Ameen Qudir

Published:
2018-04-18 16:19:59 BdST

চিকিৎসকদের অসাধ্য সাধন: এক মাথায় দু' দু'বার মুখ বদলে দিলেন



‘ফেস ট্রান্সপ্লাট’ হওয়ার পরে এখন তাঁর ‘তৃতীয়’ মুখ। এর মধ্যে দুবার বদলে দিলেন ডাক্তার। মুখের ত্বক ও মাথার খুলির সঙ্গে সামঞ্জস্য তৈরি হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

ডেস্ক
___________________________

চিকিৎসা বিজ্ঞান সকল জল্পনা কল্পনা উড়িয়ে দিয়ে একের পর এক অসাধ্য সাধন করে চলেছে।
এক মুখ ‘ফেস ট্রান্সপ্লাট’ করে দু দুবা র বদলে দিলেন চিকিৎসকরা।
তিন মাস ধরে ‘মুখহীন’ ছিলেন জেরোমি হ্যামন। ‘মুখ’ দাতার খোঁজ পাওয়ার পর প্যারিসের এক হাসপাতালে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে গত তিন মাস কাটিয়েছেন তিনি।

জানুয়ারিতে ‘ফেস ট্রান্সপ্লাট’ হওয়ার পরে এখন তাঁর ‘তৃতীয়’ মুখ নিয়ে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন জেরোমি। যদিও মুখের ত্বক ও মাথার খুলির সঙ্গে সামঞ্জস্য তৈরি হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

‘‘প্রথমবার মুখ প্রতিস্থাপন করে সঙ্গে সঙ্গে তা মেনে নিয়েছিলাম। আমি ভেবেই নিয়েছিলাম এটাই আমার নতুন মুখ। এটাই মেনে নিতে হবে। এবারও তাই হল,’’ বলছেন জেরোমি।

 

জেরোম হ্যামনের 'তিন মুখের' ছবির সামনে প্রফেসর লাঁতিয়েরি । ছবি এ এফপি




বিবিসি, সহ আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো গর্বের সঙ্গে এই খবরের বয়ানে বলছে,

পৃথিবীতে এই প্রথমবারের মতো এক ব্যক্তির দু'বার মুখমন্ডল প্রতিস্থাপনের অপারেশন হবার পর - তিন মাসের মাথায় জেরোম হ্যামন নামের ওই ব্যক্তি বলছেন, তিনি এখন ভালো বোধ করছেন।
তেতাল্লিশ বছর বয়স্ক মি. ল্যামনের মুখমন্ডল প্রথমবার প্রতিস্থাপন করা হয় ২০১০ সালে। দ্বিতীয়টি করা হয় গত বছর।

প্রথম অপারেশন সফল হয়েছিল কিন্তু ২০১৫ সালে ঠান্ডা লেগে তার সংক্রমণ হবার পর তাকে এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়। কিন্তু তার প্রতিস্থাপিত মুখমন্ডল সেই এন্টিবায়োটিককে গ্রহণ করছিল না- ফলে দেখা দেয় জটিলতা।


প্রথম লক্ষণ দেখা দেয় ২০১৬ সালে, আর গত বছর নভেম্বরে তার প্রতিস্থাপিত মুখে নেক্রোসিস দেখা দেয়, অর্থাৎ সেই মুখের টিস্যুগুলো মরে যেতে থাকে। ফলে তার সেই বসিয়ে দেয়া মুখটিকে কেটে বাদ দিতে হয়।

এর পর শুরু হয় তার মুখে নতুন করে বসানোর জন্য নতুন আরেকটি মুখের সন্ধান।

কিন্তু এমন দাতা পাওয়া যাচ্ছিল না যার মুখমন্ডলকে জেরোমের শরীর 'মেনে নেবে'। এই দু'মাস সময় জেরোমকে 'মুখমন্ডল-বিহীন অবস্থায়' জর্জ পম্পিডু হাসপাতালে একটি কক্ষে থাকতে হয়।

এই সময়টা তার কোন মুখ ছিল না। তিনি কিছু দেখতে পেতেন না, শুনতে পেতেন না বা কোন কথাও বলতে পারতেন না।

এ অবস্থা চলেছে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। সেই মাসেই একজন দাতা পাওয়া যায়, এবং দ্বিতীয় বারের মতো তার মুখমন্ডল প্রতিস্থাপন করা হয়।

 

জেরোমির চিকিৎসক লরেন্ট ল্যানতিয়েরি। ছবি: এএফপি



পর পর দু'বার মুখমন্ডল প্রতিস্থাপনের অপারেশন হয়েছে - পৃথিবীতে এমন একমাত্র ব্যক্তি হচ্ছেন এই জেরোম হ্যামন। এ অপারেশনের আগে বিশেষ চিকিৎসার মাধ্যমে তার রক্ত শোধন করা হয়।

ফরাসী সংবাদ মাধ্যম তার নাম দিয়েছে 'তিন মুখ বিশিষ্ট ব্যক্তি।'

এখন জেরোম হ্যামনের নতুন মুখটি মসৃণ এবং নড়াচড়া করে না। তবে তার মাথার খুলি, চামড়া, এবং চোখমুখ এখনো পুরোপুরি যথাযথ অবস্থানে আসে নি।

তিনি এখনো হাসপাতালে। সেখান থেকেই এক সাক্ষাতকারে তিনি ফরাসী টিভিকে বলেন, তিনি আশাবাদী যে তিনি ভালোভাবেই সেরে উঠবেন।

"আমি আমার নতুন মুখকে মেনে না নিলে তা একটা ভয়াবহ ব্যাপার হতো। এটা আমার পরিচয়ের প্রশ্ন ।তবে যাই বলুন, আমার ভালো লাগছে, এটাই আমি।"

"আমার বয়েস ৪৩। আমার মুখ দাতার বয়েস ছিলো ২২, তাই আমার বয়েসও এখন ২২।"

অপারেশনটি করেছেন যে ডাক্তার সেই অধ্যাপক লরাঁ লাঁতিয়েরি বলেন, এখন আমরা জানি যে দু দুবার মুখ প্রতিস্থাপন সম্ভব - এটা এখন আর কোন গবেষণার ব্যাপার নয়।

তবে যার মুখে এই অপারেশন হয়েছে তার এই পুরো ব্যাপারটা সহ্য করার যে সাহস - তা সত্যি অসাধারণ, বলেন তিনি।

উত্তর ফ্রান্সেই প্রথম মুখমন্ডল প্রতিস্থাপন অপারেশন হয়েছিল ২০০৫ সালে। এর পর বিশ্বের নানা দেশে প্রায় ৪০টি এমন অপারেশন হয়েছে।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়