Ameen Qudir
Published:2017-04-04 14:14:36 BdST
একমাত্র পহেলা বৈশাখ সকল বাঙালীর প্রাণের উৎসব
 
ডা. মিথিলা ফেরদৌস 
____________________________
জামা কেনা,আমার এখন আর নেশা না মানসিক বিকৃতি,অসুস্থতা।দুই ঈদ,পহেলা বৈশাখ,ভ্যালেন্টাইন, পহেলা ফাল্গুন,পহেলা আষাঢ়,আমার জন্মদিন,জামাইএর জন্মদিন,বাচ্চার জন্মদিন(বাচ্চার চেয়ে আমার প্রায়োরিটি বেশি,কারন,আমি জন্মদাত্রী), পারলে চৌদ্দগুস্টির জন্মদিন,ম্যারেজডে,এছাড়া উইকেন্ডে মার্কেটিং এ জামার পছন্দ হইলে কিনতে হবেই।
জামা কেনার ব্যাপারে আমার ব্রান্ড নিয়া মাথা ব্যাথা নাই,ফুটপাথের হইলেও সমস্যা নাই,জামা হইলেই হইছে,কিন্তু আমার জামাই ব্রান্ড ছাড়া কিনতে নারাজ।জামা দিতে যদিও গাইগুই করে,কিন্তু দিলে ব্রান্ড।আমার জামা,জুতা ব্যাগ কেনার ব্যাপারে,সংসারের মোট ইনকামের ৪০% ব্যয় হয়,বাকি,৬০%এ ট্রান্সপোর্ট, লোনের কিস্তি,বাচ্চার পড়াশুনা,খাবার খরচ ইত্যাদি।আমার কত জামা আছে,আমার জানা নাই,সব জামা আমার পরাও হয়নি।
 জামা কেনার ব্যাপারে আমার ব্যাখ্যা,বয়স হয়ে যাচ্ছে কয়দিন পর বোরখা শুরু করতে হবে,তখন আর জামা দিয়া কি করবো?
এইব্যাপারে আমার একটা 'কিন্তু' আছে,বুড়া হয়ে গেলে কেনো মানুষ বোরখা পরে,বয়স্ক মহিলাদের চেয়ে কম বয়সিদের কি বোরখা বেশি দরকার না?যাই হোক এইসব যুক্তি তর্কে যাইতে চাইনা।সবাই যা করে আমিও তাই করবো।
 মুল প্রসঙ্গ পহেলা বৈশাখে জামা কেনা নিয়ে,আমার দেখা ধনী, গরিব, গ্রাম, শহর সবার মধ্যে পহেলা বৈশাখে,একটা উৎসবের আমেজ থাকেই।ঈদের পরেই,নিম্নবিত্তদের জামা নেবার আরেকটা উৎসব এইটা।আমি ফুটপাথ থেকে শুরু করে বড় বড় শপিং মলগুলোতে বৈশাখে ব্যাপক কেনা বেচা দেখেছি।যা আমাকে ভীষনভাবে আনন্দ দেয়।একটা নিম্নবিত্ত পরিবারের বাচ্চার হয়তো বছরে দুইবারই জামা কেনা পরে,তা এই দুই উৎসব ঘিরে।আর উচ্চবিত্তদের কথা আলাদা,তবে তাদের ঘিরে,বড় বড় ফ্যাশন হাউসগুলোর ব্যাবসাও আমি দেশের জন্যে একটা ইতিবাচক দিক হিসেবেই বিবেচনা করতে চাই।
 আমার মায়ের বাসায় সাধারনত, দুখী মানুষদের আসা,যাওয়া বেশি,বিচিত্র কারনে দুখি মানুষ সুখি হবার পর আর আমাদের বাসায় আসতে চায় না।
বর্তমানে দুই দুখি মেয়ে আমার মায়ের তত্বাবধানে কাজ করে,এদের একজন ক্লাশ ফাইভে A+, আরেকজন ক্লাশ এইটে A+ পাওয়া মেয়ে।এদের টিউশান ফি,ফর্মফিলাপ,ইদে জামা কাপড় থেকে টুকি,টাকি খরচ আমার মা দেয়,বিনিময়ে এরা আমার মায়ের বিভিন্নকাজে সাহায্য করে।এদের একজন ছয় ভাইবোন,তার মা লেবারি করে,বড়ছেলে চুরি করে নিজেরটা চালায় নেয়,বাকিগুলা যে যেভাবে পারে, করে খায়।
পহেলা বৈশাখ আসলে,ওই মহিলা আমার মায়ের কাছে এসে বলে,'মামি,বছরকার পহেলাদিন,ছাওয়াগুলাক কিছু দেওয়া নাগে'।আমার মা তার সাধ্য মত দেবার চেষ্টা করে,আরও অনেকেই সাহায্য করে,তাই পহেলা দিনে ছেলে মেয়ে গুলা যখন সেজে গুজে নতুন জামা পরে আসে,দেখেই মন ভালো হয়ে যায়।ওদের কাছে আমি শুনে নিই শহরে কোথায় মেলা বসেছে।
 একমাত্র পহেলা বৈশাখ সকল বাঙালীর প্রানের উৎসব,এইটা কোন ধর্মীয় উৎসব না।তাই আসুন না এই উৎসব সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নেই।কিছু মানুষের দিকে সহযোগীতার হাত বাড়াই,যেনো এইদিনে সবাই নতুন জামা পরে,বৈশাখী মেলায় বাচ্চার হাত ধরে আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
________________________________
লেখক ডা. মিথিলা ফেরদৌস । সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল।
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       