Razik hasan
Published:2020-11-16 15:50:20 BdST
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যেভাবে সত্যজিৎ রায়ের নায়ক
রাজিক হাসান
লন্ডন থেকে
___________________
সত্যজি ৎ রায়ের সিনেমাতে নিয়মিত অভিনেতা হিসেবে আগমনের আগে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতেন। 'অপরাজিত' সিনেমার কাস্টিং খোঁজা হচ্ছিল তখন। সত্যজিৎ রায়ের বন্ধু নিত্যানন্দ দত্ত কফি হাউজ থেকে সৌমিত্রকে নিয়ে গেলেন লেক এভিনিউতে। সৌমিত্রকে দেখেই সত্যজিৎ রায় বলে উঠেছিলেন, "ওহো! আপনি যে বড় লম্বা হয়ে গেলেন!"
সত্যজিৎ রায়ের কাস্টিং সম্পর্কে নিজস্ব একটা ভাবনা ছিল। তিনি স্ক্রিপ্ট তৈরির সময়ই চরিত্রের একটা ধারণা গড়ে তুলতেন আর সেই অনুযায়ী কাস্টিং ঠিক করতেন। নতুনদের নিয়ে কাজ করবার ব্যাপারে তিনি সবসময়ই এগিয়ে ছিলেন।
'অপরাজিত'-এর কিশোর অপুর জন্য সৌমিত্র লম্বা হয়ে যাওয়ায় সে যাত্রায় আর অপু হওয়া হলো না সৌমিত্রের। এরপর সত্যজিৎ রায় শুটিং দেখার জন্য ‘পরশ পাথর’ এবং 'জলসা ঘর'-এর সেটে ডাকেন সৌমিত্রকে। 'জলসা ঘর'-এর সেটে শুটিং দেখতে দেখতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাজের সময় হয়ে গেলে সত্যজিৎ রায়ের কাছ থেকে বিদায় নিতে যান তিনি। এসময় তিনি সৌমিত্রকে বললেন, “এসো, ছবি বিশ্বাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।” ছবি বিশ্বাসের সাথে পরিচয় করানোর সময় সত্যজিৎ রায় বলেন, “ছবি দা, এই হচ্ছে আমার অপুর সংসারের অপু!” এভাবেই সৌমিত্র জানতে পারেন তাকে সত্যজিৎ রায় অপুর চরিত্রে বেছে নিয়েছেন।
১৯৫৮ সালের ৯ আগস্ট ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শুটিংয়ের প্রথম দিন। প্রথম দৃশ্য ছিল অপুর চাকরি খোঁজার জন্য একটা মেশিন ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার, প্রথম শটই ছিল 'ওকে'। সেই থেকে সৌমিত্র বুঝতে পারেন, তিনি এই কাজই বাকি জীবন করে যেতে চান।
উত্তম সমসাময়িক যুগেও বাঙালির মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছিলেন সৌমিত্র। ছয় দশকের দীর্ঘ তাঁর চলচ্চিত্র জীবন। অভিনয় ছিল তাঁর জীবনের অক্সিজেন, বলতেন, ‘আমি অভিনয় করছি বলেই তো সুস্থ আছি।’ তাই তো করোনা সতর্কাতার মাঝেও লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেননি। লডকাউন পরবর্তী সময়ে শেষ করেছেন নিজের বায়োপিক অভিযান-এর শ্যুটিং। কাজ করেছেন একটি ডকুমেন্ট্রারি ফিল্মেও। সৌমিত্র বলতেন ‘কাজ ছাড়া আমি আর কিচ্ছু করতে চাই না।’
পথের পাঁচালী'র ছোট্ট অপুর জীবন থেকে 'অপুর সংসার'-এর বাবার চরিত্রে অপু এবং তার ছেলে কাজলের চরিত্রের মাঝে দিয়ে ছোট্ট অপু থেকে ছোট্ট কাজল, যেন একটি জীবনের চক্র পূরণ হয়েছে, প্রতিটি জীবনের মতোই।
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       