Ameen Qudir

Published:
2016-12-16 15:31:46 BdST

আহা! যদি ৫০ হাজার টাকা দেবার ক্ষমতা থাকতো!


এটি একটি স্বপ্নপূরণের স্কুলের ছবি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন লাল সবুজের অক্ষরে।

 

 

ডা. খায়রুল ইসলাম
_________________________


ধর্মেও বলে এবং সৌজন্য ও ভদ্রতার যে আবহে বেড়ে উঠেছি তাতে এই লেখাটার কিছু অংশ না লেখাই সমীচিন হতো। কিন্তু আজ আমার ভীষণ ভালো লাগছে; এক ধরনের স্বস্তি পাচ্ছি; আমার অনেক দিনের সলজ্জ একটা সাধ পূরন হয়েছে যদিও দায় মাত্র শুরু হলো।
একটু খোলাসা করে বলি।
১৯৯৫-৯৬ সালের কথা। আমি তখন গ্রামীন ট্রাস্টে কাজ করি। আগের চাকরি থেকে বিদায় নেয়ার সময় যে টাকা পয়সা পেয়েছিলাম, বৈষয়িক হলে তা দিয়ে ঢাকা শহরের উপকন্ঠে জমি জমা করা যেত; কিন্তু আমি তা রেখে দিয়েছিলাম প্রতি মাসে বেতনে ভর্তুকি দেয়ার জন্য। কারন, গ্রামীন ট্রাস্টে যোগ দিয়েছিলাম আগের চাকরির তুলনায় প্রায় অর্ধেক বেতনে।
সে সময় গ্রামীন ব্যাংকে খালেদ শামস উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে কর্মরত। মানুষ হিসাবে তিনি দেবতুল্য। সেই আমলে সরকারের যুগ্মসচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করে গ্রামীনে যোগ দিয়েছিলেন। গ্রামীন ব্যংকের অনেক সাফল্য যা অনেকে অধ্যাপক ইউনূসের অবদান হিসাবে জানেন, তাঁর পেছনে ছিলেন খালেদ শামস। অনেক উদাহরন দিতে পারবো; আজ শুধু একটা দেই - গ্রামীন চেক। এর পেছনে ছিলেন বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের জনক নুরুল কাদের খান আর গ্রামীন ব্যাংকের খালেদ শামস। সেই খালেদ শামসের নামে চিঠিপত্র এলে মাঝে মধ্যে ভুল করে আমার কাছে চলে আসতো। সম্ভবত নামের আদ্যক্ষর এক হবার কারনে। গ্রামীন ব্যংকে চিঠিপত্র খোলার একটা সংস্কৃতি আছে; চিঠিটা খুলে খাম সহ একটা ফাইলে পেশ করা হতো। এমনি ভাবে একটা চিঠি পেলাম – মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তখন ফরমেটিভ পর্যায়ে। ট্রাস্টিদের কেউ একজন লিখেছেন ৫০ হাজার টাকা দিয়ে উদ্যোক্তা সদস্যদের একজন হবার জন্য। আমি ঠিক বুঝতে পারছিলামনা –আমার কাছে এই চিঠি কেন; নিশ্চয়ই কোন ভুল হয়েছে; কারন – টাকার পরিমানটি আমার কয়েক মাসের বেতনের সমান। ভালো করে দেখি – চিঠিটা খালেদ শামসকে লেখা। আমি চিঠিটা খালেদ শামসের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে ইন্টারকমে ক্ষমা চেয়ে নিলাম চিঠিটা খামবন্দী না থাকার কারনে।

 

 

 

