SAHA ANTAR
Published:2020-12-18 01:54:51 BdST
ওপার বাংলায় জেলায় জেলায় মেডিকেল কলেজের জন্য পিপিপি মডেল প্রসঙ্গে
ডা. রেজাউল করীম  
______________________
পাব্লিক -প্রাইভেট-পার্টনারশিপ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। অতীতে আমরা কেপিসি মেডিকেল কলেজ দেখেছি। কার্সিয়াং কলেজ শুরুই করা যায় নি। বোলপুরে একটি মেডিকেল কলেজ হবে তা নিঃসন্দেহে শ্লাঘার বিষয়। কিন্তু, পিপিপি নিয়ে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। 
শ্রীনাথ রেড্ডি কমিশন বেসরকারি ও সরকারি মেল বন্ধনে একটি নীতির কথা উল্লেখ করেছেন। রেড্ডি নির্দেশিত সেই পথেই যেন এই ধরনের হাসপাতাল তৈরী হয় সেদিকে নজর রাখা দরকার। বোলপুরে হাসপাতাল জনগনের সম্পত্তি, সেই সম্পত্তি যেন কোন ভাবে কোন ফড়ে বা দালালের হাতে হস্তান্তর না হয় তা নিশ্চিত করা দরকার।
এমনিতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালনার নির্দেশিত নীতি অনুসারে শিক্ষার্থীদের জন্য,নির্ধারিত শয্যা হবে পুরোপুরি শুল্ক মুক্ত। সেই কথাটি বলে না দিয়ে উল্লিখিত আদেশ নামায় দুই বা তিন বছরের জন্য শুল্কহীন বলা সঠিক নয়। শুল্ক নির্ধারণে মেডিকেল কাউন্সিলের নির্দেশিত নীতি মেনে সব শয্যা নিঃশুল্ক করতে হবে।
অতিরিক্ত শয্যা যা শিক্ষার্থীদের কাজের জন্য ব্যবহার হবে না তা বেসরকারি পরিষেবা প্রদানকারী নিশ্চয়ই গড়ে তুলতে পারেন। সেই শয্যার অন্ততঃ 40% সরকার নির্ধারিত মূল্যে দিতে হবে। এই ধরনের বহির্বিভাগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে 25% রোগীকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে পরিষেবা দিতে হবে। শ্রীনাথ রেড্ডি কমিশন এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। 
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল চাকুরিগত নিশ্চয়তা। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের চাকুরিগত নিশ্চয়তা নেই বললেই চলে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে কর্মচারীদের প্রাপ্য নিশ্চিত করতে হবে। 
আগামী পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এক লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। চল্লিশ হাজার নতুন নার্স, দশ হাজার চিকিৎসক ও আরো পঞ্চাশ হাজার অতিরিক্ত কর্মচারী প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় সরকার স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ক্রমশঃ কমিয়ে চলেছে ও মোট খরচের মাত্র 18 ভাগ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়। এই অবস্থায় রাজ্য সরকার গুলিকে সদ্যগঠিত ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন জেলায় জেলায় মেডিকেল কলেজের জন্য পিপিপি মডেল ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে। 
বোলপুরে সরকার প্রাথমিক "নো অবজেকশন সার্টিফিকেট" দিয়েছে। কিন্তু, প্রতিটি পদক্ষেপে নজরদারি বজায় রাখতে হবে যেন স্বাস্থ্যের অধিকার থেকে মানুষ বঞ্চিত না হয়। এই প্রসঙ্গে সরকারি স্তরে আলোচনা জারি আছে। স্বাস্থ্য নীতির অভিমুখ যথাযথভাবে পরিচালিত করার জন্য দলমতনির্বিশেষে ঐক্যমত্য গড়ে তোলা দরকার। স্বাস্থ্য নিয়ে ক্ষুদ্র রাজনীতি যেন মানুষের অধিকারকে পদদলিত না করে এই দায়িত্ব সবাইকে নিতে হবে। চিকিৎসক সংগঠন গুলি গঠনমূলক আলোচনা ও সমালোচনার মাধ্যমে সরকারের কাছে সদর্থক প্রস্তাব পেশ করতে পারে। আগামী দশকে প্রতি হাজার জনসংখ্যা পিছু অন্ততঃ 2.5 টি শয্যা ও উপযুক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার জন্য আমাদের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয় সেই কাজ। স্বাস্থ্য নীতি নির্ধারণে যুক্ত তালিকার সুযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ফরমান যে আদতে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রকেও কৃষির মত উন্মুক্ত করে দেওয়ার প্রচেষ্টা তা বলাই বাহুল্য। আখেরে বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মানুষকে পুরোপুরি পণ্য বানিয়ে ছাড়ে।
______________
ডা. রেজাউল করীম । প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবি; চিকিৎসক নেতা। লোকসেবী চিকিৎসক। কলকাতা।
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       