Dr. Aminul Islam
Published:2020-10-05 01:22:55 BdST
সোনার হরিণডাক্তারজীবনের কাহিনি: খাঁচায় বন্দী বাঘ
ডাঃ সুকুমার সুর রায়
________________________
(ষোড়শ - পর্ব)// খাঁচায় বন্দী বাঘ
ছিয়াশি'র 'বিশ্বকাপ ফুটবল' যতই কাছাকাছি চলে এলো ততই আমাদের মর্মবেদনা বৃদ্ধি পেতে লাগলো। 
কারন আমাদের বিদ্যুৎ নেই, টিভি নেই, তাই বিশ্বকাপ খেলা দেখাও নেই। 
অবশেষে অফিসার্স ক্লাবে জেনারেল মিটিংয়ের পর আশার আলো দেখা দিলো। 
চাঁদা তোলার ধুম পড়ে গেলো। সবচেয়ে বেশি ইন্টারেস্ট দেখা গেলো ডাক্তার আলতাফ ও সাব রেজিস্ট্রার সুমন বর্মনের। দুইজনই ফুটবল খেলোয়াড়তো! । 
সাদা কালো টিভি কেনা হলো। ব্যাটারি এবং জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকলো। সাথে লম্বা বাঁশ কেনা হলো। সেই বাঁশ দোতলার ছাদে তুলে এন্টেনা টাঙ্গানো হলো।
রাত আটটায় খেলা হবে ইটালি বনাম যুগোস্লাভিয়ার মধ্যে। 
বিকেল থেকে টিভির ট্রায়াল শুরু হলো। 
এন্টানার বাঁশ কোন পজিশনে রাখলে টিভির পর্দার ঝিরিঝিরি ভাব কমে গিয়ে তুলনামূলক পরিস্কার ছবি দেখা যায় সেইটিই হলো ট্রায়ালের উদ্দেশ্য। 
মোটামুটি একটা পজিশনে রাখার পরেও ডরমিটরির পিয়ন ফরিদকে রাতে খেলা চলার সময় স্ট্যান্ডবাই থাকতে বলা হলো। কারন যেকোন সময় বাতাসে এন্টেনা ঘুরে গিয়ে খেলা দেখা পন্ড হয়ে যেতে পারে। 
ডাইনিং হলে টিভি থাকায় রাতের খাবার ব্যাপারে নোটিশ জারি করা হলো। 
হয় রাত আটটার আগে খাওয়া শেষ করতে হবে, নয়তো খেলার শেষে খেতে হবে। খেলা চলাকালীন টুংটাং শব্দ করে খেলা দেখার বিঘ্ন ঘটানো চলবে না। 
খেলা খুব জমে উঠেছিলো! 
ইতালির খেলোয়াড় 'এলটোবেলি ' দারুন স্ট্রাইকার। 
অন্যদিকে যুগোস্লাভিয়ার স্ট্রাইকার - ' সুমাকভ' দুর্দান্ত খেলছে। 
যখনই এলতোবেলি বল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে তখনই আমাদের দর্শকদের একাংশ ' ডাক্তার আলতাফ '! 'ডাক্তার আলতাফ '! বলে চিৎকার করে উঠছে! ' এলতোবেলি ' হচ্ছে 'আলতাফ'!
আবার যখন ' সুমাকভের' পায়ে বল! তখন আরেকদল চিৎকার করছে! ' সুমন বর্মন '! ' সুমন বর্মন '! ' সুমন বর্মন '!!
এইভাবে ইউরোপের খেলার মাঠের গ্যালারি থেকে খেলার উত্তাপ আমাদের দুর্গম চৌহালি উপজেলার অফিসার্স ডরমিটরির ডাইনিং হল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিলো! 
খেলা তখন শেষ পর্যায়ে! জোরসে চলছে খেলা দেখার হল্লা! 
হঠাৎ ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল কাদের সাহেব টিভির সামনে গিয়ে টিভি বন্ধ করে দিলেন! 
সবাই - " কী হলো?, কী হলো? " বলে হৈ হৈ করে উঠলো! 
ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব হাতের ইশারায় সবাইকে থামতে বললেন। তারপর বললেন - " আমরা যখন এখানে বসে আনন্দে খেলা দেখছি! তখন আমাদের একজন কলিগ ' বিআরডিবি ' অফিসারকে চেয়ারম্যান সাহেবের ঘরে আটকে রেখে মারধোর করা হচ্ছে! "
এই খবর নিয়ে আসা বিআরডিবি' অফিসের হেড এসিস্ট্যান্ট সামনে এসে বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন। 
ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব বললেন - " তিন জন অফিসার সেখানে যাবেন। সেখানে কী হচ্ছে তা বাইরে থেকে বোঝার চেষ্টা করবেন। তারপর এখানে চলে আসবেন, তারপর আমরা আলাপ আলোচনা করে পদক্ষেপ নিবো। "
একজন পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর, একজন মেডিকেল অফিসার এবং পিআইও সাহেব দ্রুত উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবের বাসার দিকে চলে গেলেন। 
ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব বাইরে যেতে যেতে বললেন তিনি এখনই ফিরে আসবেন। 
সবার মধ্যে চাপা অসন্তোষ দেখা দিলো। 
সবাই ফিস ফিস করে বলাবলি করতে লাগলো ; এর আগে সোনালি ব্যাংকের ম্যানেজারকে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। 
বিভিন্ন অফিসের উপরে নানা রকম চাপ আছে। আবার একজন অফিসারকে নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে মারধোর করা হচ্ছে! এভাবে চাকুরি করা অসম্ভব! 
কিছুক্ষন পর ইউএনও মহোদয় ও ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব হলে ঢুকলেন। 
এর কিছু পরেই তিনজন অফিসারের সাথে বিআরডিবির অফিসার তার হেড এসিস্ট্যান্ট এর কাঁধে ভর দিয়ে ভিতরে ঢুকলেন। 
তার কাছ থেকে যে বর্ননা পাওয়া গেলো তা এক কথায় ভয়াবহ! 
সন্ধ্যায় অফিসের নথি নিয়ে তাকে দেখা করতে বলা হয়েছিলো। বেশ কয়েকদিন আগেই তিনি একটি ভুয়া লিষ্ট পাঠিয়েছেন। সেই লিষ্ট মোতাবেক লোন মঞ্জুর করার জন্য পিড়াপীড়ি করে আসছিলেন। 
আজ বাসায় ডেকে নিয়ে গিয়ে তাকে বন্দুকের ভয় দেখানো হয়েছে! গুলি করে মেরে ফেলে যমুনায় ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি ধমকী দেওয়া হয়েছে! তাতেও রাজি না হওয়ায় তার ঘাড়ে বন্দুকের নল দিয়ে আঘাত করা হয়েছে! 
একদমে কথাগুলো বলে তিনি কেঁদে ফেললেন। 
হল ঘরে এক ধরনের পিন পতন নিরবতা নেমে এলো। কারো মুখে কোন কথা নেই। 
হঠাৎ ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল কাদের সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। 
তিনি ইউএনও মহোদয়ের উদ্দেশ্যে বললেন - 
" স্যার, এভাবে চলতে পারে না। আপনি হুকুম দেন, এখনই তাকে এরেস্ট করা হবে! "
ইউএনও মহোদয় ওসি সাহেব, ইউএইচএফপিও সাহেব ও ভিকটিম বিআরডিবির অফিসার সাহেবকে কাছে ডেকে নিলেন। 
শলা পরামর্শ করে মামলা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। 
রাত বারোটায় চরের রাজা এফ আর চৌধুরিকে এরেস্ট করে খাঁচায় পোরা হলো!
তিনি জোরে জোরে চিৎকার চেঁচামেচি করে লোকজন জড় করার চেষ্টা করলেন ; কিন্তু তা সফল হলো না। 
খুব ভোরে লোকজন জড় হওয়ার আগেই তাকে স্পিডবোটে তুলে চালান করে দেওয়া হলো। 
স্পিড বোটে থেকে তিনি চিৎকার করে বলতে লাগলেন -- " আমি ফিরে এসে সব --
গুলি ----- বাচ্চাকে কচু কাটা করবো!! "
স্পিডবোটের ইঞ্জিন আর জলের তীব্র শব্দে তার সেইসব হুংকার হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো!! 
চলবে 
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       