ডাক্তার প্রতিদিন
Published:2020-10-26 02:51:28 BdST
১০০০ এর বেশী করোনা রোগীকে বাঁচিয়ে নিজেই চলে গেলেন অধ্যাপক ডা.মাসুদুর
ডেস্ক 
_________________
টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. একেএম মাসুদুর রহমান আর নেই। ১০০০ এর বেশী করোনা রোগীকে বাঁচিয়ে অবশেষে তিনি নিজেই চলে গেলেন অসময়ে। সবাইকে কাঁদিয়ে। করোনা আক্রান্ত হয়ে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াত হন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ২০ তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন তিনি।
ডা পারভেজ শোক তর্পণে জানান, 
অধ্যাপক একেএম মাসুদুর রহমান স্যার চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে, আর শিখিয়ে গেলেন কিভাবে ভয় কে জয় করতে হয়। তিনি শুধু একজন ভালো ডাক্তার ছিলেন না, তিনি একজন ভালো শিক্ষক, একজন অভিভাবক, ভালো একজন উপদেষ্টা ছিলেন। নিজে অসুস্থ থেকে কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে কাজ করেছেন নির্ভীকের মত। ১ ০০০ এর বেশি কোভিড রোগী চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন তাঁর থেকে। তাঁর অবদান অনস্বীকার্য থেকে যাবে।
মুনিম রেজা শোক এপিটাফে লিখেছেন,
এখনি যদি হটাৎ করে আপনাকে কেউ জিজ্ঞেস করে আপনার প্রিয় শিক্ষক কে?
তখন কোন শিক্ষকের কথা আপনার মাথায় আসবে?
আমার মাথায় যাদের নাম আসবে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন প্রফেসর মাসুদুর রহমান স্যার।
.
শুধু আমার নয়, আমার মতো হাজারো শীক্ষার্থির প্রিয় শিক্ষক ছিলেন তিনি। স্যারের ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন কিন্তু স্যারকে পছন্দ করেন না এমন ছাত্র-ছাত্রীও কি পাওয়া সম্ভব? মনে হয়না।
.
স্যার দীর্ঘদিন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগে কর্মরত ছিলেন। পরে এক পর্যায়ে পদোন্নতি জনিত কষ্ট নিয়েই সরকারী চাকরি ছেড়ে বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। স্যার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ২০ তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।
.
করোনার সময়েও স্যার পূর্ন উদ্যোমে রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। নিজের অনেক ধরনের অসুস্থতা থাকার পরেও রোগীর চিকিৎসায় এতটুকুও পিছপা হননি। স্যারের চিকিৎসায় অনেকে বেচে গেলেও আজ স্যার নিজেই সকল চিকিৎসা ব্যার্থ করে দিয়ে ফিরে গেলেন আল্লাহর কাছে। 
.
স্যারের একটা পরামর্শ আমার আজো মনে পড়ে। স্যার বলতেন, চিকিৎসা পেশা আমি উপভোগ করি, তোমরাও উপভোগ করার চেষ্টা করো। যেহেতু এই পেশাতেই সারাজীবন থাকবা, রোগীদের ভালোবাসো, তাদের জীবনের গল্প শোনো, দেখবা এই পেশা তোমাদের প্রিয় হয়ে উঠবে।
.
একবার এক বেওয়ারিশ মহিলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, দেখার কেউ নেই। অনেক অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিলেন। খাবার খাওয়া, অষুধ খাওয়া, নিজের পরিচ্ছন্নতা - কোন কিছুতেই তিনি সক্ষম ছিলেন না। অনেকেই রাউন্ড দিয়েছেন, অনেকেই দেখেছেন, কেউ তেমন কিছু বলেন নি। কিন্তু মাসুদ স্যার যেদিন রাউন্ড দিলেন, স্যার বললেন একজন অসুস্থ অসহায় মানুষ কি এরকমকভাবেই পড়ে থাকবে? তোমাদের মধ্যে একজনও কি নেই যে তার একটু খোজ রাখবে? তোমরা একজন দায়িত্ব নাও, আমি খরচের ব্যবস্থা করবো। এমনিভাবে স্যার মানুষের কষ্ট অনুভব করতেন, সেগুলা দূর করার চেষ্টা করতেন। 
.
মানুষ গড়ার কারিগররা একে একে চলে যাচ্ছেন। আমরা কি উনাদের শূন্যস্থান পূরন করতে পারবো?
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       