Dr. Aminul Islam

Published:
2021-10-02 17:19:36 BdST

ওসিডি ডায়েরি "খা, খান, খাঁ , কোনটাই নয়; খাঁন লিখতে হবে": বললেন ওসিডি রোগীর মা


 

অধ্যাপক ডা সুলতানা আলগিন
মনোরোগ বিভাগ
কনসালটেন্ট ওসিডি ক্লিনিক ও জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
_______________________________

কিশোর বয়সী একজন ছেলেকে নিয়ে মা চেম্বারে আসলেন। বসলেন সামনে দুটি চেয়ারে । পিছন পিছন বাবাও আসলেন। এদের কথা প্রত্যেকে প্রাইভেসী সচেতন। সবাই আলাদা করে কথা বলবেন। ভাল কথা ।
জিজ্ঞাসা করলাম: এর জন্য কত সময় লাগবে বুঝতে পারছেন ? ১০ মিনিট করে হলেও আধা ঘন্টা । তারপর কমপক্ষে ১০ মিনিট গ্রুপ আলোচনা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা। আপনারা কি এর জন্য কোন আলাদা গ্রুপ এপয়েন্টমেন্ট নিয়েছেন? এরপর মুখ চাওয়াচাওয়ি পর্ব।

তারপর বুঝিয়ে বললাম, সমস্যা যেহেতু আপনার ছেলের, ওর সাথে কথা বলে আপনারদের সাথে বলব। পাশে যদি থাকেন তবে সমস্যা গুলো বুঝতে বা বুঝাতে সহজ হতো।

ছেলের সমস্যা হলো অল্পতে রেগে যায়। “না ” শব্দটি শুনতে পারে না । যা চায় তাই সাথে সাথে দিতে হবে। মতের বিরুদ্ধে গেলে রক্ষা নাই। দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায়। পড়ায় মনোযোগ বসাতে পারছে না। সব ভুলে যায়।প্রচন্ড সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।মায়ের বলা শেষ হলে ছেলের দিকে তাকালাম । বললাম ঠিক কিনা? মাথা নাড়াল ঠিক।
ছেলেকে বললাম এবার তোমার সমস্যাগুলো তুমি বল।
বলল, আমি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। যাই করি তাতেই একটার পর একটা প্রশ্ন ,দ্বিধা মনে আসে। মনে হয় চিন্তার ব্যাংক মাথায়। জীবনটাকে বড় জটিল মনে হচ্ছে। দম বন্ধ লাগে। কেউ কথা বললে বা শব্দ করলে অসহ্য লাগে। কোন কুচকানো জিনিস আমি একেবারে দেখতে পারি না। কাগজে কোন ভাজ দেখলে সেটা কুচি কুচি করে ফেলি । পাশ থেকে মা বললেন একেবারে ইঁদুর যেভাবে কাটে সেরকম। ওর মা জানালেন ওর ঘরে কেউ ঢুকতে সাহস করে না। ওর জিনিসপত্র বইখাতা কেউ ধরলেই ও টের পেয়ে যায়। ও নিজেই সব কিছু গুছিয়ে রাখে। খাওয়াতে অনীহা। পছন্দের খাবার ছাড়া কিছু মুখে দিবে না। পোকামাকড়ে ভয়।
এবার প্রেসক্রিপশনে লেখার পালা। ওদের পদবী খান । আমি তাই লিখলাম । এভাবে লিখলে হবে না। মা বললেন খা লিখতে। তাই লিখলাম । এটাও ভুল। জিজ্ঞাসা করলাম কি লিখতে হবে? চন্দ্রবিন্দু দিতে হবে!খাঁ হবে!
তাই লিখলাম। খাঁ।
-উহুঁ, এটাও না। এক যোগে মা বললেন।
- খান নয়, খাঁ নয়; তাহলেও কি খালি খা ; জানতে চাইলাম সহাস্যে।
ও বললেন , খা, খান, খাঁ , কোনটাই নয়।
লিখে দেখিয়ে দিলেন , খাঁন লিখতে হবে। মা-ও তীর্যক চোখ সরিয়ে সায় দিলেন , এটা ঠিক হয়েছে।

