Ameen Qudir

Published:
2017-02-26 16:59:10 BdST

কলকাতায় চিকিৎসায় ভুতুড়ে বিল গয়না, বাড়ি বেচছেন বাংলাদেশের রোগীরা


তারিক হাসান, কলকাতা প্রতিনিধি, দৈনিক ইত্তেফাক।

___________________________


জটিল রোগের চিকিৎসা করিয়ে প্রিয়জনকে সুস্থ শরীরে দেশে ফিরিয়ে নিতে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে অনেক আশা ছুটে নিয়ে আসেন বাংলাদেশের মানুষ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ‘?ভুতুড়ে’? বিল বেড়ে এমন জায়গায় পৌঁছায় যে পাওনা মেটাতে সব গয়না বেচে তারপর প্রিয়জনকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। কাউকে আবার কলকাতায় চিকিত্সার খরচ জোগাড় করতে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে বাড়িও বিক্রি করতে হয়েছে। তারপরও প্রিয়জনকে বাঁচানো যায় নি।


বাংলাদেশের মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে টেস্টের নামে লম্বা বিল করে ওই হাসপাতালগুলো। বুধবারই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর টেস্ট এবং চিকিত্সার নামে বিল বাড়ানোর বিষয়টি রুখতে সক্রিয় হয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে অনেক অভিযোগ পেয়েছেন তিনি।


এক উচ্চপদস্থ কর্তা তার কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন অতিরিক্ত বিল নেওয়া হচ্ছে। এত বেশি যে তিনি বাংলাদেশের মানুষদের বলবেন কলকাতায় চিকিত্সা করাতে না আসতে। এই হয়রানি থেকে রেহাই পাননি কলকাতায় বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রদূত জকি আহাদও। তার বাবা নূর আল আহাদ বাইপাসের একটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। অভিযোগ তার চিকিত্সা ঠিকমত না হওয়ায় এই পরিস্থিতি।


যশোরের বাসিন্দা এক ব্যক্তির নিকটাত্মীয় কলকাতার বাংলাদেশ দূতাবাসের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। ওই ব্যক্তির কিডনিতে পাথর থেকে সংক্রমণ হয়েছিল। ৪ মাস আগে চিকিত্সা করাতে কলকাতায় ভর্তি হন বেলভিউ নার্সিংহোমে। অভিযোগ, চিকিত্সকরা বলেন, আগে হূদযন্ত্রের চিকিত্সা দরকার। বাইপাস অপারেশন না করলে কিডনির অপারেশন করা যাবে না। ততক্ষণে খরচ লাখ পাঁচেক হয়ে গেছে। ওই নার্সিংহোম থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাইপাস সংলগ্ন অন্য বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে বলা হয় হার্টের সমস্যা নেই। কিডনির অসুখ সারাতে খরচ হবে ৩ লাখ!? শেষে ওই বয়জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি দেবী শেঠির হাসপাতালে সংক্রমণ সারিয়ে, অপারেশন করিয়ে যশোরে ফেরেন। খরচ হয় মাত্র লাখ খানেক।

বিয়ের বছর পাঁচেক পরও সন্তান হয় নি বাংলাদেশের রাজবাড়ির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীর। স্ত্রী একটু স্থূলকায়। কয়েকমাস আগে স্ত্রীকে নিয়ে আসেন বেলভিউ নার্সিংহোমে। বন্ধ্যত্বকরণের চিকিত্সায় প্যাকেজ নির্ধারিত হয়েছিল ৪ লক্ষ টাকা। চিকিত্সকরা বলেন, বন্ধ্যত্বকরণের চিকিত্সায় আগে দরকার ওজন কমাতে অপারেশন। অভিযোগ, চর্বি কমাতে অপারেশনের পর রোগীর শরীর খারাপ হতে থাকে। চিকিত্সক চলে যান আমেরিকায়। এদিকে বাড়ে হাসপাতালের বিল। পৌঁছায় ৮ লাখে। টাকা জোগাড়ে ওই ব্যক্তি বাংলাদেশে বাড়ি বিক্রি করেন। ততদিনে রোগিনী শঙ্কটাপন্ন। শেষে বলা হয় ১৪ লাখ না দিলে এই রোগী বাঁচানো যাবে না। বিপন্ন হয়ে তিনি যোগাযোগ করেন কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসে। দিন দুয়েকের মধ্যে রোগিনী মারা যান। বাংলাদেশ উপদূতাবাসের হস্তক্ষেপে দেহ ছাড়া হয়।

৬ মাস আগে স্নায়ু সমস্যার চিকিত্সা করাতে কলকাতায় আসেন বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী। ভর্তি হন উডল্যান্ড হাসপাতালে। অভিযোগ, কর্তব্যরত এক চিকিত্সক তার সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন। দেশ নিয়ে কটূক্তি করা হয়। ক্ষুব্ধ হন মন্ত্রী। হাসপাতালের কর্মকর্তারা ক্ষমা চাইলেও মন্ত্রী বিরক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন বলে চিকিত্সা না করিয়েই হাসপাতাল ছাড়েন।?

ঢাকার নার্গিস বেগম স্বামীর হার্টের চিকিত্সা করাতে জানুয়ারির শেষে আসেন কলকাতায়। ভর্তি করান মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। অভিযোগ, ভুল অপারেশন হয়। ফের অপারেশন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে খরচ হয়ে গেছে ৪ লাখ।

সৌজন্য : দৈনিক ইত্তেফাক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়