Dr. A. S. Chowdhury

Published:
2021-07-05 16:06:27 BdST

সৌদী ও আরব সমাজের ‘নামমাত্র’ মিসইয়ার বিবাহ এবং এক প্রবাসী বাঙালী  ডাক্তারের বাস্তব অভিজ্ঞতা


আরব সমাজের হালাল মিস ইয়ার নিকাহ/ মুতাহ নিকাহ  ম্যারেজ ব্যুরোর ওয়েব সাইটে

ডা. আব্দুস্ সোবহান চৌধুরী 
সৌদি আরব থেকে
________________
আরব মুল্লুকে আবারও নামমাত্র বিয়ে মিস ইয়ার নিকাহ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সৌদি আরব সহ আরব দেশে এর আইনি বৈধতা রয়েছে।
ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের স্কলাররা কয়েক শতাব্দী
আগে এই বিকল্প বিয়ে হারাম করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু আরবরা এটাকে হারাম মনে করেন না।
তারা ইসলামি আইনের মারপ্যাচে এটাকে " যুদ্ধ কালীন" জরুরি বলে হালাল হিসেবে উপভোগ করেন।
এর ফলে হচ্ছে ভয়াবহ। আরবদেশ সমুহে কাজ করতে আসা প্রবাসীরাও এতে আসক্ত হয়ে পড়েছে।

এখানে বিস্ময়ের বিষয় যে, অারব সমাজে নীতি গত ভাবে হালাল এই বিয়ে পারস্যে গিয়ে মুতা নিকাহ হিসেবে প্রচলিত হয়ে ধিক্কৃত হয়েছে।
ভারতবর্ষে ৪ বিয়ে/ একাধিক বিয়ে হালাল হলেও ভারতীয় মুসলিম স্কলাররা শত শত বছর ধরে এ বিকাহকে হালাল সার্টিফিকেট দেন নি।
ভারতবর্ষের ইসলামি চিন্তাবিদেরা এ বিয়ে ‘উচ্ছৃঙ্খলতাকেই বৈধতা দানের’ চেষ্টা বলে সমালোচনা করছেন শত শত বছর ধরে । সেই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, বিধিসম্মত বিয়ের বাইরে শারীরিক সম্পর্ক ইসলামে নিষিদ্ধ। স্যার সৈয়দ আহমেদ, সৈয়দ আমীর আলী গং অনেককাল আগেই বলে গেছেন , ইসলামে বিবাহবহির্ভূত যেকোনো শারীরিক সম্পর্কই নিষিদ্ধ।

কিন্তু জগদ্দল আরবরা বলছেন উল্টো। তারা বলছেন, মুসলিম নারীরাও হালাল সুবিধা পাচ্ছেন। মুসলিম নারীর কাছে এই পদ্ধতি পুরুষতান্ত্রিক প্রচলিত বিবাহব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায়। আবার অবিবাহিত দম্পতিরা একে নিজেদের যৌন চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে একধরনের বৈধতার আবরণ হিসেবে বিবেচনা করেন। সুতরাং হালাল। ভারতীয় মুসলিম হিসেবে ধাক্কা না খেয়ে উপায় কি।

আমরা যারা ভারতবর্ষ থেকে আরব মুল্লুকে কাজ করতে এসেছি, তাদের মুসলমান হিসেবে বেশ অবাক হতে হয় আরবদের এই হালাল বিয়ে মিসইয়ার নিয়ে।
সৌদি, ইয়ামেনী, ইরাকি, ইরানি, মিসরীয়
উচ্চ শিক্ষিত আরবদের সাথে কথা বলে দেখেছি, তারা এই বিয়েকে সম্পূর্ণ হালাল ও ইসলাম সম্মত মনে করেন।
আমাদের মুরশিদাবাদ জেলায় নিম্নবর্গের মুসলমানদের মধ্যে ফসলি মৌসুমে ৩/৪ মাসের অস্থায়ী নিকাহের কথা শুনেছি শৈশবে। আমার সমাজপতি পিতা মোসলেম উদ্দিন চৌধুরী এ নিয়ে অনেক সালিশ করেছেন। কিন্তু আইনি সুরাহা দিতে পারেন নি। কেননা,নামমাত্র দেনমোহর দিয়েই নিকাহগুলো হত। ফসলি শেষে তালাক হত।আব্বার এবং আমার বিবি একজন করেই আছে।
সমাজপতি হিসেবে আব্বা কঠোর ছিলেন। তিনি গোয়ারতুমি করে ওসব বিয়েতে বাধা দিতেন। সেটা মুরশিদাবাদের মুসলিম সম্প্রদায়কে মানতে বাধ্য করতেন।
সেসব দিন এখন বাতিল হতে চলেছে। অবাক করা বিষয় হলো, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ,পাকিস্তান, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা মুসলমানরা এই শর্ট টাইম নিকাহে গোপনে অংশ নিচ্ছেন।
মুরশিদাবাদ থেকে আসা এক এন্জিনিয়ার এ ধরণের নাম মাত্র নিকাহ করায় যুগপৎ আমাকে মুর্শিদাবাদ ও জাদ্দাহ সালিসি করতে হয়েছে আব্বার মত। কিন্তু
আব্বার মত সফল হতে পারি নি।

