেকে ডাক্তারদের অনেক বেশী চিনি – পেশাগত কারণেই ।
আমার প্রথম প্রশ্ন – তুমি ডাক্তারের কাছে কেন গিয়েছিলে?
অসুখ করেছিল বলেই তো, তাই না?
এটা হতেই পারে তোমার যারা বন্ধু ডাক্তার, তারা নামী হসপিটালের ডাক্তার ।
কারণ তুমি, তথাকথিত “ছোট” হসপিটালে যাবে না ।
তা ভাই যখন তোমার ইচ্ছে করছিল – ডাক্তারের কানের গোড়ায় একটা দিয়ে বলি, বল, কি ওষুধ লিখেছিলি?
দিলে না কেন ?
প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করতে দেবার পরে টেস্ট রিপোর্ট দেখালে পরে আবার “অনেকে” ভিজিট নেয় – এটা অর্ধ সত্য, সেটা তোমার কথাতেই পরিস্কার ।
ডাক্তারবাবুদের স্যার বলার রেওয়াজ এখনও আছে – তোমার বন্ধুদের বলো না, সেটা হতেই পারে ।
আর স্যার বলার ওপরে ডাক্তারের সম্মান নির্ভর করে কি? আমি জানি না । অজ্ঞতাকে ক্ষমা করো ।
আজকাল আর ডাক্তারি ব্যাগ নেই- আছে ব্রিফকেস । সেটা ডাক্তার বাবুরাই রোগীর বাড়ীর কাউকে দেন না, কারণ দামী জিনিস গুলো ভেঙে যেতে পারে ।
তুমি যেটা বলেছো – সেটা বলি?
ডাক্তাররা ওষুধ লিখলে কোম্পানিদের কাছ থেকে ক্যাশ টাকা ভেট পান ।
শতাংশে দেখলে- সেটা দূরবীণ দিয়েও দেখা যাবে না ।
ডাক্তার আর রোগীর সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে ।
সেই সম্পর্ক ভেঙে গেছে – সকলের দোষেই ।
মহৎ বৃত্তি – এই কারণেই বলা, কারণ একজন মরণাপন্নকে বাঁচিয়ে তোলেন এঁরা।
সেই কারণেই ডাক্তারের কানের গোড়ায় একটা দিতে পারো নি ।
সকলেই যদি কানের গোড়ায় দেয়-অনেকে দিচ্ছেও বিনা কারণে, তবে ডাক্তাররা বেছে রোগী দেখবেন । কোনো রিস্কে যাবেন না ।
বান্ধব স্বপন দেব লিখছেন -
ডাক্তার আর কিছু অর্থলোভী হাসপাতাল নামক স্বাস্থ পরিসেবা প্রদানকারীদের এক করে দেখানোর অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। গুরুতর মরণাপন্ন রোগী হিসেবে বেশ কিছুদিন কোলকাতার এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে কাটিয়ে প্রায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছি সম্প্রতি। আমার ডাক্তার কে দেখেছি, আমার বেড এ বসে আমার হাত ধরে কাঁদতে, ৭ দিনেও আমার রোগের কারণ নির্ণয় করা যায়নি। উনি আন্দাজ করতে পারছেন আমার কি হয়েছে, কিন্তু চিকিৎসা শুরু করতে পারছেন না, প্রমাণাভাবে। প্রমাণের জন্য যা করা প্রয়োজন সেটাও প্রাণঘাতী হতে পারে। উনি নিজে আমার কাছ থেকে অ্যামেরিকা প্রবাসী আমার মেয়ের মোবাইল নং চেয়ে নিয়ে, তাকে ফোন করে, এখানে নিয়ে এসে আমায় চিকিৎসা করে সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়েছেন। একে অসুর বলবো?
আবার অন্য দিকও আছে -
রীণা দত্ত আমার বন্ধুবৃত্তে আছেন – তাঁর ছেলের খুলি একটি “নামকরা” হসপিটাল হারিয়ে ফেলাতে তাঁর ছেলে মারা যায় ।
তুমি – সারা পশ্চিমবঙের কথা বলেছ ।
এটা কি জানো? জেলার সরকারি হসপিটালের ডাক্তার কি পরিমাণ পরিকাঠামোর অভাবে ভোগেন ?
