Ameen Qudir

Published:
2018-04-16 18:00:09 BdST

"দারোগা সাব,আপনি আমারে বাচান"


ছবিটি প্রতিকী। মডেল একজন অভিনয় শিল্পী।

 


ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন
_______________________________

বলেই হু হু করে কেদে দিলো সামনে বসা উনিশ কুড়ি বয়সের মেয়েটা।কিছুটা বিরক্ত হয়েই তাকালেন ইন্সপেক্টর মিজান।এই মানুষগুলো পুলিশ মানেই বুঝে-দারোগা।আরে ভাই দারোগা ছাড়া কি আর পুলিশে কোন পোস্ট নাই?এতো বছর পর এই থানার ওসি হয়েছেন,এখন আর তার "দারোগা সাব" শব্দটা শুনতে ভাল্লাগে না।
আর এই বয়সী মেয়েরা আসেও উদ্ভট সব সমস্যা নিয়ে।এইসব হাবিজাবি ঝামেলা যে তারা কই পায়,কে জানে।পরনের কাপড় দেখে তো মনে হয় না অবস্থাসম্পন্ন ঘরের মেয়ে,এ আবার কি ঝামেলা পাকিয়ে এসেছে কে জানে?

গলাটা খাকড়ি দিয়ে একটু গম্ভীর করে জানতে চাইলেন,
'কি সমস্যা?'
"স্যার আমারে এক ব্যাডা রোজ ডিস্টার্ব দেয়।আমি একটা ফ্যাক্টরিতে কাম করি,ছুটি হয় রাইত সাতটা আটটায়।গত সাত আষ্ট দিন ধইরা ওই ব্যাডা আমার ফ্যাক্টরির সামনে আইসা খাড়াইয়া থাকে।আমি বাইর হইলে পরে আমার পিছন পিছন আসে।আবার বাসায় ঢুকার লগে লগে উধাও হইয়া যায়।আমার খুব ডর লাগতেসে স্যার।"
'বয়স কতো?কিছু বলে তোমারে?বা কিছু করার চেষ্টা করে?'
"না স্যার,আমারে দেখলে মাথাডা নিচু কইরা থাকে।কিছু কয় না,শুধু পিছন পিছন হাডে
আমি তো একা যাই না স্যার,লগে আরো দুইডা মাইয়া থাকে।তবু ভয় লাগে স্যার।আর বয়স কতো হইবো?চব্বিশ পঁচিশ হইবো আর কি।"
'এমন তো হতে পারে সে অন্য কোন মেয়ের পিছনে পড়সে,তুমি কেমনে বুঝলা সে তোমারই পিছু নিসে?আর তুমি এইটা তোমার ফ্যাক্টরির গার্ডদের কইতে পারো না?কিংবা তোমার সাথে যেইসব ছেলে কাজ করে,তাদের?তাইলে তো তারা ওই ছেলেকে ধরে একটা ব্যবস্থা করতো।'
"না স্যার,আমি বাড়ি ঢুকনের লগে লগে ফেরত যায়,আমার সাথের মাইয়া দুইডা কইসে আমারে।"
হঠাৎ লজ্জা পায় মেয়েটা।একটু মাথা নিচু করে লজ্জা পাওয়া গলায় বলে,
"স্যার,আমার একজন ভালোবাসার মানুষ আছে,তারে সব কইসি।সে আমারে কইসে ফ্যাক্টরির কোন ব্যাডা মাইনষের সাথে কথা না কইতে।আমারে অনেক ভালোবাসে তো,আমি কারো সাথে কথা কইলে তার সইয্য হয় না।তাই আমিও কই না স্যার।সে ই কইসে থানায় যাইয়া কইতে।আমি খুব বিপদে পইড়া আইসি স্যার।আমারে বাচান।"

