শিশুটি আমাদের ক্ষমা করবে কি?

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
____________________________

গণপরিবহনের ধর্মঘটে এই এ্যাম্বুলেন্সকে আটকে দেয়া হয়। অসুস্থ এক শিশু ছিল রোগী। শত অনুরোধেও দুর্বৃত্তরা এ্যাম্বুলেন্সটিকে হাসপাতালে যেতে দেয় নি। মৃত্যুর ভয়াল থাবা চিকিৎসা না পাওয়া শিশুটিকে কেড়ে নিল। অসহায় মা - বাবা, নিকটজন এই ' হত্যাযজ্ঞ ' অশ্রুভেজা নয়নে দেখবার নারকীয় যন্ত্রণা সইতে বাধ্য হলেন।

২।এই দূর্বৃত্তরা নিরীহ ব্যক্তি মালিকাধীন গাড়িসহ অনেক ড্রাইভার,গাড়ির আরোহীর মুখসহ সারাশরীরে কালি,পোড়া মবিল লাগিয়ে দেয়। নিরাপরাধ মানুষের উপর নির্যাতনের উপর নানা পাশবিক কায়দার সাথে এরা যুক্ত করলো কালি - আলকাতরা -পোড়া মবিল লাগানোর নতুন সংস্কৃতি।

৩।মাত্র কিছুদিন আগেই রমিজূদ্দিন স্কুলের কাছে শিশুদের উপর চলন্ত গাড়ি উঠিয়ে দিলে দুইজন শিশুর স্পটেই মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় সারা দেশের শিশুরা সংগঠিত হয়। আমরা বুড়োরা যেটা পারি নি শিশুরা সেটি করে দেখিয়েছিল ' গণ পরিবহন ব্যবস্থাকে' অনেকটাই সহনীয় মাত্রায় আনা সম্ভব।

৪।ড্রাইভারদের মাদক সেবন,ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালানো, কন্ট্রাকটর-হেলপারের ড্রাইভিং প্র‍্যাকটিসের গিনিপিগ হিসেবে যাত্রীদের ব্যবহার, স্টপেজের আগেই চলন্ত গাড়ি থেকে যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া, দুইগাড়ির মধ্যে স্টপেজ দখলের ম্যারাথন রেস,ফিটনেস বিহীন গাড়ি চালানো, নানা অজুহাতে নারী যাত্রীর শরীরে হাত দেয়া, ট্রাফিক সিগনালকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ওভারস্পীডে গাড়ি চালানোসহ হাজারও অভিযোগ উঠে। গণপরিবহন ব্যবস্থার এইসব অনিয়ম কমোলমতি শিশুরা আমাদের জন্মান্ধ চোখে সবাক চলচ্চিত্রের মত দেখিয়ে দিয়েছিল।

৫।ঘরে-বাহিরে এই অভিযোগ গুলি আমলে নেয়া হয়।শাস্তি ঘোষিত হয় দুর্বৃত্তদের। কোটি নগর বাসী আস্থার নিঃশ্বাস ফেলতে না ফেলতেই নগরবাসীর মুখে 'কালি - আলকাতরা 'লাগিয়ে দেয়া হল। শিশুরা দেবতার মতই অপাপবিদ্ধ, নিস্পাপ।রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,

' যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু
নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছো
তুমি কি বেসেছো ভাল?'

এ্যাম্বুলেন্সে আটকে থেকে বিনা চিকিৎসায় যে শিশুটি অন্য ভূবনে চলে গেছে, রংধনুর দেশ থেকে সে কি আমাদের পর্বতসমান পাপকে ক্ষমা করবে?

___________________________________

লেখক মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ;
উপ অধিনায়ক ,
আর্মড ফোর্সেস ফুড এন্ড ড্রাগস ল্যাবরটরী ।