Ameen Qudir
Published:2017-12-23 18:35:11 BdST
ডাক্তারদের বিরুদ্ধে সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিবের লেখার সমুচিত জবাব
ডা. কামরুল হাসান সোহেল
____________________________
দৈনিক প্রথম আলোয় সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব জনাব আলী ইমাম মজুমদার একটি কলাম লিখেছেন
গ্রামে চিকিৎসার দায়িত্ব কারা নিবেন?
তার কলামে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তিনি চিকিৎসকদের নানাভাবে হেয় করেছেন, তাদের থ্রেট দিয়েছেন এবং এমবিবিএস ডাক্তারদের সমতূল্য করে উল্লেখ করেছেন এলএমএফ দের? যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
তাদের অনেকেই সরকারী মেডিক্যাল কলেজে বিনে পয়সা পড়ার সুযোগ নিয়েছেন বলতে তিনি কি বুঝিয়েছেন? সরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিযুদ্ধে মেধার স্বাক্ষর রেখেই সবাই চান্স পায়।
জনগণের ট্যক্সের টাকায় পড়েছেন মানে কি? শুধু কি সরকারী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররাই জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়ে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের পিছে প্রতি বছর ১,১৪,০০০ টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার। মেডিক্যালের একজন ছাত্রের পিছে কত টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার?
একজন মেডিক্যালের ছাত্র ইন্টার্নীর সময় নাম মাত্র সম্মানীর বিনিময়ে যে সেবা দেয় তাতে কি তার ঋণ অনেকেটাই সুদ হয়ে যায় না। প্রতিটি সরকারী মেডিক্যাল কলেজের স্বাস্থ্য সেবার প্রাণ হল ইন্টার্নরা,তারা দিন রাত ২৪ ঘন্টা নাওয়া খাওয়া ভুলে রোগীদের সেবা দেয়। আর কোন সেক্টরের কেউ এইভাবে তার ঋণ পরিশোধ করে তার কোন নজির দেখাতে পারবেন কেউ?
উনি বলেছেন গ্রামে চিকিৎসকরা থাকেন না উচ্চশিক্ষার নামে ঢাকায় এসে পরে থাকে বা থাকার পরিবেশ নেই এই অজুহাতে থাকেনা।উচ্চশিক্ষা কোন অজুহাত নয়,সবার মৌলিক অধিকার।
উনি বলেছেন সরকার জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিলে এই সমস্যা কমবে। মেডিক্যাল সাইন্সে উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে উনার জ্ঞান কম আছে তার এই কথাতেই বুঝা যায়। মেডিক্যাল সাইন্সে উচ্চশিক্ষায় চান্স কারো বদান্যতায় পাওয়া যায় না, নিজ যোগ্যতায় চান্স পেতে হয়।তাই এইখানে জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে উচ্চশিক্ষায় সুযোগ লাভের কোন সম্ভাবনাই নেই।
উপজেলায় থাকার পরিবেশ নেই কথাটা কি খুব মিথ্যে?
তিনি বলেছেন ইউএনও,এসি ল্যান্ড,ওসি, কন্সটেবল থাকেন, স্কুল, কলেজের শিক্ষকরা ও থাকেন। কিছু চিকিৎসক ও থাকেন বলেছেন। ইউএনও, এসি ল্যান্ডের গাড়ী আছে, আলাদা বাড়ী আছে, কুক আছে,মালী আছে।উনাদের সবাই থাকেন উপজেলা সদরে।
চিকিৎসকদের থাকার আবাসনগুলোতে কখনো উকি দিয়ে দেখেছেন? ছাদের পলেস্তারা খসে পরছে, মাথার উপর ফ্যান নেই বা ফ্যানের পাখা ভাংগা, টয়লেটের দরজা ভাংগা, গ্যাস নেই, কখনো কখনো পানি ও থাকেনা,অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকেনা। আর চিকিৎসকদের জন্য গাড়ী,কুক,মালী-র কথা বলা তো বেয়াদবির শামিল।
তিনি বলেছেন ইউনিয়ন পর্যায়ে বাসা ভাড়া নিয়ে সেইখানে অবস্থান করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে।
উনি হয়তো জানেনই না ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার বসার জন্য টেবিল,চেয়ার নেই, লিখার জন্য কলম নেই,রুগী দেখার জন্য সরকারি কাগজ ও নেই, রুগীকে দেয়ার জন্য ঔষধ ও নেই।ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন। সেইখানে সহকারী সার্জন/মেডিক্যাল অফিসার হলেন ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার।
উনি বলেছেন বিসিএস করা ডাক্তারগণ যখন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে থাকতে আগ্রহী নয় তাহলে পিএসসির বাইরে জেলা বোর্ডের মাধ্যমে এলএমএফ ডাক্তারদের এইসব ক্ষেত্রে নিয়োগ দিতে।
উনি এখানে চিকিৎসকদের হেয় করেছেন, এলএমএফ দের ডাক্তার বলেছেন।উনার চিন্তা ভাবনা,ধ্যান-ধারণা এবং স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ে জ্ঞান এখনো স্বাধীনতা লাভের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে যা ছিল তাতেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে।
চিকিৎসকদের প্রাপ্য সম্মান দিন,সুযোগ সুবিধা দিন, নিরাপদ কর্মস্থল দিন, নিরাপত্তা দিন, সুন্দর ভবিষ্যতের নিশচয়তা দিন, দুই বছরের বেশি এককদিন ও গ্রামে রাখবেন না ওয়াদা করুন, ভাল বাসস্থান দিন, সার্বক্ষণিক পানি,বিদ্যুৎ,গ্যাসের ব্যবস্থা করে দিন। তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকরা দুই বছর উপজেলায় থাকবে,অবশ্যই থাকবে।
___________________________

ডা. কামরুল হাসান সোহেল
আজীবন সদস্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ , কুমিল্লা জেলা।
কার্যকরী সদস্য স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
আজীবন সদস্য,বিএমএ কুমিল্লা।
সেন্ট্রাল কাউন্সিলর, বিএমএ কুমিল্লা
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       