Dr.Liakat Ali

Published:
2021-12-25 19:59:19 BdST

কক্সবাজারে ধর্ষিত নারী পর্যটকের জবানবন্দি ও ধর্ষকদের নয়া জমানার মনোজগৎ


অভিযুক্ত ধর্ষক। নারীর ছবি প্রতীকী

 


ডা. সাহানারা বেগম ও সংবাদ দাতা
___________

কক্সবাজারে এক নারী পর্যটক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। শুক্রবার তিনি জবানবন্দি দিয়ে জানিয়েছেন ভয়ংকর সেই ঘটনা।
ওদিকে অভিযুক্তদের ফেসবুক পেজ তল্লাশ করে মিডিয়ার তালাশ সাংবাদিকরা ধর্ষকদের অভিনব ধার্মিক, বন্ধুবৎসল ও টিকটক চেহারা পেয়ে বিস্মিত। কি অদ্ভুত নয়া জমানার মনোজগৎ নিয়ে তারা বেড়ে উঠছে।
কোনদিকে যাচ্ছে এই নব্য জেনারেশন। কারা এদের এই বিকল বিকট বিভৎস মনোজগতকে গড়ে তুলছে ও নিয়ন্ত্রণ করছে।

আট মাসের সন্তানকে নিয়ে স্বামীসহ তিনি গিয়েছিলেন কক্সবাজার। তারপরও নিরাপদ থাকতে পারেননি তিনি। সৈকতে নামতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কিই হচ্ছে ঘটনার সূত্রপাত। অভিযুক্ত তিনজনকেই শনাক্ত করা গেছে। প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম আশিকুল ইসলাম।

 

ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস অনুযায়ী, আশিকুল ইসলাম অত্যন্ত বন্ধুবৎসল একজন মানুষ, উপকারী ও প্রচণ্ড ধার্মিক। জীবনকে সুন্দর রাখার নানা ধরনের উপদেশ বাণী আছে অনেকগুলো স্ট্যাটাসে।

১৭ এপ্রিল দেওয়া স্ট্যাটাসে আশিকুল ইসলাম লিখলেন, ‘বিদেশে যাইতে লাগে বিমান, আর জান্নাতে যাইতে লাগে পারফেক্ট ইমান।’

গত এপ্রিলে আশিকুল ইসলাম ফেসবুকে ১৪ এপ্রিল লিখলেন, ‘সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে নিজেকে চেনা এবং সবচেয়ে সহজ কাজ হচ্ছে অন‍্যদেরকে উপদেশ দেয়া।’ ৭ এপ্রিল আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে লিখলেন, ‘সুন্দর একটা পৃথিবী চাই, মুসলমান আমরা ভাই ভাই।’ এমন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, অথচ পৃথিবী অসুন্দর করতে তাঁর চেষ্টার কোনো কমতিই নেই।

গত ২০ জুন আশিকুল ইসলাম ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘অতীতের সবকিছু ভুলে, সৎ পথে থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে মহান আল্লাহর নামে শুরু করলাম, আমার জন্য দোয়া করবেন সবাই।’ ২৭ জুন তিনি দোয়া চেয়ে আবার লিখলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের একটা অতীত থাকে, আমারও একটা অতীত ছিল, আমি আর সেটা নিয়ে একটুও চিন্তা করতে চাই না, এখন শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই, সকলের সহযোগিতা এবং দোয়ার আর্জি প্রার্থনা করছি।’
গত ২১ নভেম্বর তিনি লিখেছিলেন, ‘হারাম থেকে বেঁচে থাকো, আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করবে!’

আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন কক্সবাজারে বেড়াতে এসে ধর্ষণের অভিযোগকারী সেই নারী পর্যটক। গতকাল শুক্রবার ওই নারী ও তার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে তোলে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা রহস্যজনক তথ্য দিয়েছেন। দেশব্যাপী আলোচিত এ ঘটনায় শুক্রবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, ওই নারীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তিন মাস ধরে কক্সবাজারে অবস্থানের পাশাপাশি প্রধান আসামি আশিকুল ইসলামের সঙ্গে তার পূর্বপরিচয় থাকার কথা স্বীকার করেছেন। আশিক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। ১৬ মামলার আসামি, মাদকসেবক ও মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বাইরের আরেকজন নারীর পরিচয় থাকা সন্দেহজনক। আমরা ঘটনার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছি।

পুলিশ জানায়, আশিকের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হত্যা, ছিনতাই, নারী ও শিশু নির্যাতন, অস্ত্র, মাদকসহ মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। সবশেষ গত ৭ই নভেম্বর একটি ছিনতাই মামলায় পুলিশ আশিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন। আশিকুল ইসলামসহ এজাহারে চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া তিনজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন আশিকের দুই সহযোগী ইস্রাফিল খুদা ওরফে জয় ও মেহেদী হাসান ওরফে বাবু এবং রিসোর্টের ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন। এর মধ্যে রিয়াজ উদ্দিনকে গত বুধবার রাতে আটক করে র?্যাব। ঘটনার পর থেকে মামলার অন্য আসামিরা আত্মগোপনে আছে। সন্ত্রাসী আশিকের সঙ্গে রিয়াজের চেনাজানা ও বন্ধুত্ব রয়েছে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
গত বুধবার ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ৯৯৯ নম্বরে ওই নারী কল দিয়ে সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, এ কথা সত্য নয়। ওই নারীর কল দেয়ার কোনো প্রমাণ মেলেনি। কল দিলে অবশ্যই পুলিশের সাড়া মিলতো। আরেক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ওই নারী দাবি করছেন, তিনি পর্যটক হিসেবে কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছেন। কিন্তু তারা আসলে পর্যটক কিনা, সেটা নিশ্চিত করে বলতে সময় লাগবে। তবে তারা গত তিন মাসে একাধিকবার এখানে এসেছেন, সেটা নিশ্চিত। মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সকালে ঢাকা থেকে স্বামী ও আট মাসের সন্তানকে নিয়ে ওই নারী কক্সবাজারে বেড়াতে যান। বিকালে স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে ওই নারী সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঘুরতে যান। বালুচর দিয়ে হেঁটে পানির দিকে নামার সময় এক যুবকের সঙ্গে ওই নারীর স্বামীর ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে কথাকাটাকাটির জেরে সন্ধ্যায় ওই নারীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপর একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে তিনজন ওই নারীকে ধর্ষণ করে। তারপর একটি রিসোর্টে নিয়ে স্ত্রীকে আটকে রাখা হয়। পরে দুর্বৃত্তরা কক্ষের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে চলে যায়। এসব ঘটনা যেন কাউকে না জানানো হয়, তা নিয়ে ভয়ভীতিও দেখানো হয়। পরে ওই নারী এক ব্যক্তির সহায়তায় দরজার লক খোলেন। তখন তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন। সেখান থেকে বলা হয় থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার জন্য। তারপর এক ব্যক্তির সহযোগিতায় তিনি কল দেন র?্যাব ১৫-তে। পরে র?্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়