Ameen Qudir

Published:
2018-09-17 15:18:23 BdST

একজন মেডিকেল পরিচালকের প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার রোজনামচা


 

 

ডা. সুস্মিতা সাহা নিকিতা
_______________________________

তিনি একজন চিকিৎসক । তিনি একজন কর্মসফল মেডিকেল কলেজ পরিচালক । মেডিকেল পারসনের পাশাপাশি কর্মজীবনে সামরিক বাহিনীর বিগ্রেডিয়ার জেনারেল। জীবনে প্রতিদিনই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন নির্ভীক চিত্তে। কোন কাজকে ভয় পান নি।
একজন মেডিকেল কলেজ পরিচালক হিসেবে অসামান্য সাফল্যে তিনি পেয়েছেন সারা দেশের পরিচিতি ও স্বীকৃতি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে অসামান্য দক্ষতার কারণে তিনি পেয়েছেন ময়মনসিংহবাসীর ভালবাসা; শ্রদ্ধা , সম্মান। তার নাম: বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বদলে দিয়েছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিস্থিতি। অক্লান্ত পরিশ্রমে পরিনত করেছেন মানবসেবার সেরা হাসপাতালে। কিভাবে সেটা সম্ভব হল।
আত্মপ্রচার বিমুখ মানুষটি কখনও সেসব নিয়ে বলেন না। মিডিয়ায় সরব নন। তিনি সর্বদা ব্যস্ত কাজ নিয়ে।
তবে এটা সুখের যে, তিনি খানিকটা রোজনামচা আকারে প্রতিদিনের কাজের কথার অংশবিশেষ লিখে রাখেন। আমরা সেসব কথা সংগ্রহ করেছি। বিস্মিত হয়ে দেখেছি, সেসব কথায় তাঁর প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কর্মসূত্রের কিছু কথা রয়েছে।
যা আমাদের মেডিকেল সেক্টর পরিচালনার জন্য অতি শিক্ষণীয়। বলা যায় , মেডিকেল হাসপাতালকে জনমুখী জনকল্যানী মানবসেবার হাসপাতালে পরিনত করার মেডিকেল কোড।

ডাক্তার প্রতিদিন সম্পাদকের কাছে আদিষ্ট হয়ে
আমরা সেসব মূল্যবান পরামর্শ বা কর্মসূত্র এখানে পরিবেশন করলাম।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমেদ-এর কথামালা।


১.

প্রিয় সাংবাদিক বৃন্দ আপনারা হাসপাতাল নিয়ে ভাল বা খারাপ যা কিছুই ঘটে সেটা নিয়ে নিউজ করতে পারেন।কিন্তু এটা অত্যন্ত বিব্রতকর এ ভাবে বলা '' আপনার হাসপাতালের জন্য পজিটিভ নিউজ করেছি।আপনার পক্ষে লিখি।আমার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন"আমার নিজস্ব কোন হাসপাতাল নেই।আমার পক্ষে দয়া করে লিখবেন না।

সকল পেশার একটা নীতিমালা থাকে।সে ভাবেই কাজ করা সবার উচিৎ। ধন্যবাদ।


২.

পত্রিকায় সরকারি কাজে বিজ্ঞাপন দিতে হয়।এটা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে টেলিফোনে বা মেসেঞ্জারে অনাহূত অনুরোধ করা শোভনীয় নয়।

৩.


আমি ব্যক্তিগত ভাবে অফিসিয়াল কাজের প্রয়োজনে হাসপাতালে অনেক সময় আসি না।টেলিফোনে প্রায় সকলেই প্রশ্ন করেন আমি অসুস্থ কিনা।এটা আমার জন্য বিব্রত কর।

সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ মেসেঞ্জারে অপ্রয়োজনীয় বক্তব্য দিবেন না এবং চাকুরী ও আর্থিক সাহায্যের জন্য লিখবেন না।আচরনে সবাই পেশাদারিত্ব বজায় রাখি।
৪.
নির্মল আনন্দের খবর শেয়ার করতে কোন বাধা নেই।

৫.

আল্লাহ আমাকে সাধারন ও অখ্যাত মানুষ বানিয়েছেন। রাস্তায় বেড়ুলে কেউ সালাম দেয় না।কোন অনুষ্ঠান এ বক্তৃতা দিতে হয় না।


৬.
তৃতীয়পক্ষ

ব্যাক্তি জীবন,সামাজিক জীবন, পেশাগত জীবনে তৃতীয় পক্ষ কে অনধিকার চর্চা করতে সুযোগ দিবেন না বা নিজের কষ্ট বা দুঃখ বা অভাবের কথা বলবেন না।ওরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনার পারিবারিক জীবন দূর্বিসহ করে দিবে।

