গাইতে গাইতে মঞ্চেই ঘামছিলেন,
কেকে বলে উঠেছিলেন, আলোগুলো নিভিয়ে দাও
ভিড়ে ঠাসা নজরুল মঞ্চ। প্রেক্ষাগৃহে নানা রকমের আলোর ঝলকানি। মঞ্চে গাইছেন বলিউডের গায়ক কেকে। গানের মাঝে বার বার রুমালে মুখ-কপালের ঘাম মুছছেন শিল্পী। মাথাতেও ওই রুমাল বোলাচ্ছেন। একাধিক বার ছোট বোতল থেকে গলায় ঢালছেন জল। মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চের কেকে-র লাইভ অনুষ্ঠানের একাধিক ভিডিয়োয় ধরা পড়েছে এমন দৃশ্য। অনুষ্ঠানে হাজির থাকাদের অনেকেই বলছেন, মঞ্চে দরদর করে ঘামছিলেন শিল্পী। তবে কি অনুষ্ঠানের সময়েই অসুস্থ বোধ করছিলেন? তেমন করে গুরুত্ব দেননি? কেকে-র মৃত্যুর পর উঠছে এমন সব প্রশ্ন।
অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কেকে ছিলেন অত্যন্ত চনমনে। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন মঞ্চের এ পাশ থেকে ও পাশ। কিন্তু বার বার চলে যাচ্ছিলেন মঞ্চের পিছনের অংশে নিচু টেবিলে রাখা রুমাল ও জলের বোতলের দিকে। মুখ-মাথা মুছে গলায় অল্প জল ঢেলে ফের পরের গান। একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, টেবিল থেকে তুলে নেওয়া রুমালে মুখ মুছে, মাথার চুলে আঙুল চালিয়ে গান শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি। পাশ থেকে মঞ্চে থাকা এক জন হিন্দিতে বলে উঠলেন, ‘‘ভীষণ গরম।’’ শিল্পী তাঁর দিকে তাকিয়ে হেসে সম্মতি দিলেন যেন। তার পর এক জনকে হাতের ইশারায় মঞ্চের উপরের আলোগুলো দেখিয়ে বললেন, ‘‘নিভিয়ে দাও।’’ তার পর ফের গান শুরু। নজরুল মঞ্চে উপস্থিত দর্শক তখন কেকে-র গানে মাতোয়ারা।
তবে তাঁর আচমকা মৃত্যুর পর অনেকেই প্রেক্ষাগৃহের ভিড় নিয়ে সরব হয়েছেন। রোহিত সাউ নামে গুরু নানক ইনস্টিটিউটের এক ছাত্র বলেন, ‘‘প্রচুর ভিড় হয়েছিল। বাইরেও অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একটা সময় দরজা খুলে দেওয়া হয়। এত গরম লাগছিল, মনে হচ্ছিল, এসি কাজ করছে না।’’
কেকে-র অনুষ্ঠানের আগে ওই মঞ্চেই গান গেয়েছেন শুভলক্ষ্মী দে। তিনি জানিয়েছেন, কেকে ঢোকার পর তিনি গ্রিন রুমে গিয়ে শিল্পীর সঙ্গে দেখা করেন। কেকে তাঁর সঙ্গে ভাল করে কথাও বলেন। শারীরিক ভাবে তাঁকে কোনও ভাবেই সেই সময় অসুস্থ বলে মনে হয়নি শুভলক্ষ্মীর। তিনি বলেন, ‘‘অনুষ্ঠানে এসে গাড়িতেই কিছু ক্ষণ বসে চিলেন উনি। এত ভিড় যে ঢুকতে পারচিলেন না। তার পর তাঁকে এনে গ্রিনরুমে বসানো হয়। আমি গিয়ে দেখা করি। কথা হয়। অনুষ্ঠানের সময় ভীষণই এনার্জেটিক লাগছিল ওঁকে। ভাবতেই পারিনি এমনটা হবে!’’
অভিজিৎ-উদিত-শানু ঘরানার উত্তরসূরী একমাত্র কেকে, এই বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকব: অভিজিৎ
নেটমাধ্যমে কেকে-র অনুষ্ঠানের ভিড় নিয়ে সোমবার রাতে অনেকেই পোস্ট করেছেন। কারও কারও অভিযোগ, আসনের তুলনায় দর্শকের সংখ্যা বেশি ছিল নজরুল মঞ্চে। কারও কারও অভিযোগ, হলের শীতাতপ যন্ত্রও ঠিকমতো কাজ করছিল না। তবে এর পাল্টা পোস্টও করেছেন কেউ কেউ। তাঁদের মতে, প্রচুর দর্শক এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আলোর কারণে হলের ভিতরে গরম লাগাটাই স্বাভাবিক। কারও কারও দাবি, হলের দরজা খোলা ছিল বলে শীতাতপ যন্ত্রের কার্যকারিতা উপলব্ধি করা যাচ্ছিল না।
শেষ গান গেয়ে কেকে যখন মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখনও দেখা গিয়েছে, কপাল বেয়ে ঘাম গড়াচ্ছে শিল্পীর। শরীরও ঘামে ভেজা। এর পর সেখান থেকে মধ্য কলকাতার হোটেলে ফেরেন তিনি। অসুস্থ হয়ে হোটেলে পড়ে যান বলেও খবর। তার পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় একবালপুরের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই তাঁকে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।