Ameen Qudir

Published:
2018-03-10 17:48:29 BdST

হিমাচলের ছিটকুল : স্বর্গ যেন মাটির পৃথিবীতে




ডা. সোহানা
______________________

হিমাচলের ছিটকুল Chitkul: স্বর্গ যেন মাটির পৃথিবীতে । ৩৪৫০ মিটার উঁচুতে ভারত-তিব্বত সীমান্তে শেষ গ্রাম । যখন সেখানে গেলাম, মনে হল সেই কবিতা :" কোথায় স্বর্গ , কোথায় নরক "; অামাদের এই মাটির পৃথিবীতেই স্বর্গ আছে; দূরে কোথাও নয়।
হিমাচল তো এমনিতেই সুন্দরের রাজ্য। সিমলা , মানালি ভ্রমণ করতেই এসেছিলাম। থাকাও হল কয়েকটা দিন। তারপর ট্যুর গাইড বললে; ছিটকুল যাবেন নাকি ।
ছবিও দেখাল । দেখে মুগ্ধ হলাম। জানতে চাইলাম, খরচ কেমন ! বলল, কুলু মানালির তুলনায় কিছুই নয়। স্বর্গ এখানে বড়ই সস্তা। অল্প কিছু খরচ করলেই ভারতবর্ষ জুড়ে অনেক স্বর্গতুল্য জায়গায় থাকা যায়। ছিৎকুল বা ছিটকুল তেমন স্পট।
ছুটলাম স্বর্গের পাহাড়ি সিঁড়ি ধরে। কী সুন্দর রাস্তা।

পাইনের জঙ্গল চিরে নিজের ছন্দে এগিয়ে চলেছে সেখানে পাহাড়ী নদী। দূরে দেখা যায় নী লা গিরিশৃঙ্গ। সাংলা থেকে বেশ কাছে এই ছোট্ট গ্রামটি। রকছাম হয়ে যেতে হয় ছিটকুলে।

সাংলা থেকে দূরত্ব মোটামুটি ২৪ কিলোমিটার।

সাংলা থেকে ছিটকুল যাওয়ার রাস্তা অত্যন্ত মনোরম। সরু হলেও অবস্থা বেশ মোটামুটি। ধুলোবালির লেশ মাত্র নেই। কখনও চোখের সামনে ফুটে উঠবে মনোরম প্রকৃতির ক্যানভাস, কখনও আবার বোল্ডার, পাথরে ঘেরা রুক্ষ, শুষ্ক রাস্তা।
ছিটকুলে প্রকৃতি উদার। জনবসতি কম। বসপা নদীর জন্মও এই নী-লা থেকে। নী-লার এপারে ভারত আর ওপারে তিব্বত ।
ছিটকুলের মানুষেরা দেবী মাথিকে খুব মানেন। হিন্দুতত্ত্ব এবং বৌদ্ধমত মেনেই এখানে মন্দিরও আছে দেবী মাথির। কাঠ আর কাঠের প্ল্যাঙ্ক দিয়ে তৈরি এই মন্দির কিন্নরী স্থাপত্যশিল্পের অনন্য নিদর্শন। মন্দিরের গায়ে কাঠের কারুকাজ অামাদের মুগ্ধ করল। পাহাড়ের মধ্যে এরকম মন্দির থাকতে পারে, নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। বেশ কিছুটা উপরে উঠে ছোট মনাস্ট্রি দেখতে পাবেন। দরজার দু’পাশে লাইপ মন্ডলার চাকা সাজানো। ।

মনাস্ট্রি ঘুরে লাঞ্চ সেরে নিলাম।সুস্বাদু খাবার। দুপুর গড়িয়ে আসতেই ঠান্ডা বাড়ে ছিটকুলে। পায়ে পায়ে ঘুরে আসুন বসপা নদীর ধারে। জল বেশ ঠান্ডা।ছোট ছোট নুড়ি, পাথরে ভরতি রিভারবেড। কিছু বড় পাথরও আছে। পিঠ ঠেকিয়ে দিব্যি বসা যায়।
নদীর কাছেই আছে ছিটকুলের একমাত্র পাঠশালা। পাহাড়ে সন্ধে ঝুপ করে নেমে আসে। তাই আলো থাকতে থাকতে ফিরলাম হোটেলে।ছিটকুলের বেশিরভাগ হোটেলই একটু উপরের দিকে। প্রকৃতিপ্রেমীদের পাগল করার জন্যে যথেষ্ট। মনে হয় এতো বাস্তব নয়, ইজ়েলে আকা কোনও শিল্পীর ছবি। একদিকে তুষারাবৃত পাহাড়, অন্যদিকে রূপসী বসপা। স্বপ্নের মতো সুন্দর অথচ কী বাঙ্ময়। চোখে ঘোর লেগে যায়!

ছিটকুলের আলু খুব প্রসিদ্ধ। দাম একটু বেশি। খেতে দারুণ। ছিটকুলে খাওয়ার খুব একটা বেশি জায়গা নেই। বাসস্ট্যান্ডের কাছে নতুন রেস্তরাঁটি খাওয়ার জন্যে ভাল। মালিকও খুব আন্তরিক। দোকানের বড় বড় জানলা দিয়ে বাইরের প্যানোরামিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

দোকানপাঠ খুব একটা বেশি নেই ছিটকুলে। স্থানীয়দের থেকে কিনতে পারেন কিন্নরী শাল।

যাতায়াত : ঢাকা থেকে কলকাতা।
কলকাতা থেকে ট্রেনে কালকা, সেখান থেকে সিমলা হয়ে গাড়িতে ছিটকুল আসা যায়। মাঝে সাংলা ভ্যালিতে নাইট স্টে করতে পারেন। সাংলা থেকে ৪৫ মিনিটের রাস্তা ছিটকুল।
স্টে হোম ______বা হোম স্টে
আমরা ঢাকা থেকে বাসে করে গেছি আগরতলা। সেখান থেকে বিমানে দিল্লি। খুব সাশ্রয়ী। ভাড়া খরচ খুবই কম পড়ে। সে হিসেব আরেকদিন দেব। থেকেছি সামা রিসোর্টে। ভীষণ সুন্দর।

সামা রিসর্ট। ডাবল বেডরুম ১৮০০রুপি থেকে শুরু। যোগাযোগ: ০৯৮৯২০৯৮৯৬২। ইমেল: [email protected].। ওয়েবসাইট: https://samaaresorts.com/
এছাড়া আরও সস্তা পাঞ্চালি রিসর্ট। ডাবল বেডরুম ১৬০০ রুপি থেকে শুরু। যোগাযোগ: ০৯৮০৫৬৪৯৫০৫
এখানে কিছু তথ্য অনলাইন ঘেঁটে লিখলাম।


ডা. সোহানা । ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:


ভ্রমণ এর জনপ্রিয়