আচ্ছা বিপদে পড়া গেলো।কি করি এখন এইটারে নিয়া।সিদ্ধান্ত নিলেন,নিজে না যেয়ে কাউকে পাঠিয়ে দেবেন সেখানে।মেয়েটাকে সেইমতো বলে সেদিনের মতো বিদায় দিলেন।

পরের রাত।৮:৪৫ মিনিট।মিজান সাহেব চোখ বন্ধ করে দোল খাচ্ছেন।সামনে সেই ছেলেটি বসা,ঘন্টা খানিক আগে তাকে ধরে আনা হয়েছে মেয়েটির ফ্যাক্টরির সামনে থেকে।কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিজান সাহেবের দিকে।পুলিশ ধরে আনার পরেও তেমন ঘাবড়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে না।আগে থেকেই থানা পুলিশ করে অভ্যাস আছে নাকি?নাকি জানতোই যে পুলিশের কাছে যেতে হবে কোন না কোন দিন?

'কি নাম?'
"সাহেব আলি।"
'থাকো কোথায়?'
"পাশের পাড়াতেই।মাস্টার বাড়ির পাশের বাড়িটাই আমাদের।"
'তুমি জানো কেন তোমাকে ধরে আনা হইসে?'
"জানি তো।"
চোখ মেলে সামনে এগিয়ে আসলেন মিজান।চোখ সরু করে বললেন,
'কি জানো?'
"আমাকে ধরে নিয়ে আসছেন কারণটা খুব সম্ভব আমি রাহেলার পিছনে পিছনে রোজ ওর বাড়ির ফেরার পথটুকু যাই,সেই জন্য।তাই না স্যার?"
'বাহ,ভালোই তো জানো।আর কি জানো?এইটা জানো যে তোমাকে এই জন্য নারী নির্যাতন মামলায় হাজতে ভরে দিতে পারি?রুলারের ডলা দিয়ে তোমার পেটের নাড়িভুঁড়ি বাইরে বের করে আনতে পারি?'
চোখে চোখ রেখে জবাব দিলো সাহেব আলি,
"জানি।জেনেই আসছি।আমি না আসলে আমার আনার সাধ্য আপনার ছিলো না ওসি সাহেব,এইটা কি আপনি জানেন?"

কথা শুনে তব্দা মেরে গেলেন মিজান।কি কয় এই ছেলে?কই পুলিশে ধরেছে,ভয়ে প্রসাব করে দিবে,তা না উল্টো তার চোখে চোখ রেখে বড় বড় বাতচিত করেই যাচ্ছে?ঘটনা কি?কোন রাঘব বোয়াল না তো?কিন্তু তেমন হলে একটা গার্মেন্টসের মেয়ের পিছনে এমন ঘুরঘুর করবে কেন?
তবু তিনি পুলিশ।এই লাইনে তো আর কম দিন হলো না,গলা বাঘের মতো হিংস্র করে বললেন,
'ব্যাটা মামদোবাজি করার জায়গা পাও না?তোকে আনার সাধ্য আমার নাই?দেখি কতক্ষণ তোর এই গলাবাজি থাকে।সেন্ট্রি,এরে লক আপে ঢুকাও।'
"দাড়ান স্যার দাড়ান।আপনি জানেন আমি কে?আমি নজর আলি চেয়ারম্যানের বড় ছেলে।এইটুকু বিশ্বাস করেন যে আমি মেয়েটার কোন ক্ষতি করার জন্য তার পিছু নিতাম না।"

