SAHA ANTAR

Published:
2020-10-12 01:04:47 BdST

পুজোর পরে কলকাতার হাসপাতালগুলোর কি করুণ অবস্থা হতে পারে, জানালেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার



পুজোর কেনাকাটার ভিড়ে শিকেয় উঠেছে দূরত্ব-বিধি। শনিবার সন্ধ্যায়, হাতিবাগানে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য সৌজন্য আ বা প


ডা. অর্জুন দাশগুপ্ত
_______________________


সেপ্টেম্বরে এ রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি মোটামুটি একটা স্থিতিশীল জায়গায় এসে গিয়েছিল। গড় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজারের আশপাশে ঘুরছিল। প্রতিদিন প্রায় ৪৫০০০ কোভিড পরীক্ষা হচ্ছিল। হঠাৎ করেই ফের বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমিতের সংখ্যা। আমরা ডাক্তারেরা মনে করছি, বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকে ক্রমবর্ধমান জনসমাগমই এই বৃদ্ধির জন্য দায়ী।

অতিমারির পরিস্থিতিতে জনসমাগম ও আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ পাওয়া গিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই দেখা গিয়েছে সেই যোগাযোগ। কারণ, এত দিনে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন, এক জনের থেকে অন্য জনের মধ্যে করোনাভাইরাস কী ভাবে ছড়ায়। এর পিছনে অন্যতম কারণ ভিড়ের আকার, কত কাছাকাছি মানুষ আসছেন এবং জায়গাটি বাতাস চলাচলের পক্ষে কতটা খোলা অথবা বদ্ধ। এক জন মানুষকে ‘সুপার স্প্রেডার’ হিসেবে দাগিয়ে দেওয়ার থেকে সংক্রমণ ছড়াতে এই সব কারণের অনেক বেশি ভূমিকা রয়েছে বলেই মত।

সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে বস্টনের একটি ওষুধ সংস্থার সম্মেলন ও ওয়াশিংটনের একটি গির্জার জনসমাগম নিয়ে গবেষণা আমাদের আগামী পুজোর দিনগুলোতে কী ঘটতে পারে, তার কিছুটা আভাস দিয়েইছিল। এ ছাড়াও মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় ধর্মীয় সমাগম, পুণের গণেশ পুজো, ভুবনেশ্বরে এবং পুরীতে রথযাত্রা-পরবর্তী করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা বৃদ্ধি আমাদের আশঙ্কায় ইন্ধন জোগাচ্ছে।


এরই মধ্যে রয়েছে ছ’মাস ধরে বাড়িতে আটকে থাকার ফলে মানসিক ও আর্থিক বিপর্যয়। সেই বিপর্যয় কাটাতে বহু মানুষ ভিড় উপেক্ষা করেই বেরিয়ে পড়ছেন রুজির টানে। এ বার সঙ্গে যোগ হচ্ছে প্রচারের অভাব, নির্লিপ্ততা। যে কারণে মানুষের মনে ‘হচ্ছে হবে দেখা যাবে’ ভাব ক্রমেই বাড়ছে।

অন্য বছরের মতো এত না হলেও এ বার যদি ষষ্ঠী থেকে দশমী পথে জনসমুদ্র নামে, তবে পরিস্থিতি কী হবে, তা আন্দাজ করেই ডাক্তারেরা ভীত হয়ে পড়ছি। এই আতঙ্কের দোসর, সমাজে কোভিড রোগকে সম্পূর্ণ কলঙ্ক হিসেবে দেগে রাখা। যে কারণে পাড়ার লোকের কাছে বার বার হেনস্থার শিকার হয়েছেন কোভিড রোগী এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। তার উপরে রয়েছে কোভিড চিকিৎসার বিপুল খরচের বোঝা। এ সব মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। তাই অল্প জ্বর কিংবা কাশি হলেও বহু মানুষ কোভিড পরীক্ষা না করিয়ে রাস্তায় ঘুরে সংক্রমণ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন।

গত এক সপ্তাহ ধরেই বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে শয্যার অভাব দেখা দিয়েছে। পুজোয় জনসমাগম যদি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় এবং তার মধ্যে অল্প সংখ্যক মানুষেরও যদি হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়, তা হলে সেই শয্যা কোথা থেকে আসবে, সেই চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ছে ডাক্তারদের।

