Ameen Qudir
Published:2017-03-17 16:32:54 BdST
আমরা সন্ধানী পরিবার: আমরা কর্মে বিশ্বাসী
 
 ডা. মিথিলা ফেরদৌস 
_____________________________
বাবু ভাই এর হাত ধরে সন্ধানীতে আসা।
মুলত বাবু ভাই আমাকে সন্ধানীতে এনেছিলেন।এখানে আসার পর আমি,আরেক জগতে প্রবেশ করি।মেডিকেলে ভর্তির পর যে হতাশায় ভুগতাম,তা কিছুটা ভুলে যাই।পড়াশুনার পাশাপাশি,সবার মানুষের প্রতি যে মমত্ববোধ,আমি নিজের মধ্যেও সবার মত তা লালন করতে শুরু করি।
রক্ত সংগ্রহ,অসহায় রুগির মাঝে তা বিতরন,বড় বড় স্যারদের কাছে ওষুধ সংগ্রহ করে তা,গরিব রুগিদের মাঝে বিতরন,কর্নিয়া জনিত অন্ধত্ব দুরীকরণ,শীতবস্ত্র সংগ্রহ ও বিতরন।
মানুষের মুখে হাসি ফোটানো যে কত আনন্দের তা আমরা প্রতিটা সন্ধানিয়ান,অন্তর দিয়ে অনুধাবন করি ।
এরপর মেডিকেলের থার্ড ইয়ারে সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হই।তখন সারা বাংলাদেশের সন্ধানীয়ানদের সাথে পরিচিত হবার সৌভাগ্য হয়।সবার মানুষিকতা ছিলো একই রকম,বিভিন্নজন বিভিন্ন মেডিকেলের,বিভিন্ন জায়গার হলেও সবার মধ্যেই একই বোধ,মানুষের জন্যে কিছু করা,আমাকে দিয়ে যেনো সমাজের কিছু উপকার হয়,কোন ক্ষতি যেনো না হয়।
একটা দিনের কথা মনে আছে,সন্ধানী ঢাকা মেডিকেলের মনসুর আর তুলি আমার দুই প্রিয় মুখ,জুনিয়র হলেও বন্ধুর মত।একদিন আমরা ঢাকা ভার্সিটির এনেক্স বিল্ডিং এ বসে আম খাচ্ছিলাম।কিন্তু আমের ছাল কোথায় ফেলবো? প্রায় ১০ মিনিট হেটে একটা ডাস্টবিন পেলাম সেখানে ফেলে দিলাম।এইরকম ছিলো আমাদের মধ্যে নীতিবোধ।
আমাদের একটা গ্রুপ ছিলো,আব্বাস ভাই, মুনির ভাই(সলিমুল্লাহ),বায়েজিদ ভাই,কামরুল, মনসুর,মুন্না ভাই আরো অনেকে,একেকজন একেক মেডিকেল,তবু সবার মানুষিকতা ছিলো একই রকম।আমি তাদের কাউকে কখনো সিগারেট পর্যন্ত খেতে দেখিনি।
কখন ও সন্ধানীর কাজে বিভিন্ন মেডিকেল যেতে হত।রাস্তায় এমন ও হয়ছে,ট্রেনে কোন মহিলা বা বৃদ্ধ সিট না পেলে তাদেরকে সিট ছেড়ে দিতে দেখেছি।
আমাদের সবার উদ্দেশ্য সবসময় সৎ ছিলো আর তাই,সন্ধানী এর অনেকেই এখন দেশের সন্মানিত পদে আসিন।দিপুমনি আপু,সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী এখন সন্মানিত সংসদ সদস্য,মুন্না ভাই সংসদ সদস্য,কামরুল স্যার বিএসএমএমএউ এর ভিসি,আজাদ স্যার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি,টুটুল ভাই বিখ্যাত রেটিনোলোজিস্ট,ইকবাল ভাই জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব,মোড়ল ভাই প্রোভিসি,এছাড়া লিটুদা,মন্টা ভাই, জয়নাল ভাই,আরও কত কত উজ্জ্বল নাম।আরও ভবিষ্যৎ যারা আসছে তারাও একেকজন নিজ প্রতিভায় সমুজ্জ্বল। এইটা সম্ভব হয়েছে তাদের সৎপথে দীর্ঘ পথ ভ্রমনের কারনে।
কাল যে মুনীর ভাইকে নৃশংসভাবে আহত করা হয়েছে,তিনিও এই পরিবারের একজন গর্বিত সদস্য।তিনিও সব সন্ধানীয়ান এর মত মানুষের প্রতি মমতাবোধ,নিজের মধ্যে লালন করতেন।তার প্রতিদান তিনি কাল পেয়েছেন।
আজ সকালে উঠে টুটুল ভাইএর লেখা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেলো,ভাইয়ার সাথে কথা বললাম,ভাইয়া বললেন,'জানিস বুন্টি,কাল সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারিনি।'ভাইয়া একজন নিরেট ভালো মানুষ,যাকে আমি আদর্শ মানি। ভাইয়ার কথায় মন টা আচমকা খুব খারাপ হয়ে গেলো,সারাদিন মন খারাপ ছিলো।
 সন্ধানী পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে পরিবারের বড়দের প্রতি আমার অনুরোধ,আসুন যে যার জায়গায় থেকে সবাই এক হয়ে এর একটা সমুচিত জবাব দেই।আমি জানি আমরা পারবোই পারবো।কারণ আমরা সন্ধানীয়ান।
(আমি তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি,আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি,আমি এইসব অপদার্থ ভাষায় বিশ্বাসী নই,আমি কর্মে বিশ্বাসী)
_______________________________
লেখক ডা. মিথিলা ফেরদৌস । সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল।
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       