চিঠিটা পাঠিয়ে দিলাম বটে; তবে বিষয়টা মনের মধ্যে গেঁথে রইলো। মনে হলো – আহা; আমার যদি ৫০ হাজার টাকা দেবার ক্ষমতা থাকতো! মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোক্তা সদস্যদের একজন আমি হতে পারতাম। সবচাইতে বড় কথা – আমার প্রানের ভেতরের একটি বিষয়ে যুক্ত থেকে ইতিহাসের অংশ হতে পারতাম। অনেকবার আমার মাসিক বেতন, আয়কর, মাসের খরচ হিসাব নিকাশ করেছি। কোনভাবেই হিসাব মেলেনি; আমার সঞ্চয় থেকে ৫০ হাজার টাকা দেবার সাহস আমার হয়নি। একটা খচখচানি মনের মধ্যে থেকে গেল। ভাবলাম; এখন থাক; পরে যদি কোনদিন সবচ্ছল হই – তখন দিয়ে দেব। নিজেকে নিজে এরকম একটা প্রবোধ দিয়ে আস্তে আস্তে বিষয়টা ভুলে গেলাম।
অনেকদিন পর; সম্ভবতঃ ২০০০ সালের দিকে, স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে একটা অনুষ্ঠানে ডাঃ সারোয়ার আলির সাথে দেখা। উনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের একজন ট্রাস্টি। অন্যান্য আলাপের সাথে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বিষয়ে জানতে চাইলাম। উনি আমাকে সংক্ষেপে সব আপডেট জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের একাউন্টের নাম, ব্যাংক, শাখা ইত্যাদি জানিয়ে দিলেন। এরপর কয়েক মাস যৎসামান্য চাঁদা পাঠাতে থাকলাম। কিন্তু কিভাবে যেন আবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম।
২০১০ সালের মার্চ মাসের ২৯ তারিখে মা মারা গেলেন। আমার সহকর্মী ও বন্ধুদের অনেকে সান্ত্বনা জানাতে এলেন। আমি খেয়াল করলাম – আমি সবার কাছে আমার মায়ের শিক্ষিত হবার সংগ্রামের কথা গর্বের সাথে বলছি। একজন মা তাঁর তিনজন মেয়ের সাথে ক্রমান্বয়ে পরপর তিন বছরে তিনবার পরীক্ষা দিয়ে অবশেষে ১৯৬৭ সালে এসএসসি পাশ করেছেন। মা মেয়ের একসাথে পাশ করা তখন বেশ মজার ব্যাপার হয়েছিল। তাঁর ৩০ বছরের শিক্ষকতার কথা গর্বের সাথে বলার পাশাপাশি আরেকটা বিষয় খুব গুরুত্বের সাথে বলছি – তা হলো মুক্তিযুদ্ধের কথা। কিভাবে একজন মা তাঁর ১৭ বছর বয়সের জ্যেষ্ঠ পুত্র সন্তানকে তাঁর স্বামীকে না জানিয়ে পকেটে কয়েকটা টাকা গুজে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে পাঠান তা আমার মাথায় আসেনা। বিশেষত আমি যখন আমার পুত্র সন্তানের কথা ভাবি, তুলনা করি – আমি ভেবে পাইনা আমার মা কি করে এই অসাধ্য সাধন করেছিলেন। গর্বে আমার মাথা নুয়ে আসে – আমার মায়ের জন্য। এই গর্ব আমরা করতে পারি - বাংলাদেশের সকল মুক্তিযোদ্ধার মায়েদের জন্য।
মনে পড়ে আমার বড় ভাবীর একদিনের কথোপথন। জীবন যখন এখনকার মতো স্বচ্ছল ছিলনা – তখন এক বিজয় দিবসে বড়ভাই ভাবীকে পোলাও রোস্ট গরুর মাংস রাঁধতে বলেছিলেন। বলেছিলেন – আমরা অনেক কষ্ট করে এই দেশ স্বাধীন করেছি; বিজয় দিবসে সব মনে পড়ে; আনন্দ করতে ইচ্ছা করে; একটু ভালোমন্দ খেতে ইচ্ছা করে। একজন মুক্তিযোদ্ধার কি সামান্য চাওয়া! শুনে আমার মনে ভীষণ দাগ কেটেছিল। কারন কোনদিন তাঁকে বলা হয়নি – ভাই রে; আমরাও তোর জন্য গর্বিত। আমাদের ভাই বোনদের সন্তানেরা কোনদিন তাঁর কাছে জানতে চায়নি তাঁর মুক্তিযুদ্ধের গল্প; বলেনি – উই আর প্রাউড অফ ইউ। বছর তিনেক আগে এক বিজয় দিবসে আমরা সব ভাই বোন আর আমাদের সন্তান সন্ততিরা এক হয়ে আমাদের বড়ভাইকে সারপ্রাইজ পার্টি দিয়ে খুব অবাক করে দেই। সবাই মিলে গান গেয়ে কবিতা আবৃত্তি করে বলি - উই আর প্রাউড অফ ইউ। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্ব; মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গর্ব। আমরা সৌভাগ্যবান, আমাদের ভাই একজন মুক্তিযোদ্ধা!
