Ameen Qudir

Published:
2017-03-15 01:04:56 BdST

বিনিময়ে আমরা তাকে কি দিয়েছি?


 



ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী
____________________________

আসন্ন বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উদযাপনের মিটিং হচ্ছিল।কেকের লেখাটা লিখে দিতে দিতে হঠাৎ ই মনটা খারাপ হলো।সন্ধ্যায় আকাশ জুড়ে কুসুম রঙা চাঁদটাকে দেখে মনটা আরো গভীর বেদনায় আচ্ছন্ন হলো!

এই চাঁদটা এত রূপময় নিশ্চয় ই এটা স্বাধীন দেশ বলে!একটা মানুষ শুধু নয়,একজন মহাত্মা,একজন অসীম সাহসী পুরুষ,একজন মহান দেশপ্রেমিক তার বুকের সবটুকু টকটকে লাল রক্ত সবটুকু ভালোবাসা নিঃশেষ করে দিয়ে এই তুচ্ছ আমাদের জন্য দিয়ে গেছে এক আগুন রঙা তেজোদীপ্ত স্বাধীন সূর্য,এক কুসুম রঙা কোমল স্বাধীন চাঁদ!


আর তার বিনিময়ে আমরা তাকে কি দিয়েছি?
আমরা তাকে দিয়েছি যন্ত্রনা,,অবিশ্বাস!
পনের আগষ্ট ঐ ইতিহাসের কালো রাত্রিরে শত শত অবিশ্বাসের চারা গাছের জন্ম হয়েছিল ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরে!


শিশু দিবস??
না চাইলেও যে দশ বছরের শিশু রাসেল আমাকে ভীষন পীড়া দেয়!মানুষের নৃশংসতা কোথায় নেমে গেলে,ঐটুকুনি মায়ার পুতুল,নির্দোষ শিশুর অমন নির্মম খুন???
লোকে বলে প্রধানমন্ত্রী অসীম সাহসী।অনেক শক্তিধর নেত্রী।আমি জানি এর থেকে বড় সত্য নেই।কিন্তু আমার কাছে প্রধানমন্ত্রী বুকে কষ্টের পাথর চাপা এক কন্যা,এক বড় বোন।
যতটা আঘাত আর দুঃসহ স্মৃতি বুকে চেপে উনি এই দেশটাকে সোনায় সোহাগে ভরেছেন তা কোন সাধারন নারীর পক্ষে অসম্ভব!
উনি কেন অসাধারন??


এইটাই কারন।উনি বঙ্গবন্ধু,বঙ্গমাতার সন্তান।বঙ্গমাতা বেগম ফয়জুন্নেসা মুজিব তাকে এমন লৌহ বর্ম দিয়ে বেষ্টিত হবার শিক্ষা দিয়েছিলেন যে তিনি সময়কে অতিক্রম করে অগ্রগামী হতে বাধ্য।
লোকে প্রেমের কাব্য লেখে।
এই উপলব্ধিটা এর আগে আর কখন ও কারো হয়েছে কিনা জানি না।আমার মনে হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে সবথেকে সফল প্রেমের ইতিহাস আমার জাতির পিতার এবং বঙ্গমাতার।


আমি নারী বলেই বলছি।কতটা নিঃস্বার্থ আর নিখুঁত ভালোবাসা থাকলে পরে একজন নারী তার বাল্য বয়সে পাওয়া স্বামীর সব চাওয়াকে নিজের চাওয়াতে পরিনত করতে পারে??শাড়ী,চুরি,গয়না, ক্ষমতার লোভে না।কেবল বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসতেন বলেই দেশ আর দেশের মানুষের জন্য বিসর্জন দিয়েছেন নিজের সব শখ,আহ্লাদ,বিলাসিতা??
শীর্ষ আসনে স্বামীকে পেতে সবার ভাল লাগে।কিন্তু স্বামীকে জেলখানায় রেখে যখন কেটে যায় জীবনের সব বসন্ত,সন্তানরা তাদের বাবাকে চিনতে পারে না অদেখায়,সেই কঠিন দায়িত্ব মাথায় নিয়ে ঘর সামলে স্বাধীনতার রোপিত বীজে পুষ্টি যোগানো চারটি খানে কথা না!


