Ameen Qudir
Published:2018-12-23 22:54:31 BdST
এক গুচ্ছ সেরা কবিতাপেশাজীবিদের একগুচ্ছ অসাধারণ কবিতা
মনে পড়ে পতাকায়
জিয়া সাঈদ
------------------------
পতাকা উড়ালেই দেখি
ছেঁড়া খোঁড়া শাড়িগুলি ওড়ে-
ওড়ে দূর ধূসর আকাশে
মনে আসে রক্তনদীময় মানচিত্র ।
যখনি পতাকা ওড়ে
জল-জঙ্গলের রাত্রিগুলি মনে পড়ে
মনে নেই ? দিনে দিনে দীর্ঘ
অনিকেতের মিছিলগুলি
খোলা আকাশের নিচে পাইপের সারি,
সারি সারি আবদ্ধ জীবন
অবিরাম কীট-পতঙ্গের সঙ্গে বসবাস-
মনে নেই ? একবেলা অন্ন,
নূন্যতম একটু আব্রুর জন্য অধীর অপেক্ষা,
শুস্ক স্তন চাটা শীর্ণ শিশুদের মুখগুলি-
মনে নেই ?
মনে পড়ে খুব পড়ে সেই বজ্রধ্বনি
পতাকা উড়ালেই সেই অমোঘ তর্জনী
উদ্যানে সমুদ্রের উত্থান মনে পড়ে
মনে আসে হায়েনা তাড়ানো
সেই অবিরাম অভিযান
গোপেঘাপে সূচিত অ্যাম্বুশ
অতঃপর....
অবরুদ্ধ স্বজন স্বদেশ
স্বপ্নের উদ্ধারে
বাংকার থেকে বাংকারে
দিন রাত্রি ক্ষুধা মৃত্যু ভুলে
ট্রিগার টিপে যাওয়া
সেই সোনালী আঙ্গুলগুলি- কীভাবে ভুলি
কালো হাতগুলিই বা ভুলি কী করে
বসিলার বিলের দিকে তাকালেই তো
কালো হাতে নেভানো বাতিঘরগুলোর কথা মনে পড়ে
পতাকা উড়ালেই মনে পড়ে
স্মৃতিসৌধ জুড়ে
লোকান্তরিত কোন নক্ষত্রদের ছায়া পড়ে....
হে কঠিন, কপটতা
জিয়া সাঈদ
------------------------
ফুলের নামে পাথর দেখি
তবু পাথরে পাথর ঘষে
কোনদিন জ্বালিনি আগুন
নিরাময়ী ঘাস, গুল্মের রকম ভেবে
কোনো কোনো বুকে
মুখ ঘষে ঘষে দুঃখ মুছে নিতে গিয়ে
ছিঁলে গেছে মুখ, রক্তাক্ত হয়েছে দুঃখ
চুপে চেপে গেছি
সময়ের কাছে শুকাতে দিয়েছি ক্ষত
সময় বলেছে- সহো, অপেক্ষায় থাকো....
জেনে রাখো দুঃখ- হে কঠিন, কপটতা
আমি অপেক্ষায় আছি....
#কবি জিয়া সাঈদ । পেশায় চিকিৎসক ।
ওজন
ভাস্কর সাহা
----------------------------
আমার ওজন কই?
পাল্লার হেলদোল দেখি ভাবি সময় কি ফুরিয়ে এলো?
কচি ঘাসের বুকে পোকার কামড়; মাছরাঙার ঘোলা চোখে জাবর অস্থির!
দিনগুলি রাতের মতোন, রাতগুলো বাদামী দেয়াল বেয়ে নেমে গেছে জলে
সূর্যের উচ্চতা নিয়ে সংশয় আজ
ওহে, একর্ষি পুরুষ! জ্বলজ্বলে আলো দেখে ভেবেছো ভ্রমণ?
পায়ে হেঁটে কাছে এলে বীক্ষণ সময় অভেদের কাছেই থাকবে পরে এই জঞ্জাল পাথর।
যদি হইতি
ভাস্কর সাহা
---------------------
বৃক্ষ যদি হইতিরে তুই
আমি হইতাম ছায়া
পাখি হইয়া আইতাম রে তোর
ভাঙতে চোখের মায়া।
হইতি যদি আগুনমুখা
আমি হইতাম জল
কলকলাইয়া ছুঁইতাম তোরে
ছুঁইতাম বনাঞ্চল।
আয় তুই হইয়া নেশার বাত্তি
নিশি রাইতের তারা
পিরিত হইবো সোমান সোমান
আসমান জমিন খাঁড়া।
আইলি না রে, আইলি না তুই
বিফল হইলো ছাতা
জলে জলে লেইখ্খা দিলাম
না বলা কবিতা
প্রেম প্রতীক্ষা
ভাস্কর সাহা
------------------------
পথের কাছে পথ পড়ে রয়
মনের কাছে মন
জলের ছলে জল ভেসে যায়
কোথায় শুভক্ষণ?
ফুলের কাছে ফুল শুয়ে রয়
পাখির কাছে গান
ভ্রমর ডানায় সুরের আলাপ
শোনায় মন্ত্রবাণ।
হাওয়ায় হাওয়ায় মেঘ ফুঁড়ে হায়
কাঁদছে দিঘির জল
কোন ধুলোর ঐ গন্ধে ব্যাকুল
প্রেমিক মনের তল!
