SAHA ANTAR
Published:2021-07-15 17:45:31 BdST
ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে ক্যাথলিক চার্চের গল্প-যুক্তি, স্টিফেন হকিং এবং শেখ সাদীর ওস্তাদজীর শরবত
রাজিক হাসান 
লন্ডন থেকে 
__________________
ওয়েন ডায়ারের Your Sacred Self গ্রন্থ থেকে একটি গল্প দিয়ে শুরু করি আজ। ৮০ বছর আগের লেখা এই গল্পটি ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমানের অকাট্য যুক্তি হিসেবে প্রমোট করেছিল তৎকালীন ক্যাথলিক চার্চ।
এক মায়ের গর্ভে দুই জমজ বাচ্চা নিজেদের মধ্যেই আলোচনা করছে।
১ম বাচ্চা - তুমি কি বিশ্বাস করো ডেলিভারির পরেও কিছু আছে?
২য় বাচ্চা - অবশ্যই ডেলিভারির পর নিশ্চয় কিছু আছে। হয়ত আমরা এখানে তারই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
১ম - ননসেন্স ডেলিভারির পর আমাদের কোন অস্তিত্বই থাকতে পারে না।
২য় - আমি জানি না। কিন্তু মনে হয় সেখানে এখানকার থেকে বেশী আলো থাকবে। হয়ত আমরা মুখ দিয়ে খাবো, পা দিয়ে হাঁটবো হয়ত আরো অনেক কিছু অনুভব করব যেটা এখন অজানা।
১ম - উদ্ভট। হাঁটা আবার কি? মুখ দিয়ে খাওয়া? সেটাও অসম্ভব। হাস্যকর। আম্বিলিকাল কর্ডই তো আমাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সাপ্লাই করে। কিন্তু এও ঠিক আম্বিলিকাল কর্ডটা খুব ছোট। ডেলিভারির পর সেটা আমাদের দেহ থেকে ছিন্ন হয়ে যাবে। আমাদের জীবনও শেষ হয়ে যাবে।
২য় - আমি ভাবছি তখন অন্য কিছু আসবে। আমাদের আম্বিলিকাল কর্ডের দরকারই হবে না।
১ম - ননসেন্স আর যদিও সেখানে জীবন থাকে তা হলে ডেলিভারির পর আর কেউ সেখান থেকে ফিরে আসে না কেন? ডেলিভারি হলো জীবনের সমাপ্তি। তারপর কেবল নীরবতা আর অন্ধকার।
২য় - আমি অত জানি না। কিন্তু নিশ্চয় আমরা আমাদের মায়ের দেখা পাব, এবং তিনি আমাদের যত্ন নেবেন।
১ম - মা?? তুমি কি সত্যিই "মা" তে বিশ্বাস করো। এটা হাস্যকর। যদি মা এর অস্তিত্ব থাকে তা হলে তিনি এখন কোথায়?
২য় - তিনি আমাদের চারিদিকেই আছেন। আমরা তাঁর দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছি। আমরা তো তাঁরই। তাঁর মধ্যেই আছি। তাঁকে ছাড়া আমাদের এই জগতের কোন অস্তিত্বই থাকত না।
১ম - ও, তা আমি তো তাঁকে দেখতে পাই না। সুতরাং এটাই সঠিক যে তাঁর কোন অস্তিত্ব নেই।
২য় - যদি তুমি শান্ত ও নীরব থাকো এবং আন্তরিকভাবে চেষ্টা করো তা হলে তাঁর উপস্থিতি অনুভব করতে পারবে।
ক্যাথলিক চার্চ অবশ্য আজকাল এসব গল্প ছাপে না, প্রমোটও করে না। সময়ের প্রয়োজনে যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞান মনস্ক ইউরোপিয়ানদের কাছে এই গল্পগুলো রদ্দি হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের দেশে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমানের জন্য এরচেয়েও নিম্নমানের গল্পগুলোর জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে।
কয়েক বছর আগে স্টিফেন হকিং একবার বলেছিলেন, পরকাল বলে কিছু নাই। সবই মানুষের কল্পনা ছাড়া কিছু নয়। নানা বৈজ্ঞানিক তত্ব দিয়া তিনি ব্যাপারটা ব্যাখ্যাও করলেন। বিজ্ঞানীর সেই বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছিল বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা গুলোতে। বাংলার হাজারে হাজারে বিজ্ঞানীর চেয়েও বড় মহাবিজ্ঞানীরা সেখানে ঝাঁপায়ে পড়েছিল কমেন্টে করতে; তাদের লক্ষ্য একটাই যে কোন মূল্যে স্টিফেন হকিংরে ভুয়া প্রমানিত করতে হবে। তাদের কার কি পড়াশুনা সেই আলাপে যাওয়ার প্রয়োজন নাই। ইংরেজি তো দূরের কথা শুদ্ধ করে বাংলাও লিখতে পারে না, সেও কমেন্টে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে প্রমান করছেন স্টিফেন হকিং ভুল বলছেন। গত কয়েক দশকের সেরা তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী তাদরে কাছে কিছুই না বরং তারা সবাই প্রত্যেকে একেকজন স্টিফেন হকিং এর চাইতে বড় বিজ্ঞানী।
শেখসাদির একটা গল্প দিয়ে শেষ করি; একবার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আসলেন অধ্যাপক সাহেবের কাছে তার নির্দিষ্ট বিষয়ে কিছু জানার জন্যে। অধ্যাপক সাহেব তাকে নিয়ে শরবত পান করতে বসলেন। ছাত্রটি দেখলেন, শরবত দিতে গিয়ে অধ্যাপক ঢালছেন তো ঢালছেনই। শরবতের পাত্র উপচে পড়ছে। তবুও অধ্যাপক শরবত ঢেলেই যাচ্ছেন সেই ভরা পাত্রে। ছাত্রটি বাঁধা দিলেন ঢালতে। অধ্যাপক হেসে বললেন, তুমিও পাত্রের মতো ভরে আছ। আগে খালি হয়ে আস তারপর না হয়ে কিছু জানতে পারবে।
আমাদের দেশের এই মহাবিজ্ঞনীদের অবস্থাও একই। তাদের মগজ ভরে গেছে; কোথাও খালি নাই এতটুকুও। আমাদের দেশের সর্বজ্ঞানী এই জনতা একজন পদার্থবিজ্ঞানীর চাইতে পদার্থবিজ্ঞান বেশি বোঝে, একজন দার্শনিকের চেয়েও বেশি দর্শন বোঝে, জীববিজ্ঞানীর চাইতে বেশি জীববিজ্ঞান বোঝে, একজন ইতিহাসবিদের চাইতে বেশি ইতিহাস জানে। উনাদেরকে কেউ নতুন কিছু শিখাবে, জানাবে, বোঝাবে এমন সাধ্য কারো নাই।
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       