Ameen Qudir

Published:
2019-04-30 20:16:53 BdST

চিকিৎসক সমাজের কাছে একটু " স্পিন" করার প্রস্তাব করছি




 

ডা. অসিত বর্দ্ধন
_________________________

ইংরেজিতে একটা কথা এখন প্রচলিত আছে " স্পিন" নামে। রাজনীতিতে এর প্রকোপ সব চাইতে বেশি। এর অর্থ হছে সুকৌশলে খারাপ খবরকেও ভালো খবর বা পজিটিভ নিউজ হিসেবে প্রচার করা।

বিক্ষুব্ধ ডাক্তারগণ মানুন আর না মানুন , মাশরাফি সাহেবের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষ তার আচরণে সন্তুষ্ট, ডাক্তারদের উপর ক্ষিপ্ত। এজন্য আমার প্রস্তাব একটু " স্পিন" করার।

নড়াইল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এম পি সাহেবের সাথে একটি মত বিনিময় সভায় বসুক। বর্তমান সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করে , কিভাবে সমস্ত চিকিৎসক পদে পদায়ন করা যায়, এর একটা পরিকল্পনা প্রকাশ করুক।

এর পরে সাংবাদিক সম্মেলনে মাশরাফি সাহেব বলুন, যে তিনি দেখেছেন অন্য যে ডাক্তারেরা উপস্থিত আছেন, তারা কি পরিশ্রম করেন, কত রোগী দেখছেন, সপ্তাহে কত ঘণ্টা ডিউটি করেছেন, ইত্যাদি। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় তিনি কিভাবে অবদান রাখতে চান , তা তুলে ধরবেন। এরপরে তিনি নড়াইল হাসপাতালে ডাক্তারদের পদায়নের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করবেন , চিকিৎসক নেতাদের সাথে নিয়ে। সেখানে স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানাবেন কেন ২৭ জনের মধ্যে মাত্র ৭ জনের পদায়ন আছে। এই সমস্ত তথ্য তুলে ধরে আমাদের চিকিৎসকনেতা গণ বলবেন তারা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পজিটিভ অবদানের জন্য মাশ রাফি সাহেবের প্রশংসা করছেন, সেই সাথে সরকারকে অনুরধ করবেন, কমপক্ষে সব জেলা হাসপাতালে সকল পদে পদায়ন করার জন্য। এ সবটা হোক লাইভ , ওঠাত সাংবাদিক ও তিভি চ্যানলের সামনে
আমি হয়ত গুছিয়ে লিখতে পারিনি। মুল কথা হল, মাশ রাফি সাহেবের যে ওজন তা আমাদের পক্ষে ব্যবহার করা। আমাদের নেতারা কি এই স্পিনটুকু পারবেন?
২.

কর্মস্থলে অনুপস্থিতিঃ অতীতের রেকর্ড
আমরা যারা পেরিফেরাল মেডিকেল কলেজে পড়েছি তারা ডাক্তার অনুপস্থিতি দেখতে অভ্যস্ত ছিলাম। আমাদের অনেক অধ্যাপক ছিলেন স্থানীয়, অর্থাৎ সেই শহরেই থাকতেন।

কিছু অধ্যাপক ছিলেন মৌসুমি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজে তাদের পদায়ন বজায় রাখার জন্য একটা বদলি নাটকের প্রয়োজন যত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই নাটক মঞ্চস্থ হোতো ময়মনসিংহে, কারণ ঢাকা থেকে যাতায়াতের সুবিধা। আর হোতো সেসব মেডিকেলে যেখানে এয়ারপর্ট আছে। তাই রাজশাহীতেও কারো কারো পদায়ন হোতো।

উনারা আসতেন, সব বড় বড় নাম, সপ্তাহে একদিন। সকালের প্লেনে এসে একটা ক্লাস নিতেন, অপারেশনের ডেট থাকলে ওটিতে একটু ঢু দিতেন, পরব্বর্তি ফ্লাইটে ঢাকা। তাদের ঢাকার প্রাকটিস বজায় থাকতো, থাকতো রাজশাহীর পদায়ন। কোনও প্রিন্সিপালের সাহস ছিলনা যে বলেন এটা ঠিক হচ্ছে না। এত বড় নাম মেডিকেলে আছেন, তাতে কর্তৃপক্ষ খুশি ওই শিক্ষকের ১ দিন উপস্থিতির বদান্যতায়! । আর উনি খুশি আমাদের করুণা করতে পেরে। ধীরে ধীরে এটাই নর্ম হয়ে গেল। সরকার বদলালে যে ঢালাও বদলি হোতো, সেই বদলিরাও এভাবেই যাওয়া আসা করতেন। একটু দুর্গম জেলা হাসপাতালের কনসাল্টেন্ট ও এরকম দয়া দেখাতেন। এখনো দেখান।
সরকারি মেডিকেল কলজের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে এখন পদায়ন এভাবেই হয়। অনেক হাসপাতালে সার্জন বা মেডিসিন কনসাল্টেন্ট না থাকলে যারা স্থানীয় প্রাকটিস করেন তারা খুশি হন, কারণ প্রাকটিস!
আমরা চিকিৎসকেরা এভাবে ধীরে ধীরে নৈতিকতা বিবর্জিত একটা সিস্টেম তৈরি করেছি, যেখানে আমাদের আরোপিত এই ব্যবহার জায়জ হয়ে উঠেছে। আমরা যে প্রশাসন ক্যাডারকে উঠতে বসতে গালি দেই, তাদের কেউই কর্মস্থলে সপ্তাহে ২-৩ দিন থাকেন না আমাদের মত। নব্বই এর দশকে আমি চাকরি ছাড়ার আগে পর্জন্ত দেখিনি যে সব THFPO কর্মস্থলে সপ্তাহের ৭ দিন থাকেন।
সুতরাং স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রশাসনিক ও ক্লিনিকাল দুই বিষয়েই অনুপস্থিতি একটা মহামারি। এমনকি অফিস সময় পালনের ক্ষেত্রেও জবাবদিহিতা নেই। এই মন্তব্য ঢালাও সবার জন্য নয়, কিন্তু বেশিভাগ পদস্থ কর্মকরতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। শুধুমাত্র অব্যবস্থাপনা বা স্বল্প জনশক্তির ধুয়া তুলে এটা ঢাকা যাবেনা।
মাশরাফি এপিসোড আমাদের আন প্রফেশানালিজম তুলে ধরেছে। এখানে উচ্চকণ্ঠ আমাদের জুনিয়র ডাক্তারেরা , আর সিনিয়রের ভাতঘুমে আছেন।
সামগ্রিকভাবে নিজেদের না বদলালে আমাদের কপালে আরও অনেক দুর্ভোগ আছে ভবিষ্যতে!
__________________________

ডা. অসিত বর্দ্ধন । পাঠক ধন্য সুলেখক। তার তৈরী করা অ্যাপস ডাক্তারদের কল্যাণে এখন জনপ্রিয়।
কানাডায় কর্মরত এনেস্থেসিওলজিস্ট, BDEMR নামের সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা।

আপনার মতামত দিন:


খেলা এর জনপ্রিয়