নেবুলাইজার নেই, ভালো ইসিজি মেশিন নেই , অক্সিজেন দেওয়ার ন্যূনতম পরিকাঠামো বর্তমান, লো ভোল্টেজ, ডাক্তরদের বাসস্থানে বৃষ্টি হলে জল পড়ে ।
ওডিশা, বিহার, উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু অঞ্চল ঘুরেছি আমার পেশার দৌলতে ।
হাতুড়ে ডাক্তারদের রমরমা আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা । কেউ কেউ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন, কেউ বা স্নাতক, কিন্তু গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক চিকিৎসা কিন্তু এরাই করতেন বা করেন ।
সুদূর হিঙ্গলগঞ্জ থেকে কোচবিহারের নাটাবাড়ী বা ওডিশার দশপাল্লা থেকে গুমা- যেখানে যাতায়াত দুর্গম বা রোগী আনতে প্রাণান্তকর অবস্থা- সেখানে অন্তত এঁদের সাহায্য পাওয়া যায়- এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই ।
বিনা চিকিৎসায় এরা অন্তত কাউকে মরতে দেন না । পরে অবস্থা আয়ত্তে এলে পাশ করা ডাক্তাদের কাছে নিয়ে যান ।
কার্যত ওঁরাই যে গ্রামবাংলায় চিকিৎসা-পরিকাঠামোর অন্যতম স্তম্ভ – এটা অস্বীকার করার উপায় নেই ।
কোনও স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি বা আয়ুর্বেদিক ডিগ্রি না-নিয়েও যাঁরা গ্রামে-গঞ্জে মানুষের চিকিৎসা করেন, সরকারি নথিতে তাঁরাই ‘হাতুড়ে’ ডাক্তার।
ওঁদের প্রথাগত কোনও তালিম যেমন নেই, তেমন চিকিৎসক হিসেবে মেডিক্যাল কাউন্সিল কিংবা হোমিওপ্যাথি কাউন্সিলে নামও নথিভুক্ত করা নেই। এই মুহূর্তে রাজ্যে ওঁদের সংখ্যা প্রায় দু’লক্ষ। অনেকে হামেশা ছোটখাটো অস্ত্রোপচারও করে থাকেন। তবে এই ধরণের নমুনা বিরল ।
এমনিতে হাতুড়ে সম্পর্কে অভিযোগের অন্ত নেই। যেমন তাঁরা নামের আগে অবৈধ ভাবে ‘ডাক্তার’ লেখেন, যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক দেন, রোগ কঠিন বুঝেও রোগীকে হাসপাতালে না-পাঠিয়ে বিপদ বাড়ান ইত্যাদি। বস্তুত হাতুড়ের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুও ঘটে আকছার।
আমি উত্তরবঙ্গ, বিহার এবং ওডিশাতেও দেখেছি – এরা কোনো জায়গার হাটবারে বসেন এবং সেইখানে লোকও যান চিকিৎসা করাতে ।
ছোট ছোট আটচালাতে এঁরা বসেন/বসতেন – নানা ওষুধ পাটিতে বিছিয়ে । অনেকের ইনজেকশানের হাতও ভালো । আমার একবার টিটেনাস টক্সয়েড নিতে হয়েছিল – বুঝতেই পারি নি কখন দেওয়া হয়ে গেছে ।
কোনো রোগী শহরে ডাক্তার দেখিয়ে এলে, সেই প্রেসক্রিপশান এরা খুঁটিয়ে পড়ে।
বেশীর ভাগ “হাতুড়ে” হয় এই সব পাশ করা ডাক্তারদের অ্যাটেনডান্ট ছিলেন আর সেই সুবাদে আগ্রহীরা মন দিয়ে সব পর্যবেক্ষণ করতেন চিকিৎসা পদ্ধতি ।
বেশ কয়েকজনকে দেখেছি – ইসিজি মেশিন কিনতে । পি ওয়েব কি, সেটাও জানেন এঁরা ।
তবে, এঁরা ব্যতিক্রম ।
আমার কার্যক্রম, সেই সময়ে যখন ডিসপোজিবল সিরিঞ্জ আর গ্লাস সিরিঞ্জের মধ্যবর্তী যুগ ।
পাশ করা ডাক্তারবাবুরা কি হিঙ্গলগঞ্জ,কুমীরমারি, বিন্দোল এরকম প্রত্যন্ত জায়গায় বিনা কারণে থাকেন ?