শিরদাঁড়া সোজা করে বসলেন মিজান।এবার একেবারে তুই থেকে আপনিতে।
'আপনি এতো ভালো পরিবারের ছেলে,তো এমন করতেছেন কেন?দুনিয়াতে সুন্দর আর ভালো ঘরের মেয়ের কি অভাব পরছে যে আপনাকে এর পিছনে ঘরতে হবে?'
"ওসি সাহেব,আপনি ভুল বুঝতেসেন আমাকে।আমি এই মেয়েকে পছন্দ করি না,ভালোবাসা তো অনেক পরের ব্যাপার।এই মেয়ে একজনের সাথে প্রেম করে,নাম রঞ্জু।এই রঞ্জু আমার এলাকার বন্ধু।সারাদিন নেশাভাং করে,আর মেয়েদের সাথে লুচ্চামি।এই রঞ্জু এই মেয়েটারে বিপদে ফেলবার ধান্দা করতেসে।আমার কাছে এসে আমাদের বাজারের ঘরের চাবি চাইলো একদিন।ওরে তো আমি চিনি,ধান্দা খারাপ বুঝতে পারছি তখনই।তাই চাবি দিয়ে একটু খাতির করে একটু জোর করতেই সব বলে দিলো।এমনকি ছবিও দেখালো মোবাইলে।প্রেম করেছে এতোদিন,এখন শুধু বিছানায় তোলার অপেক্ষা।সরাসরি বললে তো আর যাবে না,তাই কোন রকমে একবার ফুসলিয়ে নিয়ে ঘরে ঢুকাতে পারলেই চলে,উদ্দেশ্য সফল।এইজন্যই রাহেলাকে সাবধান করার জন্য ওর ফ্যাক্টরির সামনে অপেক্ষা করতাম।কিন্তু মেয়েটা একা যেতো না,তাই বলার সুযোগ পাইনি।"
'আপনি আপনার বন্ধুকে বুঝিয়ে মানা করতে পারতেন,তাকে চাবিই বা দিলেন কেন?'
"দেখেন,আমি তো ওকে চিনি,ও বোঝার মানুষ না।ওর এই ইতিহাস নতুন না,আর আমি চাবি না দিনে অন্য কাউকে ও ঠিক ম্যানেজ করে নিতো।আমি চাইনি একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হোক।ওসি সাহেব,আজ কয় তারিখ বলেন তো?১৩ ই এপ্রিল,তাই না?আমাকে বলেছিলো,পহেলা বৈশাখেই মেয়েটার সাথে দেখা করবে।কালকেই ওই রঞ্জুর মেয়েটার সাথে দেখা করার কথা।সেই জন্যই আমি আজ শেষ চেষ্টা হিসেবে মেয়েটার সাথে কথা বলার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম।আমি আর কি করতে পারতাম বলেন?"
'অনেক করেছেন আপনি।এবার যা করার আমরা করছি।মেয়েটার ফোন নাম্বার রেখে দিয়েছি আমি।বাকি যা করার আমি করছি।অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।আজকাল আপনার মতো কয়জন ভাবে?উল্টো এসব কাজের সঙ্গী হতে চায়,আর সেখানে আপনি মেয়েটাকে একটা সর্বনাশের হাত থেকে বাচালেন।'

পরের কাহিনী সংক্ষিপ্ত।মিজান সাহেব সেদিন রাতেই মেয়েটিকে ডেকে সব খুলে বলে রঞ্জুর জন্য ফাদ পাতেন।মেয়েটিকে সব বলতেই মেয়েটির সে কি কান্না।কিছুতেই তাকে বিশ্বাস করানো যাচ্ছিলো না।তবুও শেষ পর্যন্ত সে রাজি হয়।

এবং অবশেষে ধরা পড়ে রঞ্জু।বাজারের সেই ঘরেই,রাহেলার সাথে জোরাজুরি করার সময় মিজান সাহেব তার ফোর্স নিয়ে হানা দেন।হাতে হ্যান্ডকাফ আর কোমরে দড়ি পড়িয়ে নিয়ে যান থানায়।পেছনে পড়ে থাকে দুই হাতে মুখ চেপে কাদতে থাকা রাহেলা,তার সেই কান্না বিশ্বাস ভঙ্গের বেদনায়,নাকি আসন্ন বিপদের থেকে মুক্তির আনন্দে,কে জানে....।
_______________________________

ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন, ঢাকা। সাবেক শিক্ষার্থী ; শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ,০২ ব্যাচ।

 

 

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়