Ameen Qudir

Published:
2018-03-05 22:18:05 BdST

ডিয়ার এক্স, ইতি,'আমি': যার কাছে তোমার অস্তিত্ব শেকল বন্দী সারা জীবনের জন্য


ছবিটি মডেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে

ডা. নাসিমুন নাহার মিম্ মি
_________________________

ডিয়ার এক্স,

প্রাক্তন প্রেমিক কথাটা লিখতে কেমন যেন ক্যাবলা ক্যাবলা লাগছে।ইউ নো আমি মোটেও ক্যাবলা নই। তাই এডিট করে এক্স লিখলাম।এটাই ঠিক যায় তোমার সাথে।

আচ্ছা এবার বল তো খবর কি তোমার ? ব্রেকাপের পর এই নিয়ে গত পাঁচ বছরে তোমার মোট আটটা আইডি আমি ফেবুতে ব্লক করলাম।তুমি কি ভেবেছ তোমার স্বভাব চরিত্র আমি জানি না ? আমার মতো করে আর কেইবা কবে চিনেছে তোমাকে ? আরো দশটা প্রেম বা বিয়ে করলেও তারা কেউ কি আর আমার মতো করে তোমাকে কখনো পাবে ? উহু না।

ফলোয়ার হয়ে ঘাপটি মেরে যে থাকো তা তো আমি ঠিক ঠিক ধরে ফেলি।মানে কি এসবের বল তো ? বয়স তো আর কম হলো না।বী ম্যাচিউর ম্যান।অবশ্য প্রথম দু বছর যথেষ্ট ভদ্র এক্স ছিলে।শেষ তিন বছরে মাথায় আবার ক্যারা শুরু হলো নাকি তোমার ? লাভ নাই বাপু।বহুত পেইন খেয়ে তবেই এক্স হয়ে গেছি আমি।এক দুবার না সহস্রবার তোমায় সুযোগ দিয়েছি ।কোটি কোটিবার সরি একসেপ্ট করে নিজের কাছে নিজেকে শেষ করেছি আমি।কিন্তু শেষ পর্যন্ত তুমি যা তুমি তাই থেকে গিয়েছ।
আমিও পারিনি তোমার মতো করে স্বেচ্ছাচারী হয়ে দায়িত্ব ছুঁড়ে ফেলে শুধুমাত্র নিজের ভোগ বিলাসের কথা ভাবতে।ইউ নো হোয়াট আই মীন।তোমার কাছে সব সময়ই তোমার নিজের ইচ্ছা, নিজের লোভ, নিজের সুখ, নিজের স্বার্থ সবার আগে।এমনকি এসবের জন্য নিজের পরিবার কে রাতের অনিরাপদ পরিস্থিতিতে রাস্তায় ফেলে দিতেও হাত কাঁপে না তোমার।

জানো আমার একটুও আফসোস হয় না।
কারন আমি তোমার মতো মাথা গরম করে কোন সিদ্ধান্ত নেইনি।যখন ভালোবেসেছি পুরোটা দিয়েই বেসেছি।কোথাও ফাঁক ছিল না।
তুমি অসংখ্য বার অপমান অপদস্থ অত্যাচার করার পরেও আমি দাঁতে দাঁত চেপে সময় নিয়েছি।জানতাম সময় আমাকে সঠিক পথ দেখাবে।সব সময়ই ভেবেছি-- তুমি ঠিক হয়ে যাবে।এটাই আমি বুঝতে চাইতাম না ঠিক হবার আসলে কিছু নেই।তুমি এমন ই।চিৎকার চেঁচামেচি স্ল্যাং মারামারি ভাঙাভাঙি ধ্বংস টাই তোমার স্বভাব জাত।
সবাই বলে কেন এত দীর্ঘ সময় তোমার মতো একটা জানোয়ার( আমি এই শব্দটা এখনও কেন যে বলতে পারলাম না তোমাকে ?) কে আমি সহ্য করেছি ? জীবনের সব থেকে মূল্যবান সময় কেন আমি অপচয় করেছি ?

আমি হাসি।হেসে বলি-- প্রচন্ড ভালোবেসেছিলাম যে।মোহ কেটে গেলেও মায়া কাটাতে পারছিলাম না।সব সময়ই মনে হতো ওর ভালো মন্দ সব মিলিয়ে ই তো ও আমার। তাই সম্ভব হচ্ছিল না তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে সুস্হ জীবনে চলে আসা।অসুস্থ জীবনে থাকতে থাকতে কখন যে মায়া মমতা প্রবল ভালোবাসাটাই ঘেন্নায় পৌঁছে গেল নিজেই টের পাইনি আমি।
তুমি কি পেয়েছিলে ?
এক দিনে দুদিনে না গুনে গুনে 3650 দিন আমরা সম্পূর্ণ বিপরীত জীবন বোধ সম্পন্ন দুজন মানুষ দুজনকে সহ্য করার নাটক করতে করতে পরষ্পরের শত্রু হয়ে দূরে সরে গিয়েছি।

