ডেস্ক
Published:2021-05-20 20:26:09 BdST
বৃষ্টি নিয়ে শেরেক, বিবি তালাক, তওবা, পুনর্বিবাহ : এক ডাক্তার দম্পতির জীবনের সত্য কাহিনি
ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
রক্ত রোগ বিশেষজ্ঞ 
দুই বাংলায় সমাদৃত সঙ্গীতশিল্পী 
______________________________
তওবা
আজ সন্ধ্যায় ডাঃ আবিদ তার বাইশ বছর আগে বিয়ে করা বউকে, তার সন্তান উসাইলা, উরুজ, উসামার মা'কে দ্বিতীয়বার বিয়ে করবেন। কাজী সাহেব আসছেন। তাঁদের দুই পক্ষের আত্মীয়স্বজনরাও আসছেন।
ডাঃ আবিদ লম্বা হয়ে শুয়ে আছেন তাঁর বেডরুমের বিছানায়। সন্ধ্যা বেলায় বেডরুমে শুয়ে থাকার লোক তিনি না। আজ তার গাধামির জন্যই এই সন্ধ্যাবেলা তাকে ঘরে শুয়ে থাকতে হচ্ছে। আফসোস।
বিষয়টা যে গুরুতর আবিদ সাহেবের বড় কন্যা উসায়লা বিনতে আবিদ সেটা আঁচ করতে পেরেছে। তাই সে বাবাকে ঘাটাচ্ছেনা৷ অন্য সময় হলে বাবার কাছাকাছি ঘুরঘুর করতো। বাবাকে এই সন্ধ্যায় বাসায় পাওয়া বিরল ঘটনা। কিন্তু এত বড় বিরল প্রাপ্তি উদযাপন করার মত পরিবেশ এই বাড়িতে নেই।
ডাঃ শায়লা শুয়ে ছিলেন কন্যাদের ঘরে। তিনি উঠে এলেন রান্নাঘরে। রান্নাটা তদারক করা দরকার। কারো সাথে কথা টথা বলছেন না তেমন৷ শুধু মালেকার মা কে টুকটাক নির্দেশনা দিচ্ছেন। জর্দার আইটেমটা তিনি নিজে বানিয়েছেন। জর্দাটা একটু স্পেশাল৷ বিয়ে পড়ানোর পর একটা মোনাজাত হবে৷ এরপর উপস্থিত সবাইকে জর্দা খাওয়ানো হবে। খাঁটি ইরানি জাফরান দেওয়া জর্দা।
আবিদ সাহেবের ভাইরা এসেছেন কাজি সাহেবকে নিয়ে। কাজি সাহেব এসেছেন শুনে ডাঃ আবিদ তড়াক করে বিছানা ছেড়ে ড্রইং রুমে চলে এলেন। কাজি সাহেবের সাথে এসেছেন ফরিদাবাদ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রইসুদ্দিন মাদারীপুরী। কিছুক্ষণ শায়লার বড় খালা-খালু আর বোন-দুলাভাইরা এসেছে। শায়লার কোন ভাই নেই।
মাওলানা রইসুদ্দীনের পরনে সোনালী লেস লাগানো কালো সিল্কের আবা। মাথায় হাজি রুমাল।।দেখলেই ভক্তি হয়। কাজি সাহেব একটু মডার্ন। নকশাদার পাঞ্জাবির সাথে নকশাদার কোটি। মাথায় শক্ত মখমলী টার্কিস টুপি।
ডাঃ আবিদ ড্রইং রুমে এসে বসলেন। মাওলানা সাহেব গলায় কাশি দিয়ে আলাপ শুরু করলেন। শেষ জমানার ঈমান ও আমল সংক্রান্ত কিছু বয়ানের পর তিনি মূল পর্বে এলেন৷ "ভাই সাহেব আগে তওবাটা পড়ে নিতে হবে। আপনি আমার এই রুমালের মাথাটা আপনার দুইহাতে ধরেন।" আবিদ সাহেব রুমালের মাথা দুই হাতে ধরেছেন। দোয়া কালাম শুরু হলো।
দোয়া কালাম চলুক। এই ফাঁকে আমরা জেনে নেই এই তওবা এবং পুনর্বিবাহের কারণ কি?
তওবার কারণটি হলো, ডাঃ আবিদ সাহেব মনের ভুলে একটা বিরাট ভুল কাজ করে ফেলেছেন। দুপুরে তিনি যখন সরকারি হাসপাতালে তার নিজ কক্ষে বসেছিলেন তখন আকাশ কালো করে জ্যোষ্ঠের প্রথম বৃষ্টি এলো। বৃষ্টি দেখেই বোঝা গেল এ আর সহজে থামবেনা। আজ বিকেলে এই বৃষ্টির ভেতর তো চেম্বারে রোগী আসবেনা। তিনি মন খারাপ করে তাঁর এক সহকর্মীকে বললেন " বৃষ্টিটা আজকে আমার রিজিকটা নিয়া গেল"।
পরক্ষণেই মনে হলো এটা কি ভয়াবহ একটা কথা হয়ে গেলো! বৃষ্টি আমার রিজিক নিয়া গেল মানে কি? বৃষ্টি কি রিজিকের মালিক? একি বলে ফেললাম আমি! এতো শেরেকি!
এরপর বিষয়টা ডাঃ আবিদের দ্বীনদার সহকর্মী রহমত ভাইয়ের সাথে আলাপ করা হয়েছে৷ তিনি সমাধান দিলেন "আপনি শেরেক করেছেন ভাই। আপনার বিবি তালাক হয়ে গেছে। তওবা করে পুনরায় মুসলমান হতে হবে। বিবিকে যদি হালাল করে নিতে চান তাহলে আবার বিয়ে করতে হবে। "
এই ছিলো ঘটনা।
তওবা করা শেষ হলো। এবার কাজি সাহেবের পালা। ভেতরের ঘরে ডাঃ শায়লা বসা। তাকে ঘিরে বসে আছেন তার বড় খালা আর বোনেরা। শায়লার ছোট মেয়ে উরুজ বলল "মাম্মা তুমি একটা কাতান শাড়ি পরোনা"। শুনে সবাই ফিক করে হেসে দিলো। তবে হাসি দীর্ঘ হলোনা। সবাই হাসি গিলে ফেলে গম্ভীর হয়ে গেল। কাজী সাহেব গলা খাকারি দিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। বিয়ের ফরমালিটি চলতে লাগলো।
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       