২০০৬ থেকে ২০০৮ সালে আফ্রিকায় থাকাকালে কয়েকবার গেছি রুয়ান্ডায়; দেখেছি সেখানকার গনহত্যা স্মারক জাদুঘর। বিমানযাত্রায় দেখা হয়েছে ডাঃ সারোয়ার আলির সাথে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কিউরেটিং নিয়ে কথা হয়; আমি তাঁদের রুয়ান্ডা যাবার প্রস্তাব দেই। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপুমনির সাথে কথা বলি ২০০৯ সালে। আমার নিজের কাছে নিজের অঙ্গীকারের কথা মাঝে মধ্যে মনে পড়ে; কিন্তু আর ক’টা দিন যাক; এমন ভেবে তা আর করা হয়ে উঠেনা।
আতিউর ভাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হবার পর হঠাত দেখলাম – বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যাংক মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অনুদান দিতে শুরু করলেন। আমি খানিকটা অবাক হলাম। কারন, ১৯৯৬ – ২০০০ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য কোন জমি বরাদ্দ দেয়নি; বরং সেই আমলে সামরিক জাদুঘরের জন্য ঢাকা শহরের সবচে প্রাইম লোকেশনের জমি দেয়া হয়েছে। সেখানে এখন সুফি ফেস্ট হয়; রেস্তোরাঁ চলে। হালে; বিমান বাহিনীও জাদুঘর করার জমি পেয়েছে; সেখানেও সবার আগে খুলেছে চাইনিজ রেস্তোরাঁ। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জমির বরাদ্দ হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তবে নানা কারনে সাম্প্রতিক অতীতে সরকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রয়োজনীয়তা বুঝেছেন এবং তাঁদের প্রতি অনুকুল মনোভাব দেখাচ্ছেন। বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অনুদানের জোয়ারের পাশাপাশি ট্রাস্টিরা বুঝতে পারেন জন অংশগ্রহন ছাড়া এই জাদুঘর চালানো কঠিন হবে। এই প্রেক্ষাপটে বছর দুয়েক আগে দেখি – মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ওয়েবসাইটটা বেশ আধুনিক হয়ে উঠেছে। তাঁদের ফান্ডরেইজিং পেজও বেশ ব্যবহারকারী বান্ধব হয়েছে। সবাইকে নির্মাণ কাজ ও রাজস্ব আহরনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতীকী ইট কেনার সুযোগ দিচ্ছেন ১০ হাজার টাকায় আর নানা পদবীর সদস্য হবার সুযোগ দিচ্ছে ১ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে কোটি টাকা পর্যন্ত। আমার মনে হলো এবার আর দেরী নয়; একটা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য একটা প্রতীকী ইট কিনে ফেলি। হুট করে একটা ইট কিনেও ফেললাম। তারপর মনে হলো সে খচখচানির কথা; অনেক কাল ধরে লালিত সেই সলজ্জ সাধ কিংবা পূরন না হওয়া সেই বাসনার কথা। সাথে সাথে পরিকল্পনা করে ফেললাম – এবার আমার মায়ের নামে কিনবো একটা প্রতীকী ইট আর আমার মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের নামে কিনবো আরেকটা প্রতীকী ইট; আর আমার অনেক দিনের সলজ্জ সাধ কিংবা দায় মিটানোর জন্য হবো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আজীবন সদস্য। আবারো আমার ভাবনা - ভাবনাই থেকে যায়; আলসেমী করে আর তা করা হয়ে উঠেনা।
মাস দুয়েক আগে রাজনীতবিদ অজয় রায়কে সমাহিত করার জন্য কটিয়াদী যাবার সুবাদে লম্বা যাত্রায় সুযোগ হলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি তারিক আলির সাথে কয়েক ঘন্টা সময় কাটানোর। তাঁকে আমার ভাবনার কথা জানালাম; তিনি যে কোনদিন তাঁকে ফোন করে চলে আসার জন্য বললেন। আমার আর যাওয়া হয়ে উঠেনা।
