Ameen Qudir
Published:2018-02-23 17:49:40 BdST
একজন অনিমা ও নৃপেনের জন্য
প্রফেসর ডা. আসম জাহাঙ্গির
চৌধুরী টিটো
ফরিদপুর মেডিকেল
কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ
_________________________--
ডাঃ নৃপেন আমার একজন সহকর্মী ছিলো। ছিলো বলছি কারন প্রায় বৎসর দেড়েক আগে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ থেকে বিদায় নেয়ার আগ পর্যন্ত সে আমার সঙ্গেই এক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। এখন ও একজন সিনিয়র চিকিৎসক হিসেবে ওকে আমি ছোট ভাই সম বিবেচনা করি।
আমি যখন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ছিলাম, তখন ও সহকারী অধ্যাপক ছিল, এখন সহযোগী অধ্যাপক হয়েছে। ওর বিষয় টি হচ্ছে, নাক কান গলা রোগ বিষয়ক। ১৯৯২ সনে এম বি বি এস করার পর আজ পর্যন্ত প্রায় ২৫/ ২৬ বৎসর,আর দশজন চিকিৎসকের মত ওর বেশীর ভাগ সময় টা তার কেটেছে জীবন কে বিনির্মানের জন্য। প্রথমে ট্রেনিং, তারপর ডিপ্লোমা ডিগ্রী আবার ট্রেনিং পরে নাক কান গলা রোগ বিষয়ে এফ সি পি এস। এরকম একটি কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মধ্যবিত্ত চিকিৎসকেরা জীবন কে গড়ে তোলে। ওর ও তাই করতে হয়েছে। জীবনের নিয়মেই এর মাঝেই বিয়ে, সংসার জুড়ে সন্তান ও এসেছে ওর জীবনে। একটি মেয়ে আর একটি ছেলে।
ওর স্ত্রী অনিমা ও চাকুরী করতেন, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন নার্সিং সুপারভাইজার হিসেবে। আজ করতেন বলছি কারন এখন চাইলেও ও আর কাজ করতে পারবে না। অকস্মাৎ এক ঝড় এসে নৃপেন আর অনিমার সংসার এলোমেলো করে দিল। প্রতিদিন সকালের মত সেদিন শনিবার সকালে নৃপেনের স্ত্রী অফিসে যাচ্ছিল। সময় বিবেচনায় পৌনে আট টা হবে। স্হানীয় ভূমি অফিসের সামনে একটি মটর সাইকেল এর দুজন আরোহী চলমান অনিমার হাতের ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়ার প্রচেস্টা চালায়, সফল ও হয়, কিন্তু অনিমা এ যাত্রায় তার রিক্সা থেকে পড়ে গিয়ে তৎক্ষনাৎ মস্তিস্কে রক্তক্ষরন এর কারনে জ্ঞান হারায়। আর সে জ্ঞান ফিরে আসেনি। লাইভ সাপোর্টে প্রায় পাঁচ দিনের মত থাকার পর নৃপেন তার প্রিয়তম স্ত্রীর মৃত লাশ নিয়ে ফরিদপুরে ফিরে আসে। আমরা তার সহকর্মী, তার স্ত্রীর সহকর্মী সহ স্বজন দের আহাজারি তে সব যেন কেমন হয়ে গেল। সব হারানোর বেদনা নিয়ে ওর মেয়ের উচ্চস্বরের ক্রন্দন ওর ছেলের নির্বাক চাহনি আর বেদনার্ত নৃপেনের অসহায়ত্ব আমাদের কে প্রতিনিয়ত আহত করছে। এ কেমন সমাজ, যে সমাজে একজন মানুষ ভয়হীন ভাবে বা শংকাহীন জীবন অতিবাহিত করতে পারবে না? আর সব পেশার মত নয়, চিকিৎসকেরা বিত্তের মুখ দেখে অধিক বয়সে, অনেক পরিশ্রমের বিনিময়ে, পরিবার কে বঞ্চিত করে।
নৃপেন ও তেমনি এই ২৫ বৎসরে, সব সুন্দর গুছিয়ে এনেছিল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চির আরোধ্য পদোন্নতি, সহযোগী অধ্যাপক হয়েছে সবে, বৎসর ও হয়নি নিজে গাড়ি কিনেছে, মাস এর অধিক ও হয়নি নিজস্ব ফ্লাটে স্ত্রী কন্যা পুত্র সহ বাস শুরু করেছে। এই সুখময় সময়গুলো কেমন যেন তচনচ হয়ে গেল নৃপেনের স্ত্রীর এ অকাল প্রয়ানে। ওর মেয়ের চিৎকার টি এখন ও কানে বাজছে, কেন আমার মা থাকবে না? ওর বাবা নৃপেন বেদনার্ত হৃদয়ে বলছে, "আমি ই তোর বাবা আর মা এর ভূমিকা পালন করব। " আমি জানি এ পৃথিবীতে কোন কিছুই থেমে থাকে না। কিন্তু নৃপেন ওর মেয়ে আর ছেলের যে ক্ষতি হল, তা কি পুরন হবে?
কতৃপক্ষের কাছে আবেদন, আইন শৃঙ্খলা আরো কঠিন হাতে নিয়ন্ত্রন করুন। এমনি ভাবে আর যেন কারো অকাল মৃত্যু না হয়। সমাজের দুবৃত্ত রা যেন আইনের আওতায় আসে। নৃপেন এর স্ত্রী অনিমা যেন স্বর্গবাসী হয়। ওর সন্তানেরা যেন শোক ধারন করতে পারে, আর নৃপেন তুমি শক্ত হও, তোমার জন্য এবং তোমার সন্তানের জন্য।
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       