ডা কামরুন লুনা

Published:
2022-11-20 21:47:06 BdST

দেহঘড়ি যত মানবেন, রোগ থেকে তত দূরে থাকবেন


অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, প্রাক্তন অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল


অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যাচার্য
___________________
প্রাণীর দেহের ভেতরে আছে এমন এক অদৃশ্য ঘড়ি, যা মানুষ ও অন্যান্য জীবকে দৈনন্দিন জীবনের ছন্দের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে সারকাডিয়ান রিদম। ১৯৫০ সালে ফ্রান্স হারবার্ট নামে এক বিজ্ঞানী সারকা ও ডিয়াম শব্দ দুটি জোড়া দিয়ে তৈরি করেন সারকাডিয়ান রিদম শব্দটি। ‘দিন সম্বন্ধীয়’ শব্দবন্ধকে এর বাংলা সমার্থক বলা চলে।


তিনজন বিজ্ঞানী জেফ্রি সি হল, মাইকেল ডব্লিউ ইয়াং আর মাইকেল রশ বাশ দেহঘড়ি কীভাবে কাজ করে, সেই রহস্য উদ্‌ঘাটন করেন ফ্রুট ফ্লাইকে মডেল ধরে। তাঁরা চিহ্নিত করেন এমন এক জিন, যা নিয়ন্ত্রণ করে দৈনন্দিন দেহ ছন্দ। নিখুঁত আর সূক্ষ্মভাবে এই দেহঘড়ি দিনের নানা সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে শরীরের ছন্দ মানিয়ে নেওয়ায় সাহায্য করে।

শারীরবৃত্তীয় সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যেমন আচরণ, হরমোন, নিদ্রা, দেহ তাপ আর বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে এই দেহঘড়ি। বাইরের পরিবেশ আর অন্দরের এই ঘড়ির সঙ্গে বেমিল হলে আমাদের কুশল হয় বিঘ্নিত। যেমন আমরা উড়োজাহাজে যখন দূরদেশে যাই, বিভিন্ন সময় অঞ্চল পেরিয়ে আমাদের তখন হয় জেট ল্যাগ। আমাদের জীবনশৈলীর সঙ্গে এই দেহঘড়ির মিলমিশ না হলে নানা রোগের হয় উৎপত্তি।তাই দেহঘড়ির নির্দেশ শুনতে হয়।


আঠারো শতকে জ্যোতির্বিদ যে ডি মাইরান পরীক্ষা করেন, মাইমসাগাছ নিয়ে। তিনি দেখলেন দিনের আলোয় এই গাছের পাতা খোলে সূর্যের দিকে মুখ করে আর সন্ধ্যায় আঁধার নেমে এলে বুজে যায়। তিনি ভাবলেন, দেখি এই গাছকে অবিরাম আঁধারে রাখলে কী হয়।

বিস্ময়ের সঙ্গে দেখা গেল, দিনের আলো ছাড়াই এই গাছ নিজস্ব ছন্দে চলে। তিনি বুঝলেন গাছের ভেতরের এই ঘড়ির নির্দেশে চলে এর কাজকর্ম। কিন্তু কী করে তা চলে, এ রহস্য রয়ে গেল। অন্য গবেষকেরা দেখলেন, কেবল গাছ নয়, অন্য জীব, এমনকি মানুষও দেহঘড়ির নির্দেশে দৈনিক তারতম্যের সঙ্গে শারীরবৃত্তের নিজ ছন্দে চলে।

দেহঘড়ি না মানলে রোগাক্রান্ত হতে পারেন
সত্তরের দশকে বিজ্ঞানী সেইমার বেঞ্জার আর তাঁর ছাত্র রোনাল্ড কনপক দেখতে চাইলেন, ফ্রুট ফ্লাইদের মধ্যে কী এমন জিন আছে, যা নিয়ন্ত্রণ করে এই ছন্দ? এই অজানা জিনের মিউটেসনের মাধ্যমে ফ্রুট ফ্লাইদের দৈনন্দিন ছন্দ হয় বিঘ্নিত। এই জিনের নাম তাঁরা দিলেন ‘পিরিয়ড’। কিন্তু কীভাবে এরা প্রভাব বিস্তার করে দৈনন্দিন ছন্দের ওপর? সে বিষয়ে জানতে ২০১৭ সালে নোবেল বিজয়ীরা ফ্রুট ফ্লাই নিয়ে গবেষণা করছিলেন।

লক্ষ্য ছিল, কী করে এই প্রক্রিয়া কাজ করে তা আবিষ্কার করা। ১৯৮৪ সালে জেফ্রি হল ও মাইকেল রশ বাশ বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আর নিউইয়র্কের রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেল ইয়াং রের সঙ্গে একত্রে কাজ করে পিরিয়ড জিন শনাক্ত ও চিহ্নিত করার কাজে সমর্থ হন।

মানুষের শারীরবৃত্ত বা হিউম্যান ফিজিওলজি চলে সময় নির্ঘণ্টের সঙ্গে। আমাদের শারীরবৃত্তের নানা দিকের সঙ্গে জড়িত এই দেহঘড়ি। দেহের কুশলে আর ব্যাধিতে এর সম্পর্ক।

সব বহুকোষী জীব ও মানুষ একই উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করে দৈনন্দিন ছন্দ। এই দেহঘড়ি দিনের নানা সময় অনুধাবন করে আমাদের বডি ফিজিওলজির সঙ্গে সমন্বয় করে। ঘুমের ধরন, খাদ্যাভ্যাস, হরমোন কর্মকাণ্ড, রক্তচাপ, দেহতাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে দেহঘড়ি।

#

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়