Ameen Qudir

Published:
2018-04-27 02:14:42 BdST

উচ্চ শিক্ষিত কর্মজীবি মহিলা ,প্রতিষ্ঠিত স্বামী এবং আধুনিক দুই কিশোরী কন্যার কাহিনি


কার্টুনে আকা ছবিটি সংগৃহীত



ডা. নাসিমুন নাহার মিম্ মি
_____________________________

একজন উচ্চ শিক্ষিত, কর্মজীবি মহিলা যার আছে প্রতিষ্ঠিত স্বামী এবং স্কুল ও কলেজে পড়ুয়া বর্তমানের আধুনিক দুই কিশোরী কন্যা সন্তান। আপাতদৃষ্টিতে দেখতে ছবির মত ঝকঝকে তকতকে চমৎকার একটা পরিচ্ছন্ন পরিবার।কিন্তু চার দেয়ালের ভেতরে রয়েছে ভীষন কুৎসিত অসুস্থ জীবনাচার এই পরিবারটির। সে গল্পই শোনাব আজ।

সাধারণতঃ আমরা ভেবে নেই পারিবারিক কলহের নোংরা বহিঃপ্রকাশ, খারাপ শব্দের ব্যবহার, গায়ে হাত তোলার মতো জঘন্য কাজগুলো হয়তো শুধুমাত্র বস্তি ঘরে- সমাজের নিম্নবিত্ত শ্রেণীতেই ঘটে থাকে।উচ্চবিত্তরা হয়তো খুব শুদ্ধ উচ্চারণে ইংরেজির সঠিক একসেন্টে ক্লাসি এটিচিউডে ঝগড়া ঝাটি করে! কিন্তু না।সমাজের এলিট সোসাইটির এসি এবং মার্বেল পাথরে মোড়া সুসজ্জিত প্রাসাদেও কদাকার অসভ্য পারাবারিক কলহ চলে । পাশাপাশি সুখী চেহারার সেলফিও নিয়মিত আপলোড হয় সোস্যাল মিডিয়াতে। প্রচন্ড রকম শোঅফে ভরপুর এসব পরিবারগুলো।

এই লোক দেখানো সুখী পরিবারের সমস্যা হলো, তাদের সন্তান- দুই মেয়ে। তারা তাদের মা ও বাবার সাথে প্রায়সই খারাপ ব্যবহার করে। বাসার কোনো কিছুতেই তাদের ইনভলভেন্ট একেবারেই নেই । একজন ১৯ আর একজনের বয়স ১৬ । লেখাপড়া তারা করে । বাসাতে ওয়াইফাইসহ সমস্ত আধুনিক গ্যাজেটের ছড়াছড়ি। সারাক্ষণই মোবাইল আর ল্যাপটপে ব্যস্ত তারা। আর ব্যস্ত শপিং , পার্লার, চেক ইন এবং বন্ধুদেরকে নিয়ে। এই মায়ের তার সন্তানদের এসব আধুনিক কার্যকলাপ আর সহ্য হয় না। যখন সহ্য করার ক্ষমতা লোপ পায়, রেগে যায় মুখে যা আসে তাই বলে বাচ্চাদের।অপরদিকে বাবার অনেক ধৈর্য। বাবা কিছুই বলেন না কন্যাদের জীবন পদ্ধতি নিয়ে। ফলে দিনে দিনে সমস্যা আরো বেড়ে যাচ্ছে।

এতদিন ছোট মেয়ে রেগে গেলে বাবা মায়ের গায়ে হাত তুলতো, যা অবধারিত। সাথে আজে বাজে গালিগালাজ করতে থাকে। প্রথম দিকে বাবা মা ভাবতো ছোট মানুষ জিদ থেকে এসব করছে ।কিন্তু এখন ওর এসব আচরণ অসহনীয় হয়ে উঠেছে । আজকাল বড় মেয়েও রেগে গেলে বাবা মায়ের গায়ে হাত তোলে। সাথে শ্রাব্য অশ্রাব্য শব্দ তো আছেই। কে যে কার দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে কে জানে?

এ পর্যন্ত শুনে আমার শরীর খারাপ লাগতে শুরু হলো।কি শুনছি এসব ! এও সম্ভব ? আপুকে জানি বলেই বিশ্বাস করছি কথাগুলোর প্রতিটি বর্ণ সত্য ! যে আপুটি এই কথাগুলো বলছিলেন একটানা এ পর্যন্ত বলে দম দেবার জন্য থামলেন। আমার মাথায় অনেক প্রশ্নই ঘুরপাক খেতে লাগল। বললাম, আপু সমস্যাগুলো তো আসলে আর একদিনে শুরু হয়নি। নিশ্চয়ই পেছনে লম্বা কোন ভীষন দুঃখের গল্প আছে।এত অল্প বয়সে বাচ্চাদের এই বখে যাওয়া আচরণ খুবই বেমানান মনে হচ্ছে আমার। উপযুক্ত কারন এবং পরিবেশ ছাড়া সন্তান তাও মেয়ে সন্তান আমাদের সমাজে বাবা মায়ের গায়ে হাত তুলছে। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। আপু এবার বলতে শুরু করলেন ঘটনার পেছনের ঘটনা।