গতকাল সকালে প্রথম আলোর প্রথম পাতায় রায়ের বাজারের বধ্যভূমির ছবি দেখি, ভেতরে দেশের নানা প্রান্তরে ছড়িয়ে থাকা বধ্যভুমির বেহাল ছবি দেখি। মনটা বিষণ্ণ হয়ে উঠে। আর কয়েক বছর পরে এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের গল্প চাক্ষুষ বলার কেউ বেঁচে থাকবেনা। কয়েকদিন আগে মুক্তিযুদ্ধে জনমানুষের অবদান নিয়ে গবেষনা করা প্রখ্যাত গবেষক আফসান চৌধুরীর সাথে একটা ব্যাপারে ফোনে কথা হয়। তিনি তাগিদ দেন – যা কিছু করার খুব তাড়াতাড়ি করেন। বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধার বয়স ৬০ পার হয়ে গেছে; আর দু চার বছর পরে প্রয়োজনীয় কাউকে আর খুঁজে নাও পেতে পারেন। এই নিরাশার মাঝে চট করে মনে হয় – কেউ থাকুক না থাকুক, থাকবে এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় ভেজাল পদক, তালিকা আর সম্বর্ধনার বাইরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে খুব একটা সক্ষমতা দেখাতে পারবে বলে মনে করিনা। তখন আমাদের অন্যতম ভরসার জায়গা হবে এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এখানে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের আলামত, স্মারক চিহ্ন; ইতিহাসের সঠিক প্রতিফলন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তাঁর আউটরিচ কর্মসূচি দিয়ে হাজার হাজার স্কুলে সঠিক ভাবে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া শিখিয়ে যাবে, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানিয়ে যাবে, স্কুলের শিশুদের জাদুঘরে নিয়ে এসে তাঁদের চাক্ষুস করাবে –পাক হানাদার বাহিনী ও তাঁর দোসরদের অত্যাচার; জনমানুষের বিশেষত নারীদের ত্যাগ ও অংশগ্রহন আর আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা। এভাবেই এই জাদুঘর আমাদের জীবনে এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবে।
মনে যে মাত্র এই আশার আলো জেগে উঠলো অমনি বসে গেলাম ল্যাপটপ নিয়ে। অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নির্মাণে কিনলাম আমার মায়ের নামে একটা প্রতীকী ইট আর আমার মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের নামে আরেকটা প্রতীকী ইট; আর হয়ে গেলাম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আজীবন সদস্য। মনটা হালকা হলো; এলো স্বস্তি; আমার অনেক দিনের লালিত সলজ্জ সাধ পূরন হলো। পরক্ষনেই বুঝলাম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আজীবন সদস্য হিসাবে মুক্তিযুদ্ধর চেতনা বিকাশের যুদ্ধে আমার দায় সবেমাত্র শুরু হলো। সেই দায় থেকে আপনাদের কাছে আজ এই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে অনুরোধ জানাই - মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য নিজের সামর্থ্যের মধ্যে যে যা পারেন তাই করুন। কিছু না করতে পারলেও কোন অসুবিধা নেই; বছরে অন্তত একটি বার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি পরিবার প্রিয়জন নিয়ে দেখে আসুন।
মুক্তিযুদ্ধের গর্ব আমাদের সবার মধ্যে সঞ্চারিত হোক।


_________________________________

লেখক ডা. খায়রুল ইসলাম । মানবসেবী । সুলেখক। সাবেক সলিমুল্লা মেডিকেল কলেজ।
Country Director ,WaterAid Bangladesh

Former Health Program Manager at Grameen Trust ।

আপনার মতামত দিন:


প্রিয় মুখ এর জনপ্রিয়