Ameen Qudir

Published:
2017-12-14 15:21:11 BdST

প্রোফাইলে পিকচারে জাতীয় পতাকা বনাম আকায়েদ উল্লাহ্‌


 

 

 

 

 

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ

_________________________


বেশ কদিন ধরে ইনবক্স ভরে গিয়েছিল।একটি আহবান !১৬ই ডিসেম্বর জাতীয় পতাকাকে প্রোফাইল পিকচার বানাতে হবে ।বিশ্ববাসী দেখবে আমাদের দেশপ্রেম কত গভীর ।

 

২।বোমা মেরে বাংলাদেশের সন্মান একেবারে ধুলায় গড়াল নরপশু আকায়েদ উল্লাহ ।শুধু আমেরিকাতেই নয় সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের নাগরিকরা সন্ত্রাসী কি না সে প্রশ্ন নতুন করে জন্ম হল ।৯/১১ এর পরে সৃষ্ট 'মুসলিম মাত্রই সন্ত্রাসী' ছড়ানো প্রোপাগান্ডা আকায়েদের মানস গুরুদের কারণে আরেকবার ব্যাপক মার্কেট পেল !

 

৩।আকায়েদ সাত বছর আগে আমেরিকায় পাড়ি জমায় । আমেরিকার ভিসা পাওয়া যে কি অনিশ্চয়তার বিষয় সেটা আমাদের সবারই জানা ।জানা -অজানা তুচ্ছ ঘটনায় সুশিক্ষিত অনেক ব্যক্তিরই আমেরিকা যাবার স্বপ্ন অংকুরেই বিনষ্ট হয়েছে ।তাই আকায়েদ বাংলাদেশে থাকতে 'ক্লিনম্যান' ছিল এটা বলা যেতে পারে ।

 

৪।বছরের পর বছর আমেরিকাতে থেকেও অধিকাংশের কাছে গ্রীন কার্ড পাওয়া সোনার হরিণের মতই থেকে যায় ।আকায়েদ 'অড জব ' করেও গ্রীন কার্ড ঠিকই বাগিয়ে নিয়েছে ।বাংলাদেশে তার বা তার পরিবারের কোন সদস্য সন্ত্রাসী কাজে জড়িত তাকলে ধূর্ত মার্কিনীদের কাছে অবশ্যই সে তথ্য থাকতো ।

 

৫।আমেরিকার বাও-বাতাসে পুষ্ট হয়ে সে আত্মঘাতী হয়েছে ।মূলত ইন্টারনেট থেকে পাওয়া উগ্র মতবাদ তাকে এই পথে নিয়ে গেছে ।ধর্মকে বিকৃত করে ব্যাখ্যা করে জেহাদী জোশ ছড়িয়ে সদ্য তরুণ বয়েসে পা রাখা আকয়েদের 'ব্রেন ওয়াস' ধর্ম ব্যবসায়ীদের জন্য খুব কঠিন কিছু ছিল না । আমেরিকার দ্বার খোলা সংস্কৃতির লীলাভূমিতে অফুরান মদ-মেয়ে মানুষের প্রলোভন উপেক্ষা করে দিনে দিনে তাকে শক্তপোক্ত ,বোমাবাজ বানিয়েছে পর্দার নেপথ্যে থাকা নাটের গুরুরা ।

 

৬।আমাদের চোখের আড়ালে অনেক মেধাবী উচ্চশিক্ষিত তরুণ এই ভয়ংকর পথে পা বাড়াচ্ছে ।হলি আরটিজানের মত ঘটনায় বাংলাদেশ তার কষ্টার্জিত অনেক অর্জন হারিয়ে ফেলছে এক মুহূর্তেই ।

 

৭। প্রোফাইল পিকচারে পতাকা তুলে দেশপ্রেম দেখাতে চাইছি - সেটি খুব খুশীরই খবর । কিন্তু,আমার আপনার ঘরের কোন নিকট আত্মীয় ধর্ম -ব্যবসায়ী তস্করদের হ্যামিলনের বাঁশীর ইন্দ্রজালিক সুরে বিভ্রান্ত হয়ে আকায়েদ হবার পথে পা বাড়াচ্ছে কি না সেটি প্রোফাইল পিকচার বদলানোর চেয়ে অনেক বেশী জরুরী ,অনেক বেশী দেশপ্রেমের কাজ !

