Dr. Aminul Islam
Published:2022-03-07 19:52:44 BdST
৭ মার্চ সবিশেষ স্বাধীনতার পটভূমি
লেখক
অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ
উপাচার্য , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
_______________
১৯৪৮সালে বাংলাভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালীর অধিকার আদায়ের সূচনা হয়। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের শাহাদতবরণকারী শফিক, রফিক, জব্বার, বরকতের রক্তে রচিত হয় স্বাধীনতার বীজ। ১৯৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯-এর গণআন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে এগিয়ে যায়। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী এই দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে শুরু করে। প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল যে কোনভাবে ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিত ভাবে ১ মার্চ এই অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন। এই সংবাদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ফেটে পড়েন বিক্ষোভে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। তিনি ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করেন।
বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে সাদা পাজামা, পাঞ্জাবি আর হাত কাটা কালো কোট পরে বাঙালীর প্রাণপুরুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ১৯৭১ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সেটি বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ ভাষণ। এ ভাষণে রয়েছে বহুমাত্রিক বিশেষত্ব। মাত্র ১৮ মিনিটের ভাষণে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাস তুলে ধরেন। ভাষণে তিনি বলেন, ‘আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে... উত্তাল জনসমুদ্র যখন স্বাধীনতার ঘোষণা শুনতে উদগ্রীব, তখন বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করেন তাঁর চূড়ান্ত নির্দেশ, ‘তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব- এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এ ভাষণে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হতে আহ্বান জানান তিনি।
৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক একত্রিত হয়। পুরো ময়দান পরিণত হয় এক জনসমুদ্রে। এই জনতা এবং সার্বিকভাবে সমগ্র জাতির উদ্দেশে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি সংগ্রামে এক অনন্য দলিল হিসেবে স্বীকৃত ছিল। ২০১৭ সালের অক্টোবরের শেষে ইউনেস্কো ৭ মার্চের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টরি হেরিটেজ’ (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে (এম ও ডব্লিউ) ৭ মার্চের ভাষণসহ এখন পর্যন্ত ৪২৭টি গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগৃহীত হয়েছে। এ প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একে ইতিহাসের প্রতিশোধ হিসেবে তুলনা করেছেন। কারণ, স্বাধীন দেশে দীর্ঘসময় এই ভাষণের প্রচার ছিল নিষিদ্ধ। টঘঊঝঈঙ’র বিশ্ব স্বীকৃতির মাধ্যমে তা এখন বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের লড়াইয়ের ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধুর দেয়া ১১০৮টি শব্দ সংখ্যার ভাষণটি বিশ্বের প্রথম ও সর্বশেষ মুখে উচ্চারিত ক্ষুদ্রতম কালজয়ী মহাকাব্যের অনুপম দৃষ্টান্ত। জাতির ক্রান্তিকালে স্বাধীনতাকামী ৭ কোটি মানুষের প্রতি এ ভাষণ রাখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু যে যুক্তিপূর্ণ অথচ আবেগঘন, সংরক্ষিত অথচ সুদূরপ্রসারী ইঙ্গিতপূর্ণ অর্থবহ বাক্য ব্যবহার করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ বজ্র নিনাদে মহামুক্তির আনন্দে বাঙালী জাতি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙালী ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় কাক্সিক্ষত মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে রাজনৈতিক দিক নির্দেশনার পথ ধরেই ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লাখো প্রাণের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্র আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বর্তমানে উন্নয়নের মহাসড়কে। স্বাধীন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছে। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই।
লেখক : উপাচার্য , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       