এই অসাধ্যকে সাধন করেছেন আমাদের বঙ্গমাতা।বাংলাদেশ আর কেউ নয়,বঙ্গবন্ধুর বুকের স্পন্দনে জন্ম নেয়া এক সন্তান ছাড়া।আর বঙ্গমাতা তার লালনকারী।এই দেশ,এই ধীর স্থির অসীম ধৈর্যশীল প্রচার বিমুখ মহিয়সী নারীর কাছে ঋনী।
জন্মের ঋন শোধ হয়নি কভু।নিজের অজান্তেই তিনি গড়ে তুলেছেন আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে।পথটা অত সহজ তো ছিল ই না বরং ছিল প্রচন্ড কন্টকাকীর্ন।


ছিয়াশি সাতাশি সনেও তৎকালীন বরিশালের মত জেলা শহরে তিনি কোন সভা করতে পারেননি।লঞ্চে এসে মধ্য রাতে মিটিং করেছেন নেতা কর্মীদের সাথে।কান্না ভেজা চোখে হাসু আপাকে বিদায় দিয়ে ভোর রাতে বাবার বাসায় ফেরার দিনটি আজ ও স্মৃতিতে উজ্জ্বল।এই প্রজন্ম আমাদের থেকে অনেক ভাগ্যবান।সত্য মিথ্যার দোলায় দুলতে হয় না তাদের।
সেই দুর্দিন থেকে আজকের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির জয় জয়াকার এত সহজ লভ্য ছিল না।হয়ত বুকে বঙ্গবন্ধু,কর্মে বঙ্গমাতা আর শোককে শক্তি করেই এই অসাধ্য সাধন করেছেন শেখ হাসিনা।
যারা আমাকে চেনেন অনেকেই জানেন,আমি বিজ্ঞান মনস্ক নেতা সজীব ওয়াজেদ জয়ের গুনগ্রাহী।


এর পেছনেও আছে আমার সেই অনুভূতি।আমি সত্যি বলছি,জয় পুতুল দুই ভাই বোনের কাছেই ঐ স্বাধীন চাঁদটার জন্য আমি ঋনী।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে পৃথিবীটা তাদের জন্য কেমন ছিল খবর নিয়েছেন?
স্কুলে শিক্ষকরা কম নম্বর দিত।পানিশ করত।মন্দ ব্যবহার করত।মাত্র বারো বছর বয়সে আপনার শিশুকে অন্য দেশে রেখে পড়ানোর ভাবনা ভাবতে পারেন?
হ্যাঁ।ওরা করেছে।ওদের মাকে আমাদের দিয়ে,শিশু বয়সেই ওরা মাতৃহীনের জীবন কাটিয়েছে।ছোট ছোট সুখ দুঃখ গুলো বোবা কান্না হয়ে ইথারে মিলিয়ে গিয়েছে।


আজ যে উন্নয়নের বাংলাদেশ তা ওদের ত্যাগে গড়া।আজ যে ডিজিটাল বাংলাদেশ তা ওনার স্বপ্নে আর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়া।

বঙ্গবন্ধুকে আমি যতটা ভালবাসি,ততটাই ধারন করি।আমাদের যাপিত জীবনের সর্বত্রই জানা বা অজানায় তিনি আছেন।বঙ্গমাতা আছেন।
আমি জানি আমার অনুভব মিথ্য নয়।তাই এ আমার ছোট্ট ঋনশোধ, ভালোবাসার !!

________________________________

ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী । জনপ্রিয় লেখক-কলামিস্ট । পেশাজীবী নেতা।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়