- মেডিক্যাল ক্যাম্প
- ‘খাও কম,হাসো বেশী,বাঁচো দীর্ঘদিন':এবং ডা রুমেল ভাইয়ের পরিচিত মুচকি হাসি
Dr Meenakshi Shomnom
Published:2021-02-28 15:23:09 BdST
‘খাও কম,হাসো বেশী,বাঁচো দীর্ঘদিন':এবং ডা রুমেল ভাইয়ের পরিচিত মুচকি হাসি
ডা. মীনাক্ষী শবনম
---------------------------------
.........কোনো এক ভোরবেলা, রাত্রিশেষে শুভ শুক্রবারে
মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে যদি দেয় যাওয়ার তাকিদ;
.........অপ্রস্তুত এলোমেলো এ গৃহের আলো অন্ধকারে
ভালোমন্দ যা ঘটুক মেনে নেবো এ আমার ঈদ।
আমাদের মেডিকেল কলেজে সিনিয়র ভাই,জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ১২তম ব্যাচের ছাত্র Imran Khan Romel ,পুরা নাম আল মাহমুদ সাদ ইমরান খান রুমেল।ক্লাশ শেষে মাঝে মধ্যে রাস্তায় দেখা হতো,বাইকে  ড্রপ দিতাম মুন্সিপাড়ার বাসায়। উঁচু-লম্বা-সুঠাম দেহ নিয়ে বাইকের পেছনে উঠলেই বলতাম, “ভাই আপনার ভার সহ্য করা,বাইকের জন্য দুঃসাধ্য।” —— উনি মুচকি হাসতেন। 
দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন ফরেনসিক মেডিসিন এবং টক্সিকোলজি ডিপার্টমেন্টে। সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজে প্রভাষক হিসাবে কেমন ছিলেন জানি না,সেটা উনার সহকর্মী আর অগুণিত শিক্ষার্থীরা যাচাই করবেন; তবে যখনই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মেডিকেলে যেতাম,কল দিতাম; উনিও সময় দিতেন। আমার পোস্টগ্রাজুয়েশন শেষ করার পর,উনি এসকর্ট করে নিয়ে গিয়েছিলেন তৎকালীন ফরেনসিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান শহীদ স্যারের রুমে। স্যার আমার খোঁজ-খবর নিয়ে একরকম অভিযোগ করে বললেন, “ওবা রুবেল, তাকে (রুমেল) বুঝাও; ফরেনসিকে ক্যারিয়ার গড়ুক।আমি এত বললাম, পরীক্ষা দাও,সব রকমের সাহায্য করব,ও কী যে করে বুঝি না !” একজন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক,তাঁর অধীনস্ত লেকচারার সম্পর্কে তখনই এমন আন্তরিক মন্তব্য করেন,যখন সম্পর্ক হয় বাপ-বেটার মতো আন্তরিক।— রুমেল ভাই তখন ও মুচকি হাসতেন। 
আশ্চর্যজনকভাবে দুঃখ লাগে গত বছরের করোনার সময় শহীদ স্যার মারা গেলেন। আর এই বছরের শুরুর দিকে তাঁর প্রিয় লেকচারার। 
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলের সাবেক বিভাগীয় প্রধান,প্যাথলজিস্ট অধ্যাপক আমজাদ হোসেন স্যারের দুই চিকিৎসক ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।  কিন্তু,প্যাথলজির এই প্রবাদতুল্য শিক্ষকের নাম নিয়ে গর্ব-অহংকার তো দূরে থাক,পারতপক্ষে নামই প্রকাশ করতে চাইতেন না। হিসাব ছিল সহজ, ’ছেলেকে নিয়ে বাবা-মা গর্ব করবেন। বাবার নাম ভাঙানোর কী দরকার।’
মাঝে মাঝে বলতাম, ভাই রেডিওলজিতে হাতেখড়ি আপনার কাছে করতে চাই। উনার ট্রেনিং ছিল ওসমানীর রেডিওলজি ডিপার্টমেন্ট থেকে। যতদূর জানতাম,ছাতক-সুনামগঞ্জে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন,চিকিৎসক হিসাবে সফলতা বা আচার-ব্যবহার সেখানকার রোগী ও সহকর্মী চিকিৎসকরাই ভালো বলতে পারবেন। 
ব্যবহারে ছিলেন অমায়িক,হাসি-খুশী,দিলখোলা মানুষ। অন্যের কথা শুনতেন,চুপ থাকলে হাসতেন নতুবা বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দিতেন। 