আরব আইনে এটা হালাল হওয়ায় এখন আমার চাকুরী নিয়েই টানাটানি। তাই ক্ষান্ত দিয়েছি। কবুল করে নিয়েছি ব্যর্থতা।
এ নিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি একটি সরেজমিনে রিপোর্ট করেছে।
তারা বলছে,

সৌদি সমাজে শর্তহীন বা নামমাত্র বিয়ে ‘মিসইয়ার’-এর ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। প্রচলিত বিয়ের খরচ মেটানোর সামর্থ্য না থাকা ব্যক্তিদের জন্য গোপনে এ ধরনের বিয়ে যেন ‘আশীর্বাদ’ হয়ে উঠছে।

সৌদি আরবে কয়েক দশক ধরেই অস্থায়ী বিয়ের প্রচলিত একটি ব্যবস্থা আইনি বৈধতা পেয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে সহাবস্থান এবং স্ত্রীর ভরণপোষণের খরচ বহন করার মতো কিছু অধিকার থেকে স্বামীকে অব্যাহতি দিয়ে থাকেন স্ত্রী। তবে মিসইয়ার বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে যেন কোনোরকম শর্ত বা দায়বদ্ধতাই নেই। যা আছে, তা হলো গোপনীয়তা ও লজ্জা।

শর্তহীন এসব বিয়ে বেশি দিন টেকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গড়পড়তা ১৪ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে এ সম্পর্কের অবসান ঘটে।
ঘটকালিতে যুক্ত ব্যক্তি, মিসইয়ার দম্পতি ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সাক্ষাৎকার থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তাঁদের কথায় জানা যায়, মিসইয়ার প্রকৃতপক্ষে বৈবাহিক সম্পর্ক ও একাকী জীবনের একটা মিশ্রণ। যেখানে বহুগামী নারী-পুরুষ দ্বিতীয় সংসার বয়ে বেড়ানোর চাপ এড়িয়ে বৈবাহিক সম্পর্কের সুবিধা উপভোগ করে থাকেন।


ওই ব্যবস্থা সম্পর্কে ৪০-এর কোঠার বয়সী এক সৌদি সরকারি কর্মীর দাবি, ‘মিসইয়ার বৈধ পন্থায় আরাম, স্বাধীনতা ও সাহচর্যের মাধ্যম।’ তিরিশোর্ধ্ব বয়সী এক নারীর সঙ্গে দুই বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এমন সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন।


রিয়াদে কর্মরত মিসরের একজন ফার্মাসিস্ট
বার্তা সংস্থা এএফপিকে এই ব্যক্তি বলেন, প্রচলিত পন্থায় তিনি একটি বিয়ে করেছেন। সেই ঘরে তিনটি সন্তান। রিয়াদের বাড়িতে তাঁর এক মিসইয়ার স্ত্রী রয়েছেন। তাঁর কাছে যখন ইচ্ছা তিনি যান। এই গোপন সংসার থেকে কোনো অর্জন বা প্রাপ্তি আছে কি না, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেন, তাঁর এক বন্ধুর এক ডজনের মতো মিসইয়ার স্ত্রী রয়েছে। তিনি একজনকে তালাক দেন, অন্যজনকে বিয়ে করেন। একজনকে তালাক দেন, অন্যজনকে বিয়ে করেন...।

 

স্থানীয় নাগরিকদের মতো সৌদি আরবে বসবাসকারী প্রবাসী কর্মীরাও এ ধরনের বিয়েতে ঝুঁকছেন বলে খবরে উল্লেখ করা হয়। নিজেদের পার্টনার খুঁজতে অনলাইনে বিভিন্ন ডেটিং অ্যাপ ও বিয়ের ঘটকালিতে নিয়োজিত ওয়েবসাইটের শরণাপন্ন হচ্ছেন।


মিসরের এই কর্মী আরও বলেন, গত বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে তিনি স্ত্রী ও পাঁচ বছর বয়সী সন্তানকে দেশে পাঠিয়ে দেন। পরে মিসইয়ার স্ত্রীর খোঁজ শুরু করেন। ইনস্টাগ্রামে এক ঘটকালি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ৫ হাজার রিয়াল (১ হাজার ৩৩৩ ডলার) ফি দাবি করে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার ওজন, উচ্চতা, গায়ের রং...জানাই। তবে এখনো মিসইয়ার স্ত্রীর সন্ধান পাইনি।’

সৌদি বিচার মন্ত্রণালয়ের কিছু সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির আল-ওয়াতান সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়, শর্তহীন এসব বিয়ে বেশি দিন টেকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গড়পড়তা ১৪ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে এ সম্পর্কের অবসান ঘটে।

রিয়াদে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটা একজন সিরীয় নারীর এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মী বলেন, ওই নারী গোপনে মিসইয়ার বৈবাহিক সম্পর্কে জড়িয়ে আছেন। তিনি এ বিয়ের কথা গোপন রেখেছেন। কারণ, তাঁর আশঙ্কা, আগের স্বামী খবরটি জানলে আইনগতভাবে তাঁর দুই সন্তানকে নিজ হেফাজতে রাখার চেষ্টা চালাবেন তিনি।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়