বাবার ইচ্ছে এবং সময় নাই মেয়েগুলোকে ঠিক করে। সে সকাল ৭:৩০- ৭:৪৫ এর মধ্যে বাসা থেকে বের হয় আর রাত ১০ টায় বাসায় ফেরে। কদাচিৎ সন্ধায় ফিরে। বাসায় আসলেই ঘুমায়। জেগে থাকার শক্তিই থাকে না।সারাদিনের পরিশ্রমে সে ক্লান্ত বিপর্যস্ত।তবে মেয়েদের কোন চাওয়া পাওয়া সে অপূর্ণ রাখে না। চাওয়া মাত্রই সব হাজির।চাইলেই টাকা, দামী গ্যাজেট, পোষাক সব দিচ্ছে মেয়েদের। এমনকি বন্ধুদের নিয়ে ট্যুরের এরেন্জ পর্যন্ত বিনা বাক্যব্যয়ে করে দেন । বাবার যুক্তি হচ্ছে, আমরা দুজন পেশাগত কাজে এত ব্যস্ত থাকছি। বাচ্চারা যদি নিজের মতো করে আনন্দে দিন কাটায় সমস্যার তো কিছু নেই । মা'কেই সবকিছু তদারকি করতে হয় মেয়েদের।ফলে মায়ের সাথে তাদের সম্পর্ক আস্তে আস্তে খারাপ হতে শুরু করে।মায়ের শাসনে তারা বিরক্তি দেখায়।

আমি বললাম, আপু ঘটনা আরো আছে। বলুন।সব পরিবারেই বাবা মা কম বেশি শাসন করে।কিন্তু তারজন্য সন্তানের এমন রিয়াকশন অস্বাভাবিক।স্বাভাবিক পরিবারের সন্তানেরা কখনোই এমন আচরন করে না, অসম্ভব।কোথাও একটা বড় ধরনের অসামান্জস্য আছে। আপু বলতে থাকলেন।

২৫ বছর সহ্য করতে করতে ৪৮ বছর বয়সের এই আমি বিধ্বস্ত। স্বামীর সাথে গত ২৪ বছরে ২৪ দিনও বলতে গেলে শারীরিক সম্পর্কহীন জীবন তার। বিয়ের প্রথম কিছু বছর সব ঠিকঠাক ছিল। তারপরই সব এলোমেলো। এরকম শারীরিক সম্পর্কহীন জীবন এই মেয়েটি গত ২৪/২৫ বছর ধরে কাটিয়ে যাচ্ছে এই স্বামী নামক পুরুষটির সাথে। শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য। সেই মেয়েগুলোও এখন এই ব্যবহার করে মার সাথে। স্বামী সুস্হ্য স্বাভাবিক একজন পুরুষ শুধু শারীরিক সম্পর্কে অনিহা। অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট এরকম কোনো আভাসও মিলে নাই। আপুর পরিবার এসব কিছুই জানে না। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা জানে স্বামীর শারীরিক দুর্বলতার কথা, মেয়েদের আচরনের কথা।কিন্তু তারদের ই বা কি করার আছে ! আজকাল আপুর আর ইচ্ছে করে না এদের সাথে বসবাস করতে।এতদিন শুধুমাত্র মেয়েদের কথা ভেবেই স্বামীর অসুস্থতা/অনীহা/অবহেলা মেনে নিয়েছে সে।কিন্তু সেই মেয়েরাই যখন এমন ব্যবহার করে তখন কষ্ট আর কান্না ছাড়া উপায় কি তার? নিজের উপরে সে চরম বিরক্ত।

কেন ,কিসের জন্য এভাবে নিজের জীবনটা নষ্ট করে ফেলল সে? উত্তর খুঁজে পায় না কিছুতেই। কি আর বলব আমি ! আমি না কিছুতেই বুঝি না সমাজের কিছু মেয়ে লেখাপড়া করে উচ্চ শিক্ষিত কর্মজীবি হয়েও কি ভীষন আহাম্মক হয়।পঁচিশ বছর ঘর সংসার করে নিজের বয়স পঞ্চাশে পৌঁছুলে যাদের রিয়ালাইজেশন হয় "কি করলাম অথবা যা করেছি সবই ভুল ছিল" তাদের জন্য সত্যি বলতে কোন মায়া মমতা সিম্প্যাথি আমার আসে না।এদেরকে যথেষ্টই সুযোগ সন্ধানী বোকা বলে মনে হয় আমার।এরা সমাজের চোখে ভদ্র লক্ষী হয়ে সতী সাবিত্রী স্ত্রী'র তকমা গায়ে লাগানোর লোভ সামলাতে না পেরে নিজের জীবনের সুন্দর সময় নিজেই নষ্ট করে পড়ন্তবেলায় এসে হায় আফসোস আর মানুষের সিম্প্যাথি কুড়ায় বলেই আমার মনে হয়।

আমার আম্মু সব সময় একটা কথা বলেন, যে ফ্যামিলিতে বাবা মা'কে মূল্যায়ন করে না ,সে ফ্যামিলির সন্তানেরা কখনোই মা'কে তো বটেই বাবা'কেও সম্মান করে না।
________________________________

ডা. নাসিমুন নাহার মিম্ মি। সুলেখক।

 

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়