এতক্ষণে বোঝা গেল সরষেয় ভুত।
মা এবং ছেলে দুজনেই ওসিডি রোগে ভুগছেন। সমমেরুতে বিকর্ষণ। তাই মা ছেলের জটিলতা । আর ওদের আড়ালে বাবার কাছ থেকে শুনলাম তার স্ত্রীর ওসিডি বা শুচীবাই রোগের বর্ণণা। তার সাংসারিক জীবনের সমস্যাগুলো। কাজের লোক থাকে না । বাইরের কোন লোকজন বা আত্মীয়¯স্বজন কেউ আসতে পারে না। জীবনটা কেমন এলামেলো হয়ে গেল। তাও মন্দেও ভাল নিজের না হোক ছেলের চিকিৎসার জন্য সে আপনাকে দেখাতে রাজি হয়েছে ।

____________


কেন হয় ?

ওসিডির জন্য বংশগত কারণ যদি ৫৫% দায়ী হয় তবে পারিপার্শ্বিক কারণ ৪৫% দায়ী । বংশগত কারন ছাড়াও এই রোগ হতে পারে তবে যাদের এই কারন আছে তাদের রিস্ক বেশি। মানসিক চাপ অনেকাংশে দায়ী । শরীরে জৈব রাসায়নিক যেমনঃ সিরোটনিন, গ্ল­ুটামেট, ডোপামিন এর হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। ফলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। আত্মহত্যার মত দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

যা করণীয়:

ওসিডি রোগকে বা রোগীকে হেসে উড়িয়ে দিবেন না । অবহেলা করবেন না। তার সমস্যাগুলোকে মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। আত্মহত্যা কারও কাম্য নয়। রোগীর আচারআচরণে বা কথাবার্তায় কোন রকম অস্বাভাবিকতা দেখলে তাকে অবশ্যই মূল্যায়ন করুন।
অন্যান্য শারিরীক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ চিকিৎসার মাধ্যমে যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ঠিক তেমনি এই ওসিডি রোগটিও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। এইসব আচরণসমূহকে অস্বাভাবিক না ভেবে কমিয়ে আনতে চেষ্টা করুন। সচেতন হন। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। ওষুধের পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজকর্ম ,খাবারদাবার,ব্যায়াম শরীরচর্চা নিয়মিত ভাবে করুন।

নিম্নলিখিত সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাবারগুলি নিয়মিত খাওয়া উচিত ----
* আমিষ জাতীয় খাবারঃ মাংস, কলিজা, ডিম, দুধ, সামুদ্রিক মাছ।
* ফলমুল জাতীয় খাবারঃ কলা, আনারস, আম, আঙুর, খেজুর।
* শাকসবজিঃ পালং শাক, পুই শাক, বেগুন, ফুলকপি, শিম জাতীয় বীজ, মাশরুম, টমেটো, ব্রকলি।



যে সকল খাবার কম / খাবেন না ----

মিষ্টি জাতীয় খাবার, ক্যাফেইন যুক্ত খাবার যেমন-চকলেট, চা, কফি, সফ্ট ড্রিংকস, ক্যাফেইন যুক্ত কিছু ওষুধ, মদ জাতীয় পানীয়, কৌটায় সংরক্ষিত খাবার।

আপনি কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডারে: ওসিডি তে ভুগছেন?
যেভাবে বুঝবেন
১।আপনি কি অতিরিক্ত ধোয়া-মোছা করেন অথবা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন?
২।আপনি কি কোন কিছু অতিরিক্ত চেক/ যাচাই-বাছাই করেন?
৩।আপনার মাথায় অযাচিত ভাবে কি কোন চিন্তা আসে? যা কিনা আপনি চাইলেও মাথা থেকে সহজে বের করতে পারেন না ?
৪।আপনার দৈনন্দিন কাজ শেষ করতে কি অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়?
৫। আপনার মধ্যে আসবাবপত্র, বই খাতা, কাপড়-চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখার প্রবণতা আছে কি ?
Z-FOCS: (Zohar Fineberg Obsessive Compulsive Screen))
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর যে কোন একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ বোধক হয় তবে মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়