 

 


এই কুলাংগারকে চিনে রাখুন।
-----------------

মানুষের মত দেখতে এই ঘৃণ্য প্রাণীটির নাম আকায়েদ উল্লাহ। গতকাল নিউইয়র্ক- এ বোমা হামলা চালায় এই নরপশু। সাতবছর আগে বাংলাদেশ থেকে জীবিকার প্রয়োজনে মার্কিন মুল্লুকে পাড়ি জমিয়ে ছিল এই হন্তারক। প্রথম দিকে সে ট্যাক্সি চালাত। পরে সে গ্রীন কার্ড লাভ করে।

 

এই ঘটনার পরপরই পুলিশকে ভারী অস্ত্র হাতে টহল দিতে দেখা যায়। জনজীবনে অস্থিরতা - অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পরে। মেয়রের আশ্বাস নগরবাসীকে 'প্যানিক' থেকে পুরোপুরি মুক্ত করতে পারে নি।


ঘটনার মোটিভ এখনো পুরোপুরি জানানো হয় নি। সেটি যাই হোক না হোক এই ঘটনার অনেক মাশুল আমাদেরকে গুনতে হবে। 'মুসলিম মাত্র সন্ত্রাসী' এই কুৎসিত প্রোপাগান্ডাকে আরেকবার চাগিয়ে দেয়া হবে। বাংগালি বিদ্বেষকেও আরেকবার উস্কে দেয়া হবে। আমেরিকায় অবস্থিত লাখো বাংলাদেশীসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা লাখো লাখো মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং বাংলাদেশীদের উপর মানসিক চাপ বাড়বার আশংকা রয়েছে। বিদ্বেষীরা প্রতিশোধের উন্মত্ততায় হত্যাকান্ডও ঘটাতে পারে। বাবসা- বাণিজ্য- শিক্ষা সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশী বা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সন্ত্রাসীর কালিমা লাগানো হবে নতুন কূটকৌশলে। আমাদের অনেক বড়বড় প্রাপ্তিকে খাটো করে দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হবে।

 

বাংলাদেশীরা ঐতিহ্যগতভাবে শান্তি প্রিয়। সন্ত্রাসীদের একমাত্র পরিচয় তারা শুধুই সন্ত্রাসী। তাদের কোন দেশ - জাতি নেই। আকায়েদের পাশবিক এই কাজের দায়- দায়িত্ব বাংলাদেশ বা মুসলিম জনগোষ্ঠী কখনই নেবে না। নরাধম আকায়েদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমাদের সকলেরই দাবী।পাশাপশি' , আকায়েদকে যারা দিনে দিনে ব্রেন ওয়াশ করে,অস্ত্র গোলাবারুদ আর ট্রেনিং দিয়ে ' সন্ত্রাসী আকায়েদ '- এ পরিণত করেছে তাদের সবাইকে চিঁড়ুনি অপারেশন চালিয়ে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তিও সবাই প্রত্যাশা করে। কিন্তু,অপরাধীকে খুঁজবার নামে নিরাপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা দরকার।

 

বিশ্ব শান্তির মিছিলের বহুমুখী ধারার অনিবার্য স্রোতের নাম বাংলাদেশ।সেই গৌরবিত শান্তিকামী মানুষ আমি,আপনি, আমরা সবাই।চেয়ে অনেক বেশী জরুরী ,অনেক বেশী দেশপ্রেমের কাজ !

 

__________________________

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ ।

আর্মড ফোরসেস ফুড এন্ড ড্রাগ ল্যাবরেটরির উপ অধিনায়কের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন। ঐতিহ্যবাহী এই ইউনিটটি সেনা, নৌ,বিমান বাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীতে ব্যবহারকৃত সকল খাদ্যসামগ্রী এবং ড্রাগ তথা ওষুধ পথ্য পরীক্ষা - নিরীক্ষা করে ব্যবহারের উপযুক্ততা/ অনুপযুক্ততা নিরুপন করে।

এর আগে ছিলেন আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজএ ।
ওয়েস্টার্ন সাহারায় শান্তিরক্ষী হিসেবে সফলভাবে এক বছরের কাজ শেষে আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন।

[email protected]

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়