এঁরা ফেরেববাজী করেন কি?
সেখানে ডাক্তার বাবুদের থাকার যে ন্যূনতম পরিকাঠামো দরকার,সেটুকুই নেই এখনও। অন্যান্য ব্যাপারের কথা ছেড়েই দিলাম।
ডাক্তারিতে শর্ট কাট কিছু নেই, এটাও মানি।
না হলে বিগত বামফ্রন্ট অামলে, তিনবছরের "বেয়ারফুটেড ডাক্তার' প্রকল্প বিফল হতো না।
ফেক ডাক্তার আলাদা, এর সঙ্গে হাতুরেদের সম্পর্ক নেই।
তবে, হাতুরেরা না থাকলে, গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসাটা দেওয়াও মুশকিল।
সব মিলিয়ে শাঁখের করাত। আসতেও কাটে,যেতে তো বটেই।
সব জায়গায় তো প্রাইভেট হসপিটাল নেই !
জেনেরিক নাম কেন লেখেন না ?
আশির দশকের শুরু—প্রতিবেশী বাংলাদেশের সামরিক সরকার এক জনমুখী পদক্ষেপ নিল, বাংলাদেশের বাজার থেকে অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর সব ওষুধ নিষিদ্ধ করে।
প্রায় একই সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অত্যাবশ্যক ওষুধের প্রথম তালিকা প্রকাশ করে, সে তালিকায় ওষুধ ছিল শ’দুয়েক। এই ওষুধগুলো দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের প্রায় সমস্ত রোগ চিকিৎসা সম্ভব।
অত্যাবশ্যক ওষুধের তালিকা ছিল ‘২০০০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য’-এর লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অথচ ভারতের বাজারে তখন হাজার ষাটেক ওষুধের ফরমুলেশন।
তারও প্রায় এক দশক আগে সংসদ নিযুক্ত হাতি কমিটি (কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন সাংসদ জয় শুকলাল হাতি) ১৯৭৫-এ প্রকাশিত রিপোর্টে বলে ১১৭টা মাত্র ওষুধ ভারতের জন্য অত্যাবশ্যক।
কমিটি এই ওষুধগুলোর উৎপাদন নিশ্চিত করার সুপারিশ করে, ওষুধের ব্রান্ড নাম বা বাজারী নামের বদলে জেনেরিক নাম বা বৈজ্ঞানিক নাম ব্যবহারের সুপারিশ করে। যাতে জীবনদায়ী ও অত্যাবশ্যক ওষুধগুলো মানুষের আয়ত্বের মধ্যে থাকে তাই মূল্য-নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করা হয়।
হাতি কমিটি চেয়েছিল পাব্লিক সেক্টর যেন ওষুধ উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা নেয়। দেশীয় ওষুধ-কোম্পানীগুলোর বিকাশের জন্য কিছু ওষুধ-উৎপাদন কেবল দেশীয় কোম্পানীগুলোর জন্য সংরক্ষিত রাখার কথা বলা হয়।
ওষুধ-শিল্পে বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর ভূমিকার নিন্দা করে কমিটি, ওষুধ-কোম্পানীগুলোতে বিদেশী বিনিয়োগের মাত্রা তৎক্ষণাৎ কমিয়ে ৪০% করা এবং তারপর কমিয়ে ২৬% করার কথা বলা হয়, এমনকি বিদেশী ওষুধ-কোম্পানীগুলোর জাতীয়করণের পক্ষে ছিল হাতি কমিটি।
হাতি কমিটির সুপারিশে সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, তার প্রমাণ ওষুধের বাজারে ষাট হাজার ওষুধ।
যাক্, এত সবের পরেও যদি ডাক্তাররা অসুর হন – তবে অসুখ হলে ওঁদের কাছে না যাওয়াই ভালো ।
আমি আর কিছু মন্তব্য করবো না ।
ট্যাগের জন্য দুঃখিত
*কিছু তথ্য নেট থেকে নেওয়া
______________________________
রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সান্যাল । খ্যাতিমান কথাশিল্পী।
আপনার মতামত দিন: