Ameen Qudir

Published:
2019-05-09 02:51:56 BdST

শ্লীলতাহানির মামলা করে উল্টৈা বরখাস্ত হলেন শিক্ষিকা


 

প্রতিকী ছবি। সংগ্রহ

 

সংবাদদাতা
_______________________

মাদারীপুর সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তোফায়েল হোসেন ও নূরে আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও লাঞ্ছিত করার মামলা করেছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা। মে মাসের প্রথম দিন সকালে মাদারীপুর সদর থানায় মামলা করা হলেও পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ নেয় নি। জেলা শিক্ষা কার্যালয়ও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

উল্টো সেই শিক্ষিকাকেই সাময়িক বরখাস্ত করেছেন অভিযুক্তদের সহকর্মী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ। ৬ মে বিকেলে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, গত ৩০ এপ্রিল মাদারীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে উপস্থিত হয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তোফায়েল হোসেনের সঙ্গে অসদাচরণ করায় ওই শিক্ষিকাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর ৩ (বি) ধারা মোতাবেক অভিযুক্ত করে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িকভাবে বরখাস্তের সময় তিনি বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা পাবেন।

শিক্ষিকার করা মামলার নথি ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে পেশাগত কাজের জন্য সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে যান ওই শিক্ষিকা। সে সময় তাঁর কয়েকটি ছবি তোলেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তোফায়েল। ছবি তোলার কারণ জানতে চাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা ওই শিক্ষিকাকে পাশের আরেকটি নির্জন কক্ষে নিয়ে যান এবং সদ্য তোলা ছবিগুলোর সঙ্গে অশালীন ছবি যুক্ত করে সেসব ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। একই সঙ্গে ওই শিক্ষিকাকে কুপ্রস্তাব দেন কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, পরে জোর করে ওই শিক্ষিকার বোরকা খোলার চেষ্টা করেন শিক্ষা কর্মকর্তা। সে সময় ধস্তাধস্তিতে শিক্ষিকার বোরকা ছিঁড়ে যায়। শিক্ষিকা তোফায়েলের রুম থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বাধা দেন নুরে আলম সিদ্দিকী। এই ঘটনার পরে শিক্ষিকা চিৎকার শুরু করলে তাঁকে ছেড়ে দেন দুজন।

বিষয়টি মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকে জানানো হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে পরদিন সকালে মাদারীপুর সদর থানায় মামলা করেন নির্যাতিতা শিক্ষিকা।

মামলার পর ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তোফায়েল হোসেন। তিনি মিডিয়াকর্মীদের কাছে দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ওই শিক্ষিকা মিডিয়াকে বলেন, থানায় মামলা করেছি এক সপ্তাহের বেশি হয়েছে। পুলিশ আসামিদের ধরছে না। বরং তাদের সহযোগিতা করছে। কী কারণে ধরছে না, আমি বুঝতে পারছি না। আমার গায়ে হাত দিল, কাপড় ছিড়ল, শ্লীলতাহানি করল, আমি বিচার পাই না। আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমি এখন শঙ্কিত হয়ে পড়েছি। আমি একজন নারী। এ সমাজে, আইনের কাছে কি আমি বিচার পাব না? আমি দ্রুত ওদের গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।

বরখাস্ত করা প্রসঙ্গে শিক্ষিকা বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসার অন্যায়ভাবে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। এর কোনো বিধান নাই। আমি যেন ভয়ে মামলা উঠিয়ে ফেলি, এজন্য এ বরখাস্ত।

এদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা আছে, নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা কিংবা তার পরিধেয় কাপড় ছিড়ে শ্লীলতাহানির ঘটনায় ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হলে এ ব্যাপারে কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হলে কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারবে পুলিশ।

এদিকে মামলা করার কারণে এর আগে প্রতিনিয়ত শিক্ষিকার চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন অভিযুক্তরা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁদের সেই হুমকিই বাস্তবায়ন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষিকা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মাদারীপুর সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বারেক করিম মিডিয়াকে জানান, সরকারি কর্মকর্তা বিধায় প্রক্রিয়া অনুযায়ী আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। পরবর্তী বিষয় নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়