শেষ দেখা,করোনা দূর্যোগের ঠিক শুরুর দিকে। আমাদের সিওমেক বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক Dr-Shamsul Islam স্যারের সাথে দেখা করতে উনার ফাজিলচিস্তের বাসায় যাই; একই বিল্ডিংয়ে রুমেল ভাই তাঁর স্ত্রী ডা. অন্তরা আক্তার এবং দুই মেয়ে এনায়া-এন্তেজাদের নিয়ে থাকতেন। আমাকে দেখেই বললেন, “তুমারে কান্তা ম্যাডাম খোঁজের,সকাল (তাড়াতাড়ি) দেখা কর।” (সহযোগী অধ্যাপক কান্তা দেব ম্যাডাম,উইমেন্স মেডিকেল কলেজ,ফরেনসিক মেডিসিন)। আমি ও ঠাট্টা করে বললাম, “করেনাকালে এসব ভয় না দেখিয়ে বিয়ের দাওয়াত খাওয়ান,সাথে ভাতিজীর (এনায়া ও এন্তেজা) আক্বীকার এক ব্যাগ মাংস দেন,বাসায় নিয়ে যাই।” শামছুল স্যারের সামনে একটু বিব্রতবোধ করলেও,সপ্রতিভ উত্তর দিলেন, ‘খাও কম,হাস বেশী,বাঁচো দীর্ঘদিন।’— সাথে সেই পরিচিত মুচকি হাসি। 
প্রতিবছর ময়নাতদন্ত দেখার জন্য সকল প্রাইভেট মেডিকেলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা সিওমেকের মর্গে আসেন,কারিকুলামের অংশ হিসাবে। আমি রুমেল ভাইকে খোঁচা দিয়ে বলতাম, ’ভাই আপনি কবে আসবেন,আপনারে তো আসতে দেখি না।’ বলতেন, ‘আসলে খবর দিব।’ আজকে সংবাদপত্র আর পরিচিত মারফত খবর পেলাম পোস্টমর্টেমের জন্য ডা. রুমেল ভাইসহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত প্রায় এগারোজনের মৃতদেহ ওসমানী মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয়েছে। 
এই ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ,১৯৮৬ সালে তাঁর জন্ম। আর ২৬শে ফেব্রুয়ারি আনুমানিক সকাল ৭টার দিকে তাঁর মৃত্যু। ঢাকা সিলেট মহাসড়কের রশিদপুরে (দক্ষিণ সুরমা) বাস যাত্রী হিসাবে অনেকের সাথে ছিলেন ডা. রুমেল ভাই ও বিসিএস (প্রিলি) পরিক্ষার্থী তাঁর স্ত্রীসহ অনেকে। দুই বাসের রেসের কাছে মূল্যহীন এগারোজন মানুষ প্রাণ হারালেন।বিসিএস প্রিলি পরীক্ষা পূর্ব সিদ্ধান্তানুযায়ী সিলেটে হলে আজকে হয়তো দুইজন চিকিৎসকের মূল্যবান জীবন সংকটাপন্ন হতো না।  
পরুম করুণাময়ের কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করি,উনার বিদেহী আত্মাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিন; শাহজালাল দরগাহে জানাজা শেষে,মানিক পীর রহ. গোরস্থানে উনাকে শায়িতকালে  নির্ভয়-নিশ্চিন্ত-নির্ভার রাখুন,আর প্রিয়জন হারানো পরিবারকে এই অসহনীয় ব্যথা বইবার শক্তি দান করুন। সিলেটসহ পুরা বাংলাদেশের মহাসড়কগুলা অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার রক্তপাতের রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি লাভ করুক,পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ সকল প্রতিষ্ঠান দায়িত্বশীল যৌক্তিক আচরণ শিখুক। 
“???????????????? ???????????? ???????????? ???????????? ????????????????????. ???????????? ???????????????? ???????????????? ???????????? ???????????????? ???????????????????????????????????? ???????????? ???? ???????????????????????? ????????????????, ???? ???????????? ???????????????????? ????????, ???????????????? ???????????????????????????????? ???????????????? ???????????????? ???????????????? ???????????? ???????????? ???????????????? ????????????????.”
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       