পৃথীবির অধিকাংশ মানুষ ওপিনয়ন বেসড জাজমেন্ট দেয়।এই ওপিনিয়ন বেজড জাজমেন্ট হলো মতামত শুনে রায় দেয়া।কিন্তু এটা প্রানঘাতি। জাজমেন্ট হতে হবে অব্জেক্টিভ বেজড।অব্জেক্টিভ বেজড জাজমেন্ট এর জন্য নিরপেক্ষতা ও জ্ঞানের প্রয়োজন হয়।যা কম মানুষ দিতে পারে।

নিজেদের কষ্ট দুঃখ নিজেদের পরিবার কে নিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করবেন। পারিবারিক সমস্যা, সুখ,দুঃখ, রোগ, শোক খুব মানবিক বন্ধু ছাড়া শেয়ার করবেন না।যারা আপনি যে অবস্থায় থাকেন না কেন সবসময় একই ভাবে দেখে।

৭.


আপনি মানুষ কে সবসময় খুশি করতে পারবেন তখনই যখন তার ন্যায় ও অন্যায় আবদার পূরন করতে পারবেন।

৮.
ভাল কাজ হয়তো কারো চোখে পরে না।কিন্তু সামান্য ত্রুটি কারো চোখ এড়ায় না।

৯.


একটা প্রবাদ আছে, লেনদেন কর অপরিচিতের ন্যায়, ব্যাবহার কর আত্নীয়ের ন্যায়।

১০.
সুশিক্ষা হলো অপ্রয়োজনীয় কথা বা না বুঝে কিছু না বলা।কথা শিখতে দুই বছর লাগে।কিন্তু কোথায় এবং কখন কি বলতে হয় এটা অনেকেই সারা জীবন শিখতে পারে না।

১১.
আমি লোক দেখানোর জন্য কিছু করি না।

আমি গ্রামে বড় হয়েছি।আমি অভাব দেখেছি,শোষন দেখেছি।আমার বাবা এম.বি.বি.এস ডাক্তার ছিলেন।৫০ বছর প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেছেন।১৯৫৮ সালে ২ টাকা থেকে ১৯৯৮ সালে ১০০ টাকায় রোগী দেখেছেন।

ঢাকায় শেষ বয়সে দুটি ফ্লাট কিনেছেন।গাড়ি কিনতে পারেন নি।১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্তু এম পি ছিলেন।আট ভাই বোন কে মানুষ করেছেন।আত্মীয়স্বজন, এলাকায় মানুষকে অনেক সাহায্য করেছেন।সাদামনের সৎ মানুষ ছিলেন।নিজ এলাকাতে শিক্ষা বিস্তারে নিজের সব জমি বিক্রি করেছেন।

ওনার মৃত্যু পরবর্তী জানাযায় লক্ষ লক্ষ লোক শরীক হয়েছেন। এটাই ওনার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।

আমি সেনাবাহিনীতে অফিসার পদে ১৯৮৮ সালে যোগদান করি।সেনাবাহিনীর নিয়ম ও শৃংখলা মেনে সুনামের সাথে এত বছর চাকুরী করেছি।আমি তিনবছর বিদেশ মিশনে চাকুরী করেছি।তাই আর্থিকভাবে অতটা দূর্বল নই।আমি সিভিল সেক্টরে ২ বছর ১১ মাস ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক হিসেবে কাজ করছি।

আমি বিবেক থেকে কাজ করি।খ্যাতির লোভে করি না।দানশীল হিসাবে নিজকে কখনও প্রচার করতে চাই না।এ শহরে আমার কোন আত্নীয় স্বজন নেই।আমার কোন ব্যক্তিগত এজেন্ডা নেই।কোথায়ও যাই না বিতর্কিত হবার ভয়ে।সেনানিবাসে নিভৃতে থাকি একা।আল্লাহই একমাত্র অভিবাবক। পোস্টিং হলে হয়তো ময়মনসিংহ কোন দিন আসব কিনা জানি না!!

আমার কাছে অনেকেই আর্থিক সাহায্যের জন্য আসেন।এ টাকাটা আমার নিজের। এ কথা বলতে দ্বিধা নেই আর্থিক সাহায্য করতে গিয়ে অনেকটা নিজকে ও পরিবারকে বঞ্চিত করেছি সারাজীবন।আমি যেটা কাউকে সাহায্য হিসেবে দেই সেটা সরকারি কোন ফান্ডের না।সরকারি কোন টাকা আমার নিজ ব্যক্তিগত প্রয়োজন এ ব্যায় করি না।

আমার চাকুরী শেষ হলে চাকুরী বা অন্য কোন কাজ করেই সংসার চালাতে হবে। বর্তমানে আমি সাহায্য করার মত অবস্থায় নেই।দয়া করে আমাকে আর বিব্রত করবেন না।মেসেজ দিবেন না।চাকুরি দেবার জন্য বিব্রত করবেন না। সবাই ভাল থাকুন।দোয়া প্রার্থী।

____________________________

ডা. সুস্মিতা সাহা নিকিতা। প্রাক্তন মমেক। সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়