SAHA ANTAR

Published:
2021-09-26 03:28:21 BdST

ক্রাইম পেট্রল বাংলাদেশ বাসের লাগেজ বক্সে মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট শম্পার মরদেহ, ৬ বছর পর রহস্য ভেদ হল যেভাবে



সংবাদ দাতা
______________

প্রায় ৬ বছর আগে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসা একটি বাসের ট্রাঙ্কে অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহ পাওয়া যায়। আজ শনিবার ওই নারীর পরিচয় ও হত্যার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সকালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, খুন হওয়া ওই নারীর নাম শম্পা বেগম। শম্পা খুলনার দৌলতপুরের দেওয়ারা উত্তরপাড়া গ্রামের ইলিয়াস শেখের মেয়ে। পিবিআইয়ের তদন্তে শম্পাকে হত্যাকারী অবসরপ্রাপ্ত নৌ বাহিনী সদস্য রেজাউল করিম স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মরদেহ উদ্ধারের প্রায় ৩ মাস থানা পুলিশ এবং ৪ বছর সিআইডি এই মামলার তদন্ত করে। তবে কোনো সুরাহা না হওয়ায় আদালত মামলাটির অধিকতর তদন্তের ভার দেন পিবিআইকে।

তদন্তে উঠে আসে, শম্পাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ ট্রাংকে ভরে ঢাকার বাসে তুলে দেন স্বপন।

রেজাউল করিম ________

 

ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, ২০১৫ সালের ৩ মে সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম এ কে খান মোড়ে ঈগল পরিবহনের কাউন্টারে টিকেট কেটে একজন একটি ট্রাঙ্ক তুলে দেন বাসের বক্সে। বাসের হেলপারকে তিনি বলেন, ভাটিয়ারী কাউন্টার থেকে টিকেটের যাত্রী উঠবেন। কিন্তু পরবর্তী কাউন্টারে যাত্রী না উঠায় বাসটি ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে আসে এবং বিকেল পৌনে ৬টার দিকে গাবতলীতে পৌঁছায়। সব যাত্রী নেমে যাওয়ার পর মালিকবিহীন একটি ট্রাঙ্ক বাসের বক্সে পায় হেলপার। তার ও বাসের ড্রাইভারের সন্দেহ হওয়ায় তারা দারুসসালাম থানায় খবর দেয়। পুলিশ ট্রাঙ্কটি খুলে ওই নারীর মরদেহ পায়।


লাশের পরিচিতি শনাক্ত না হওয়ায় অজ্ঞাত পরিচয়ের মরদেহ হিসেবে দাফন করা হয়।

পিবিআইয়ের তদন্ত বিষয়ে তিনি জানান, তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ইন্সপেক্টর আশরাফুজ্জামান মরদেহের পরিচয় শনাক্তে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ও জেলা এলাকার সব থানায় ২০১৫ সালে এন্ট্রিকৃত নিখোঁজ জিডি অনুসন্ধান করেন। এর মধ্যে ২০১৫ সালের জুন মাসের ১০ তারিখে হওয়া ৫৯৯ নম্বর জিডিতে দেখা যায় শম্পা বেগম, পিতা ইলিয়াস শেখ, গ্রাম দেওয়ারা উত্তরপাড়া, থানা দৌলতপুর, খুলনা উক্ত তারিখে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। শম্পা বেগমের ভগ্নিপতি আব্দুল মান্নান পাহাড়তলী থানায় জিডিটি করেন।

এর সূত্র ধরে তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ও শম্পা বেগমের বাবা ইলিয়াস শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি জানতে পারেন, ২০১৩ সালে অবসরপ্রাপ্ত নৌ বাহিনী সদস্য রেজাউল করিম স্বপন খুলনা তিতুমীর নৌঘাঁটিতে কর্মরত থাকাকালীন শম্পা বেগম হাসপাতালে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে তাদের পরিচয় ও প্রেম হয়। ২০১৫ সালের তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হলে স্বপন ২ মে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে শম্পাকে হত্যা করেন। পরবর্তীতে মরদেহ গোপন করতে বাসে তুলে দেন। সে সময় তিনি ভিকটিমের বাবাকে জানিয়েছিলেন, শম্পাকে খুলনার বাসে তুলে দেওয়া হয়েছে।

শম্পার বাবা ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ রেজাউল করিম স্বপনের বিরুদ্ধে নৌবাহিনী চট্টগ্রাম অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

তদন্তের ভিত্তিতে জানা যায়, আসামিকে তার বাহিনী বিভিন্ন অপরাধ সংশ্লিষ্টতার কারণে ২০১৯ সালে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়।

বনজ কুমার জানান, স্বপনকে গতকাল কুমিল্লার ইপিজেড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়