ডা শাহাদাত হোসেন

Published:
2022-09-01 19:48:41 BdST

শিশুসন্তানের জন্য অধ্যাপক ডা. এম কিউ কে তালুকদারের অবশ্য করণীয় পরামর্শ


জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম কিউ কে তালুকদার বরেণ্য শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

 


জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম কিউ কে তালুকদার
বরেণ্য শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
___________________




একটি বাড়িতে, একটি পরিবারে একজন সন্তান আসে অনেক আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর আশার বার্তা নিয়ে। প্রত্যেক মা-বাবা চান, তাঁর সন্তান হবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, সুন্দর, মেধা ও বুদ্ধিমত্তায় সেরা।

আসলে প্রতিটি শিশুই সেরা। প্রত্যেকেরই সেরা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে।

কিন্তু তার জন্য চাই সঠিক পরিচর্যা, সঠিক যত্ন, সঠিক নির্দেশনা।


চাই সঠিক পুষ্টি: একটি শিশু জন্মের পর থেকে বড় হতে হতে শেষ পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাবে, তার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক পুষ্টি।

শিশুর বৃদ্ধি শুরু হয় মায়ের গর্ভ থেকেই। গর্ভকালীন অবস্থায় মায়ের সঠিক পুষ্টিও তাই নিশ্চিত করতে হবে। জন্মের আধ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে দিতে হবে মায়ের বুকের প্রথম শালদুধ। এর মাধ্যমে শুরু হবে তার পুষ্টি চাহিদা পূরণ।

 

এক ফোঁটা মাতৃদুগ্ধের মধ্যে ২০০টির মতো উপাদান আছে যা কোনো ফর্মুলায় পাওয়া যাবে না। তাই মায়ের দুধই শিশুর একমাত্র খাদ্য প্রথম ছয় মাস। যে শিশুটি এ থেকে বঞ্চিত, তার সারা জীবনের পুষ্টি ও বিকাশের পথে সৃষ্ট অভাবটি আর কিছু দিয়েই পূরণ হওয়ার নয়। ছয় মাস পর পরিপূরক খাদ্য হিসেবে বাড়ির হাঁড়ির খাবার যোগ করুন। কোনো টিনজাত খাবার, কোনো বাড়তি ফর্মুলার প্রয়োজন নেই। ব্যস, এতেই শিশু গ্রোথ চার্ট অনুযায়ী যথাযথ বেড়ে উঠবে। দেখতে হ্যাংলা পাতলা হলে ক্ষতি নেই, এমনকি পরিমাণে অনেক শিশু অন্যদের তুলনায় কম খায়, পুরোটা খায় না, এসব নিয়েও চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

 

খাওয়া নিয়ে যুদ্ধ নয়: বৃদ্ধির সময় ওজন নয়, উচ্চতা বেশি ভালো নির্দেশক। উচ্চতা ঠিকঠাক, ওজন একটু কম—তাতে সমস্যা বেশি নেই। কিন্তু উচ্চতা কম, ওদিকে ওজন যাচ্ছে বেড়ে—এটা খারাপ। এতে সঠিক বৃদ্ধির পরিবর্তে বরং চর্বি জমা হয় শরীরে। শিশুদের বেলায় রেসপন্সিভ ফিডিংয়ের কথা বলা হয়। মানে খাবারের দায়িত্ব শিশুর ওপরই ছেড়ে দিন।

 

তার পছন্দে স্বাধীনভাবে তাকে খেতে দিন। খাবার নিয়ে পেছন পেছন দৌড়ানো, টিভি দেখে বা গেম খেলতে বসিয়ে খাওয়ানো, মুখে তুলে খাওয়ানো—এসব প্রবণতা ক্ষতিকর। খাবারে যেন শর্করা, আমিষ, চর্বির সুষম বণ্টন থাকে। থাকতে হবে প্রচুর শাকসবজি ও মৌসুমি ফল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অন্তত নয় পদের ফল বা শাকসবজি থাকবে প্রতিদিন। এটা কীভাবে সম্ভব? সকালের নাশতায় একটা কলা বা এক গ্লাস ফলের রস, টিফিনে একটা মৌসুমি ফল (পেয়ারা, আমড়া, জাম্বুরা, আমলকী ইত্যাদি), দুপুরের খাবারে এক পদ শাক থাকবেই আর পাঁচমিশালি সবজি, ডাল, ভাতে চিপে দেওয়া লেবুর রস, বিকেলে একটু বাদাম,

রাতের খাবারে আবার সামান্য সবজি। হয়ে গেল নয় পদ।
চাই খেলাধুলা, পরিচ্ছন্নতাবোধ: দিনরাত স্কুল-কোচিং আর টিউটর, সারা দিন পড়াশোনার চাপ, বাড়ি ফিরে হয় টিভি দেখা নয় গেম খেলা—এক অসুস্থ জীবনধারায় বন্দী হয়ে গেছে এখনকার শিশুদের জীবন। তাদের খেলতে দিন, ছোটাছুটি করতে দিন, দুষ্টুমি করতে দিন;

প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট খেলাধুলা, ছোটাছুটি বা ব্যায়াম না হলে শরীরের গড়ন ঠিক হবে না। পরীক্ষার ফলই বড় কথা নয়। জ্ঞান ও বিদ্যা যেন বোঝা না হয়ে ওঠে। পরিচ্ছন্নতাবোধ সম্পর্কে শেখান।

আপনার মতামত দিন:


প্রেসক্রিপশন এর জনপ্রিয়