মনে আছে সেই দিনগুলোর কথা তোমার ? যখন আমি কাঁদতে কাঁদতে বলতাম-- অফিস থেকে এসে কেন এত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকতে হবে তোমাকে ? কি বিশ্রী রিপ্লাই দিতে তুমি।ইভনিং ডিউটি শেষে যখন আমার খুব ইচ্ছে হতো তুমি আমি একসাথে রিক্সার হুড ফেলে তোমার হাত জড়িয়ে ধরে রাতের চাদরে ঢেকে বাসায় ফিরব তখন তুমি ব্যস্ত থাকতে এলাকার মোড়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে।কর্কশ গলায় বলতে -- 'ঢং কর নাতো।মাত্রই সন্ধ্যা হয়েছে।একা একা ফিরে যাও বাসায়।রেষ্ট নাও।সারাদিন হাসপাতালে ডিউটি করে এখন আমার সাথে রিক্সায় ঘুরতে হবে না।আমরা প্রেম করছি না।ঘর সংসারে মন দাও।আমার কাজ আছে।'
অফিস থেকে ফিরে বন্ধুদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা সিগারেট ফুঁকা, চা খাওয়া এবং আরো কিছু যা লিখতে এখনো গা গুলিয়ে ওঠে আমার, কিভাবে একজন চাকরিজীবীর রোজকার কাজ হতে পারে তখনো যেমন বুঝতাম না এখনো বুঝি না।

সত্যিই কি আমার ক্লান্তি তোমায় ছুঁয়ে যেত ?
তবে যে রোজ রাতে আমি যখন ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন যেতাম তখন কেন অতর্কিত স্পর্শে শরীরে মনে ছিন্নভিন্ন হয়ে আতঙ্কিত আমার সারা রাত নির্ঘুম কেটে যেত ?
ভালোবাসায় যত্নটা, আদরটা বড্ড বেশি প্রয়োজন ছিল বায়োলজিক্যাল নীডের থেকেও। কিছুতেই তুমি তা বুঝতে চাওনি।প্রয়োজন ফুরোলেই তোমার আর কাউকেই চাই না পৃথিবীতে।
তুমি এমন কেন হলে ?

যাহোক ব্যাপার না।সময় আমাকে সঠিক পথ ঠিক দেখিয়েছে কিন্তু।তোমার মতো অভিনয় সর্বস্ব সুখী পরিবারের সদস্য হতে পারিনি।তবে একার এই জীবনটা মোটেই মন্দ কাটছে না জানো।মিস করি না তোমাকে বলব না।মিথ্যে বলা হবে তাতে।

একটা মজার কথা বলি। এখন আমি রোজ তোমার ফেভারিট পোশাক শাড়ি পরে হাসপাতালে যাই।কারন--- নিজেকে বয়সের থেকেও গুরু গম্ভীর সাজাতে এখন ব্যস্ত আমি।
রোজ এই শাড়ি পরার সময়গুলোতেই তোমার কথা মনে পরে যায় আমার।বুঝতে পেরেছ নিশ্চয়ই কেন।হুমম কুচি ধরার জন্য কেউ নেই এখানে।অফিস থেকে একটা ছেলেকে দিয়েছে আমার কোয়ার্টারে কাজ করার জন্য।ওকে তো আর বলতে পারিনা কুচি ধরে দিতে।কুচিগুলো এলোমেলো করেই পেঁচিয়ে নেই শরীরে।মজা না বল ?

শোন মন খারাপ কর না।নতুন জীবনে নিজেকে মানিয়ে নাও।তোমার বর্তমান বৌ কে অভ্যাস না বরং জীবনের প্রাপ্তি হিসেবে ভাবতে শিখ প্লিজ।আমার অভ্যাস থেকে বের হয়ে যাও।এতেই মঙ্গল তোমার।
আমি একা আছি বলে ভুল করেও ভেব না I'm available for you.no baby . it's over and out. কাঁদতে কাঁদতে ই আমি তোমাকে ছাড়া ই পৃথিবীতে চলতে শিখে গেছি।যখন তোমার ছিলাম পুরো অস্তিত্ব জুড়ে তুমিময় হয়েই ছিলাম।আর এখন জীবনটা গুছিয়ে নেবার জন্য ছুটছি।হুমম এই ছুটে চলার পথে মানুষের কিন্তু অভাব হচ্ছে না।কিন্তু তুমিই তো আমায় শিখিয়েছ হাতে কলমে তিলে তিলে যাঁতাকলে পিষ্ট করে বিশ্বাসের ধবংস হওয়া কাকে বলে।সুতরাং এত সহজে কি আর বিশ্বাস করতে পারব মানুষকে আমি, বল ?

ভালো এখন আর বাসি না তোমাকে।তবে তোমার ভালো না থাকার কথা শুনলে দিনটা মেঘলা কাটে আমার।মন খারাপের গান শুনতে হয় তখন।খুশি হতে পারি না কেন যেন। মনটা এখনও মানুষ মানুষ গন্ধে আটকে আছে যে। মুক্তি কি নাই ?

ভালো থেকো।
লুকিয়ে লুকিয়ে আমার আইডি দেখার বদ অভ্যাস ছাড়। এতে শুধুই কষ্ট বাড়বে তোমার, আমার ভালো থাকা দেখে।

বিদায় নিচ্ছি।
যত্ন নিও নিজের।চশমার ফ্রেমটা একটুও ভালো হয়নি।রিমলেসই যায় তোমার সাথে।নিয়মিত বিপি চেক করিও কার্ডিওলোজিস্টের কাছ থেকে।।হাইপারটেনশন কোন ভালো অসুখ না।আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।এত বড় পৃথিবীতে মানুষের অভাব নেই আমাকে নিয়ে ভাবনা চিন্তা গসিপ করার।একদিন এদের মধ্যে থেকেই ঠিক সামনে এসে দাঁড়াবে সে জন যে জন আমাকে বদলে না নিয়ে আমি যেমন আছি ঠিক তেমন ভাবেই সাথে নিয়ে চলতে প্রস্তুত।

ইতি,
'আমি'--- যার কাছে তোমার অস্তিত্ব শেকল বন্দী সারা জীবনের জন্য।
__________________________

লেখক ডা. নাসিমুন নাহার মিম্ মি, সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়