Ameen Qudir

Published:
2016-11-29 15:49:16 BdST

নাফ নদী ভরা কান্না


 

 

ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী
___________________________


হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে চেনা এক বুড়ো চাচার রিকশায় ফিরলাম।
কলাপসিবল গেটের এ পাশে মোড়া পেতে পথের দিকে তাকিয়ে আমার রাজপুত্র।রিকশাওয়ালা চাচা বললেন,মাগো আইজ ও বইস্যা আছে আপনার জন্য।

ভাড়া দিতে দিতে উকি দিলাম।মোড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াল সে আমাকে তালা খুলে দিতে আর সাথে সেই ভুবন কাড়া নেপালী হাসি।

কাজের প্রচন্ড চাপ,ব্যস্ততার ক্লান্তি নিমিষে হাওয়া।
একটা দেশ।নিজের!তার মাঝে নিজের একটি শহর!সেই শহরে ছোট্ট একটি নীড়।নীড়ের মাঝে অপেক্ষমান আমার নিজের আত্মার অংশ,আমার সন্তান!!
আমার কাছে জীবনের সংজ্ঞা মোটামুটি এই ই !!!

আর তাই ওদের জীবন নিয়ে দুঃখিত!চিন্তিত!বিচলিত!!

 

 

আমি মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা নামে পরিচিত সম্প্রদায়ের কথা বলছি।।
গনতন্ত্রের লড়াইয়ে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রমকারীনি অং সাং সুচি র ক্ষমতাসীন সরকার কোন যৌক্তিকতা ছাড়া সরকারী বাহিনী দিয়ে দিনের পর দিন পাশবিক অত্যাচার চালাচ্ছে এই সম্প্রদায়ের উপর।
প্রতিদিন ,,প্রতিক্ষন নির্বিচারেরোহিঙ্গা দের খুন করছে ওরা।রক্তের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে।মায়ের কোলে শিশুর লাশ।বাবার কোলে প্রিয় কন্যার লাশ।অবুঝ শিশুর বুক থেকে কেড়ে নিচ্ছে তার এক মাত্র সহায় পিতা মাতাকে।সেনাবাহিনীর মত দেশরক্ষী বাহিনী দিয়ে মা বোনকে নৃশংস ভাবে ধর্ষন করাচ্ছে সুচি সরকার।।
এর নাম গনতন্ত্র????
ঘৃনা।।ধিক তোমাকে হে নারী !!
এই তোমার শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার।এই তোমার শান্তি প্রতিষ্ঠা???এই তোমার গনতন্ত্র???
ঘৃনা তোমাদের সকলকে।
তোমার খোঁপার তাজা ফুলের প্রতিটি পাপঁড়িতে আমি এবং আমরা তোমার জন্য ঘৃনাই লিখে রাখলাম।
কি অসহায়!কি নিরুপায় ওরা!!!
ওদের ঘর নেই,বাড়ী নেই,দেশ নেই?
ওদের কে কোন অধিকারে সুচির সরকার তাড়িয়ে দিচ্ছে।এই একব্বিংশ শতাব্দীতে এসে বিশ্ব মানবতা এই ভাবে ভূলুন্ঠিত হচ্ছে??

চরম বিব্রতকর অবস্থায় আমরা বাঙ্গালীরা।ইতিমধ্যে পাঁচ লক্ষ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে আমার বাংলাদেশে।আমাদের ও যে হাজার সমস্যা।আর তো ভার বইবার ক্ষমতা নেই।।
এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের মানবিক আবেদন,চাপ ই পারবে সুচির সরকারের টনক নাড়াতে।

 

 

 

আমার খুব ইচ্ছে হয় ওর শান্তির নোবেল পুরষ্কার টা ছিনিয়ে এনে বিশ্বে মানবতার পক্ষে কঠিন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক।

আমি যত দ্রুত হোক রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান আশা করি।ওদের জন্য দোয়া করি।
আর যে পাষন্ডরা এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞে মেতে ওদেরকে করুনা করি আমি।।

এই কুয়াশা ঢাকা শীতের বেলায় মৃত্যু ভয়ে প্রান নিয়ে পালানো আশ্রয়হীন রোহিঙ্গারা অনিন্দ্যসুন্দর নাফ নদীর শীতল পানির উপর ডিঙি নাও ভাসিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে।ঘর নেই।বাড়ী নেই।স্বপ্ন নেই।আশা নেই।ভবিষ্যৎ নেই।পিছনে ফেলে আসা স্বদেশ।স্মৃতিময় শৈশব,কৈশোর আর দুঃসহ অত্যাচারের চালচিত্র।।
সম্মুখে বিজিবি - বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ।তাদের চোখে মমতা আর সহানুভূতি আছে।কিন্তু আর কাউকে ঢুকতে দেয়ার অনুমতি নেই।শরনার্থীর মর্যাদা দেবার সামর্থ্য নেই !
অসহায় শীতল দৃষ্টির নারী,পুরুষ,বৃদ্ধ আর অবুঝ শিশুরা।।ধর্ষিত মানবতা!!

শীতল পানিতে লক্ষ্যহীন ভেসে বেড়ানো শীতল চোখের দিশাহীন মানব স্রোত!!!বিশ্ব বিবেক কি জাগ্রত হবে না?
ওরা কি ওদের দেশ,বাড়ী ঠিকানা খুঁজে পাবে না ?
_______________________________

 

 

 

লেখক:ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী। লোকদরদী চিকিৎসক। জনপ্রিয় কলামিস্ট ও লেখক।
মেডিকেল অফিসার
শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ,বরিশাল।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়