Ameen Qudir
Published:2017-05-07 03:10:31 BdST
১১ টাকার সিগারেটে যত নবাবী : ১০ টাকার টিকেট কিনতে গরীব অভাবী

ডা. মিথিলা ফেরদৌস
______________________________
রিক্সায় উঠার সময় খেয়াল করিনি,রিক্সায়ালা তখনই সিগারেট ধরাইছিলো।আমি উঠার সঞে সঞে সিগারেট টা যখন ফেলে দিলো তখন চোখে পরলো।বললাম
--সিগারেট টা নিভিয়ে রাখা যেত না?
--না,আপা তাতে সিগারেটের টেস্ট পাওয়া যায় না।
--তাহলে না হয় শেষ করেই চালাতেন।দাম কত সিগারেট টার?
--১১টাকা।
আমি অবাক হয়ে যাই,তার নির্বিকার উত্তরে।মাথার মধ্যে পরে থাকা জ্বলন্ত সিগারেটটা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়।একটা রিক্সায়ালার সারাদিন ইনকাম কত?সারাদিন সে কয়টা সিগারেট খায়?সে বা তার পরিবার পুষ্টিকর খাবার পায়তো?তাদের কেনো মিডিয়া গুলো সিগারেটের ব্যাপারে সচেতন করেনা?নাকি তারা নিজেরাও জানেনা।তারা চাইলে ম্যাস পাবলিককে এওয়ার করতে পারে।সিগারেটে শুধু যে ফুসফুসে ক্যান্সার হয় তা না!প্রতিটা ক্যান্সারের একটা কমন কারণ চোখ বন্ধ করে আমরা স্মোকিং লিখে দিয়ে আসি।
এখন আসি মুল বিষয়ে,আমার কাজ মুলত এই শ্রেনীর লোকজন নিয়ে।প্রতিদিন দুই একজন রিক্সায়ালাতো আসেই,এসে যথারীতি রিক্সায়ালা বলে সহানুভুতি নিতে চায়।টেস্ট ফ্রি করে দেন,ঔষধ হসপিটালে যা আছে তাই দেন।এইসব আবদার।
টেস্ট ফ্রি করা আমার এক্তিয়ারে নাই,আমি যেটা করি হাস্পাতালের ভিতরে যে পরিক্ষা হয় তাই দিয়ে আমার ডায়াগ্নোসিস করার চেষ্টা করি।আর রুগীকে পই পই করে বলে দেই,বাইরে না যেতে।যেখানে হসপিটালে usg ২০০ টাকা তা বাইরে ১২০০-১৮০০ টাকা লাগে।আর সবচেয়ে বড় কথা হাসপাতালের টেস্টগুলা নির্ভরযোগ্য।
আর হাসপাতালে বেশিরভাগ ঔষধ আউটডোরে সাপ্লাই থাকে না।তাই চিকিৎসা যদি কেউ করাতেই চায় ১-২টা ঔষধ বাইরে থেকে কিনতে হয়।কিন্তু কে শুনবে কার কথা।ঔষধ হাসপাতালে যা আছে তাই দিয়েই চিকিৎসা করতে হবে।অনেক সময় বুঝায়ে কাজ হয়না।বাইরে গিয়ে চিল্লাফাল্লা করে, ডাক্তাররা নাকি হাসপাতালের ঔষধ মেরে দেয়।আমি এখন যদি মনে করি ঔষধ নিতে আসছে,হাস্পাতালে যা আছে দিয়ে দেই।চিকিৎসা হোক চাই না হোক,এরা বহুদুর থেকে অনেক পয়সা খরচ করে হাসপাতালে আসে মুলত ঔষধ নিতে, চিকিৎসা করতে না।বোঝেইনা ঔষধের দাম কয় পয়সা?চিকিৎসা কত জরুরী?
অনেকেই হাসপাতালের ১০ টাকার টিকিটের তেমন কোন মুল্য নাই,আগের দিন প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরিক্ষা করতে দিছি,পরেরদিন যথারীতি টিকেট হারায় চলে আসে।অথচ আগের টিকেটে তার মুল সমস্যা লেখা ছিলো।আবার তার সমস্যা শুনতে হয়।বোঝে না যে, আমরা প্রতিদিন ১০০ এর উপর রুগী দেখি।
কেউ কেউ আবার টিকিট দলা পাকায় আনে,তেল চিটচিটে করে আনে লেখা যায় না।একদিন এক রুগীর এমন টিকেট দেখে বললাম,
 --আপনার বাড়ীর দলিল কই রাখেন?
 ---ট্রাঙ্কএর ভিতর তালা দেয়া থাকে।
 ---খুব ভালো তালা দেয়াই উচিৎ।( রুগীর লোক খুশিতে গদগদ,তারা দলিল বিষয়ক অনেক কিছু বলতে থাকে,আমার মেজাজ চরতে থাকে)বললাম
 ---নিজের সুস্থ জীবনের চেয়েও কি দলিলের দাম বেশি?(তখন আর কথা বলেনা)।
কেউ কেউ এমন টিকেট আনে যেখানে,এক বিন্দু দেয়ার জায়গা থাকেনা,তাও ১০ টাকা দিয়ে নতুন টিকেট করবেনা।
হাসপাতালে ১০ টাকার টিকেট, সস্তা ডাক্তার আর সস্তা চিকিৎসা ভাবে।চিকিৎসা টাকে এদেশের মানুষ কখনই গুরুত্ব দেয় না।তারচেয়ে এদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিড়ি খেয়ে নিজের জীবনের বিপত্তি ডেকে আনা।
 লাখ টাকা খরচ করে রুনা লায়লা আর মমতাজের গান নিয়ে একটা লেখা পড়েছিলাম,সেখানে অনেকেই মন্তব্য করেছে,শখের দাম লাখ টাকা।আমার রিপ্লাইতে খুব লিখতে ইচ্ছা করেছিলো,শখের দাম লাখ টাকা আর জীবনের দাম ১০ টাকাও দিতে ইচ্ছা করেনা।
__________________________________
ডা. মিথিলা ফেরদৌস । পাঠকপ্রিয় লেখক। লোকসেবী ডাক্তার ।
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       