তবে এই সমস্যার সমাধানের পথ প্রশাসনকেই খুঁজতে হবে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, উৎসবের মরসুমে দূরত্ব-বিধি মানা, হাত ধোয়া এবং সর্বোপরি মাস্ক পরা যেন সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়। যেন জনসমক্ষে এই কথাগুলো নিয়ে বার বার আলোচনা হয়। যাতে সাধারণ মানুষ এবং পুজোর উদ্যোক্তাদের কাছে তা পৌঁছয়। এর ফলে আয়োজকরাই প্রশাসনের পাশে থেকে ভিড় আটকাতে কিছু হলেও সচেতন থাকবেন।

অনেক পুজো উদ্যোক্তা নিজেরাই পুজোর আয়তন কমিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বহু মানুষ অসচেতনতা থেকেই মাস্ক না পরে কাছাকাছি আসতে শুরু করেছেন। এই ভাবে চললে দুর্গাপুজোর পরে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেবে। ভেবে দেখবেন, হাসপাতালে শয্যা থাকবে না, সংক্রমিতের পরিজনদের আক্রোশ ডাক্তারদের উপরে পড়বে। এই পরিস্থিতি আগাম দেখতে পাচ্ছি আমরা। তাই আশঙ্কিত হয়ে পড়েছি।

 

লেখক: ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট

সৌজন্যে আনন্দবাজার পত্রিকা

-----------------

এই লেখা নিয়ে নোটস দিয়েছেন , কলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক রেজাউল করীম
--------------------------
Arjun Dasgupta র লেখাটা সবাই পড়ুন। করোনা আমাদের চিকিৎসকদের অনেককেই ছুঁয়ে চলেছে প্রায় প্রতিদিন।a cat has nine lives- আমি ইতিমধ্যে দশ জনকে ছুঁয়ে ফেলেছি। কিছু যে হয় নি সেটা মা দুর্গার কেরামতি। কিন্তু তার স্পর্শে ইতিমধ্যে 55 জনের প্রয়াণ হয়েছে।
আবার করোনা থেকে মুক্তির পর আসে অবসাদ ও তার সাথে পাল্লা দেওয়া পোষ্ট-কোভিড ফাইব্রোসিসের ভয়। গত সপ্তাহে একজন চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ার প্রায় এক মাস পরে এসে হাজির- মানসিক অবসাদ ও বুকে ব্যাথা। CT স্ক্যান জুড়ে ছোপ ছোপ ফাইব্রোসিস, অজানা ভবিষ্যত। এই শত্রু চেনা নয়। তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য এখনো নেই।
গত কাল একজন নামীদামি ই এন টি সার্জেনকে ভর্তি করা দরকার। অনেক খুঁজে পেতে একটা বেড যোগাড় হল। ভর্তি হননি তবে ভালো আছেন তিনি, সেরে উঠবেন। কিন্তু কে জানে কতদিন ধরে কোভিডের থাবা শরীরে বয়ে বেড়াতে হবে।
পুজো আসছে। শরতের আমেজ প্রকৃতি ছড়িয়েছে অফুরান, মনে দোলা লাগছে। আকাশে মেঘের সমারোহে ভরপুর আনন্দের হাতছানি। কিন্তু, এই 2020 তো অন্য আর পাঁচটা কোন বছর নয়! এ একেবারে আলাদা। তাই, এবারের হাতছানির ভেতর লুকিয়ে আছে অদৃশ্য ভয়, মা দুর্গা ও এবার ঠিক সময়ে আসছেন না, মহালয়ার পর তাঁর বাপের বাড়ী আসতে এই দেরী যেন এবারের পরিস্থিতির রূপক।
বেসরকারি হাসপাতালের সরকারী বিনি পয়সার শয্যা বিশেষ নেই, সব ভর্তি হয়ে আছে। আমাদের 1250-1500 ICU ও IDU শয্যা নিয়ে এই যুদ্ধ উত্তীর্ণ হতে হবে। লোক সমাগম কম না করলে এই রোগ আরো ছড়িয়ে পড়বে। আমরা প্রথম থেকে আশঙ্কা করেছিলাম যে রাজ্যের দশ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, সেই আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ হয়েছে। এদের বারো শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে ও তার ও প্রায় তিন শতাংশের ICU দরকার হবে।কেস যদি খুব বাড়ে এক নিমেষে সেই শয্যা ভর্তি হয়ে যাবে, অক্সিজেনের অভাব হবে, অভাব হবে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীর।

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়