Ameen Qudir

Published:
2019-02-08 00:38:21 BdST

স্ত্রীকে ডিভোর্স : ছোট্ট মেয়েকে নিয়মিত ধর্ষণ :চিকিৎসক যেভাবে দেখছেন


লেখক--------------------

ডা. রাজীব হোসাইন সরকার

____________________________

অভিযোগ: এক সমর অফিসার তার স্ত্রীকে ডিভোর্স করে ছোট্ট মেয়েটাকে জোর করে নিজের কাছে রেখে দিয়ে নিয়মিত রাতের বেলা রেপ করত।
সর্বশেষ শকিং নিউজ। এখানেই শেষ?

না।

একদিন বয়সের নবজাতকপকে রেপ করার ব্যাপারটি খুব বেশিদিন আগের না। এরপর আসল- যোনীপথ ব্লেড দিয়ে কেটে বড় করে রেপ। কয়েকদিন থেকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় অল্পবয়স্ক মেয়েদের রেপ করা হচ্ছে কিংবা ব্যর্থ হয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে।

পুরো ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা বেশ জটিল। কারণ শুধুমাত্র মানসিক রোগের কারণে তারা এমন ঘটাচ্ছে বললে ছোট ছোট মেয়েগুলোকে অপমান করা হয়।

পেডোফিলিয়া হল শিশুদের প্রতি যৌন আকর্ষণ। শিশুর বয়স একদিনও হতে পারে। অথবা ১৬/১৮ এর নিচেও হতে পারে।
পেডোফিলিয়ার বেসিক ব্যাপারটা হল- এখানে দোষী ব্যক্তিটি হবে পূর্ণবয়স্ক। ভিকটিম হবে ১৬ বা ১৮ এর নিচে।
যদি ভিকটিমের কনসেন্ট নিয়েও যৌনকর্ম করে তবুও এটাকে দোষী হিশেবেই ধরা হবে।

পেডোফিলিকদের শিকার কারা?
১। অবুঝ (একদিনের বাচ্চা থেকে তিন বছরের বাচ্চা)।
২। অভাবী (যাদের পিতামাত্রার খাবার কিংবা কসমেটিক্স কিংবা খেলনা কিনের দেবার সাধ্য থাকে না)।
৩। মানসিকরোগে আক্রান্ত শিশু।
৪। জ্ঞানহীন শিশু (হাসপাতালে জ্ঞানহীন শিশুকেও হাসপাতালের কর্মচারী দ্বারা ধর্ঢনের ইতিহাস আছে)।

শিকার শুধু মেয়ে হবে এমন নয়। ২০% ক্ষেত্রে ছোট ছেলেরাও ধর্ষনের শিকার হয়।
পে্ডোফিলিক বা দোষী যে সচাররচর ছেলে হবে তা নয়। অনেক মহিলা আছেন যারা পেডোফিলিক হিশেবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

কেন এমন করে?

অনেক স্টাডি হয়েছে কিন্তু রেজাল্ট খুবই অল্প। অনেকগুলো কারণে পেডোফিলিক জন্ম নেয়। আমি কিছু কারণ বলব। তবে বাই অর্ডার সাজাইনি। তাই উপরের কিংবা শেষের কারণগুলোর গুরুত্ব কম বা বেশি হবে না।

১। পেডোফিলিকদের একটি অতীত থাকে, যেখানে নিজেরাই একটা সময় ভিকটিম ছিল।
২। প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশন কিংবা ইরেকটাইল ডিজফাংশনে ভুগতে পারে। ফলে পুর্নবয়স্ক নারীদের সাথে সফল যৌন সঙ্গমে ব্যর্থ।
৩। যৌন পার্টনারের সাথে বাজে অভিজ্ঞতার যৌনসম্পর্ক।
৪। মানসিকভাবে দূর্বল ও হতাশাগ্রস্থ মানুষ।
৫। দীর্ঘদিনের একাকীত্ব। ফলে নারীদের সাথে মিশতে পারে না।
৬। বন্ধু-আত্মীয়-সমাজে গ্রহণযোগ্যতা কম।
৭। মাদকাসক্ত।
৮। বয়স হওয়া স্বত্বেও বিবাহ কিংবা যৌনসঙ্গী না থাকা (এর পেছনেও নানা কারণ)।

কোনো একটা স্টাডিতে দেখেছিলাম- এটা কোন রোগ নয়। এটা এক ধরণের 'এডভেঞ্চার' টাইপের অনুভূতি দেয় পেডোফিলিকদের মধ্যে। এডভেঞ্চারের অনুভূতির নিতে তারা ধীরেধীরে মাংসখেকো বাঘের মত সীমা ছাড়িয়ে যায়।

কীভাবে রোধ করবেন?

১। আপনার শিশুর খেলাধুলার স্থান রাখুন দৃষ্টিসীমার মাঝেই।
২। পরিচিত কিংবা অপরিচিত বয়স্ক মানুষের কোলে বসতে দিবেন না।
৩। আপনার সন্তানকে কেউ চুমু খেতে চাইলে নিরুৎসাহিত করুন।
৪। আত্মীয় আসলে কখনোই একই বিছানায় পাঠাবেন না। সে কাজিন -বয়স্ক চাচা-চাচী-খালা-খালু কিংবা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা হলেও। আলাদা বিছানায় একা শোবার ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন।
৫। আপনার শিশু কারো সাথে যেতে না চাইলে, কারো প্রতি বিতৃষ্ণা দেখালে ভদ্রতাবশত জোরাজুরি করবেন না। লেট হিম/হার গো।
৬। আপনার সন্তানকে পিতা-মাতার কাছ থেকে কিছু লুকিয়ে রাখার স্বভাব থেকে মুক্ত করুন। হয়ে যান বেস্ট ফ্রেন্ড। তার সাথে বন্ধুর মত সকল ধরণের আলোচনা করুন। সেটা স্মোকিং-যৌন শিক্ষা সবকিছুই হতে পারে।
৭। কেউ আদিখ্যেতা দেখিয়ে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলে, খাবার লোভ দেখিয়ে কাছে ডাকলে-খেলনা দেবার প্রতিশ্রুতি দেখিয়ে ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইলে সতর্ক থাকুন।

হ্যা...সবাই পেডোফিলিক নয়...আবার কেউ এই সন্দেহের বাইরে নয়। যেখানে আপন পিতা দায়ী হচ্ছে...সেখানে কাকে বিশ্বাস করবেন?
____________________________

ডা. রাজীব হোসাইন সরকার । সুলেখক। চলতি ঢাকা বইমেলার অন্যতম জনপ্রিয় লেখক।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়