আলাপ বিলাপ সবই বিফল
বিফল দৃষ্টি পথ
চিরদিনের চেনা আকাশ
হবে - উল্টোরথ?
প্রেমের পরশ পেতে যদি
ডাকতে নিশি ডোরে
প্রতীক্ষার এই সাগর সেচে
দিতাম মুক্তো হীরে।
#কবি ভাস্কর সাহা । পেশায় চিকিৎসক।
আমি সেই ব্যর্থ অভিলাষ
মামুন নেসার
_______________________
·
আমি সেই ব্যর্থ অভিলাষ,
পুরনো জীর্ন জামার পকেট থেকে, একটা স্বপ্ন নিয়ে
চরে বেরিয়েছি এতকাল, বৃষ্টি নামবে ভেবেছি
সেই বৃষ্টিতে ভিজে একসা তোমাকে,
রাত করে বাড়ি ফিরতে না বলে বলবো,
রয়ে যাও, তুমি থেকে যাবে জন্ম জন্মান্তর
আমাদের ঘর, ছিমছাম দু’রুম, অবশ্যই একটি বারান্দা,
যেখান থেকে চাদ দেখা যায়।
অথচ আমার কি আছে দেখো, সিগারেটের তৃষ্ণা বাচিয়ে কেনা
বিবর্ণ জলপাই রং এর টিকিট-
তোমার ফেলে যাওয়া ভাঙা রেশমি চুড়ি
আর টিস্যু, তাতে কমদামী লিপিস্টিকের কড়া দাগ-
আাম পাহাড় দেখিনি। তবে পাহাড়ে জোছনায় ভিজবার ইচ্ছে ছিলো।
আমি সমুদ্র দেখিনি, তবে ভরা জোয়ারে
ঠিক মধ্যরাতে তোমার সাথে ভেসে যেতে খুব ইচ্ছে ছিলো,
কল্পনায় যে ইচ্ছের নৌকাগুলো আমি ভাসিয়ে রেখেছি
এতকাল
পূর্ন জোছনায় চোখ বুজে থেকেছি পিপাসায়,
দুঃস্বপ্নের খিলানে উঠে চেচিয়েছি- আমি যাবো,
তারপরও যাবো। আমার যাওয়া হয়নি।
পাটাতন ফুটো হয়ে জল জমে জমে নৌকা ডুবে গেছে।
বৃষ্টি নামেনি। দুঃস্বপ্নের অসীম নিলামে আমার সসীম স্বপ্নগুলো
ধীরে ধীরে ঝরে গেছে।
বাশ বাগানের মাথার উপর উঠছে দেখে চাঁদ
কন্যা তোমার জোছনা রাতে হয় যদিবা সাধ
ভিজবে ভেবে পালিয়ে এসে দেখলে ভাঙা ঘর
ঘরের পাশেই আরশী নগর- তবু পড়শী হলো পর।
পড়শী থাকে ঘরের ভেতর, জোছনা ঝরে না
সেথা শুধু আজ অমাবস্যা, একাকীত্বের হানা
একলা আমি পোড়োবাড়ীময়, ডানা ভাঙা এক পাখী
যাওয়ার পথে জোছনা দেখে লুকিয়ে আমি থাকি।
ঘুম আসে না রাত কেটে যায় বিষ শুষে নিঃশ্বাসে,
নেশায় নাচন, ঘোর লাগা চোখে, পড়শী শুধুই হাসে।
পড়শী আমার সোনার বরন, কথায় কথায় হাসে
হাসির মূল্য কোটি কোটি টাকা, বাকী দিতে ভালবাসে।
আমার দু’চোখ যতদূরে যায়,
নগরীর প্রতিটি দেয়াল থেকে প্রতিটি প্রকোষ্ঠে, স্বপ্ন থেকে দুঃস্বপ্নে, স্মৃতি থেকে তাড়নায়, বিকারে
আমার দীর্ঘশ্বাসগুলো ঘড়ির পেন্ডুলামের মত দোল খেতে খেতে
আমাকে আকড়ে রাখে,
ছুড়ে দেয় এক ভয়ংকর অতল খাদে,
বিভৎস সব কল্পনার মূর্ত গুহাচিত্রে-
আমি নিজেকে খুজে বেড়াতে থাকি।
শরীরের প্রতিটি রোমকূপে বিলীন পিপাসায়,
ক্ষয়ে যায় আমার দ্বিধা, প্রাপ্তি, অস্তিত্ব- আমার পুরুষজন্ম।
তোমার নরম ত্বকে আমি আশাভঙ্গের নীল ক্ষতচিহ্নগুলো
পরিস্কার দেখতে পেয়ে কেপে উঠি।
এক দিনের পর আরেক দিন। এক ঘরের পর আরেক ঘর।
এক শহরের পর আরেক শহর।
আমি সবকিছু ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলি
গন্তব্য, ইচ্ছা, ঠিকানা-
এমনকি তোমার ঠিকানা।
# কবি মামুন নেসার । পেশায় স্থাপত্য শিল্পী ।
আপনার মতামত দিন: