Ameen Qudir

Published:
2017-09-07 17:22:00 BdST

ছেলে মেয়েদের বিত্ত বৈভবের নিশ্চিত জীবন কিন্তু তার চোখ অশ্রুসজল


 

ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী

_______________________________


কিছু বছর আগে এক প্রত্যন্ত গ্রামে এক বৃদ্ধ বাস করতেন।তার স্ত্রী,এক পুত্র এবং দুই কন্যা সহ ছোট্ট সুখের সংসার।তবু তার জীবনে একটু দুঃখ ছিল।তিনি স্বচ্ছল ছিলেন না।অনেক কষ্টে ভিটে মাটি বন্ধক রেখে তিনি ছেলেকে বিয়ে পাস করিয়েছেন।মেয়েদেরকে ও স্কুলে পাঠিয়েছেন।কিন্তু ছেলেটি বেকার।মেয়েদের বিয়ে হয়নি।এই নিয়ে তিনি সকলের অগোচরে চরম ভাবনায় লিপ্ত হন।তার স্ত্রী খুব ই সজ্জন মহিলা ছিলেন।বাড়ীর বিত্তবানদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন।সকলের ঝি বৌদের বড্ড ভালোবাসতেন।বিপদে আপদে পাশে থাকতেন।বিনিময়ে তারা সাহায্য করলে বিনয়ের সাথে নিতেন।এই সকলের প্রিয় পরিবারটি আধ পেটা খেয়ে জীবন ধারন করলেও ধর্ম এবং সুখ এদের অলংকার ছিল।

 

একদিন বৃদ্ধ নামায শেষে জায়নামাযে ঘুমিয়ে পরলেন।স্বপ্ন দেখলেন,তিনি তার কুটিরের পাশে একটি নৌকা দেখে তাতে চড়ে বসলেন।নৌকাটি মাঝি ছাড়াই চলতে শুরু করল।তিনি একটি দ্বীপে এসে পৌছলেন।অনিন্দ্য সুন্দর এক ভূখন্ড।সেখানে ঝর্না,ফুলের বাগান,সুস্বাদু সব ফলের বাগান।একটি সুমিষ্ট ফলে কামড় দিতেই যেন মুখ রসে ভরে উঠল।তিনি ঘুম ভেঙ্গে ধড়মড় করে বসে বললেন,সুবহানআল্লাহ!
পরের দিন তিনি ইমাম সাহেবের কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে গেলেন।

 

ইমাম সাহেব স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিলেন,যে দীর্ঘ জীবন আপনি যাপন করেছেন তা আপনার ঐ নৌকাতে ভ্রমনের মত।এই ভ্রমণ পথ আপনি সৃষ্টিকর্তা নির্দেশিত পথে চলেছেন।তাই অনিন্দ্য সুন্দর বেহেশত আপনার জন্য অপেক্ষমান।
বৃদ্ধ আনন্দিত হলেন।এবং বললেন,আলহামদুলিল্লাহ!ইমাম সাহেব!এখন কেবল ছেলেটার চাকরী আর মেয়েদের বিয়ে হলেই বেহেশতের পথে রওয়ানা দিতে পারি।
ইমাম সাহেব কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।
এই স্বপ্নের এক মাসের মধ্যেই বৃদ্ধের ছেলে একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরী পেলেন।ইমাম সাহেব সব শুনে বললেন,এই চাকরীতে তো বেতন ব্যতীত উপরি আয় আছে।বৃদ্ধ চুপ থাকলেন।এক বছরের মধ্যে বৃদ্ধের কুটিরের বদলে দোতলা বাড়ী তৈরী হলো।জমি কেনা হলো।পুকুর কেনা হলো।গ্রামের এক পরিচিত পরিবারের ছেলেকে বিপুল উপঢৌকন দিয়ে বড় মেয়ের বিয়ে দিলেন।


বৃদ্ধের মামাত বোনের মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিলেন।কিন্তু ইতিমধ্যে বৃদ্ধের পরিবারের সকলের ব্যবহার বদলেছে।বৃদ্ধের স্ত্রী এবং দুই মেয়ে তাদের ছেলে বৌ এর সাথে অত্যন্ত কুৎসিত ব্যবহার করতে লাগলেন।তাদের অহংকারে পূর্বের পরিচিত ঝি বৌয়েরা ও এ বাড়ীতে আর আসেন না।বড় মেয়ের শশুর বাড়ীর সকলেও আচরনে কষ্ট পাচ্ছে।

 

তখন ছেলের অফিসের এক ছেলের সাথেই তার ছোট মেয়ের বিয়ে দেন।এবারে বৃদ্ধ তার স্ত্রী ও সন্তানদের ব্যবহারে আরো বিস্মিত হন।কিন্তু স্বচ্ছলতা,সম্মান আর ভবিষ্যৎ ভেবে চুপ থাকেন।একদিন তিনি তার ছেলেকে ধুমপান করতে দেখেন।মেয়েদের উচ্চ স্বরে চিৎকার করতে দেখেন।এবং এক সময়ে তার স্ত্রীকে তার প্রতিবেশী এবং ছেলে বৌ এর প্রতি রুষ্ট হতে দেখেন।

 

তিনি মনের কষ্টে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেন।তিনি স্বপ্নে দেখেন তার দোতলা বাড়ীর সামনে ঘাটে এক বজরা এসেছে।তিনি ঐ বজরায় চড়ে যাত্রা করলেন একাকী।এবং এক দ্বীপে থামলেন।থামার পর বজরা চলে গেল।দ্বীপে নেমে তিনি দেখলেন সেখানে প্রচন্ড হিংস্র জন্তু,জানোয়ার,সাপ,বিছে বিদ্যমান।চলার পথে অনেক কাটা গাছ।তার হাত পা রক্তাক্ত হচ্ছে।গরমে তৃষ্ণায় গলা ফেটে যাচ্ছে।একটু পানির জন্য কাতরাচ্ছেন তিনি।কিন্তু পানি নাই।যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে তার ঘুম ভাঙ্গল।রাতে আর ঘুম এল না।

 

তিনি ইমাম সাহেবের কাছে পরদিন স্বপ্নের অর্থ জানতে গেল।ইমাম সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,বজরায় যাত্রা আপনার গত পাঁচ বছরের বিত্ত বৈভবের জীবন।আর যাত্রা শেষে আপনার জন্য অপেক্ষমান জাহান্নাম।আপনি নিজের চোখে আপনার পরিবারকে হারাম রুজী,হারাম কাজ করতে দিয়েছেন।এর অংশ হয়েছেন।
ইমামের কাছ থেকে ফিরতেই বৃদ্ধ অসুস্থ হলেন।ছেলে মেয়েদের বিত্ত বৈভবের নিশ্চিত জীবন কিন্তু তার চোখ অশ্রুসজল। তিন দিনের মধ্যেই তিনি মারা গেলেন।

_________________________________


ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী ,বরিশাল।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়