SAHA ANTAR

Published:
2021-09-10 19:39:40 BdST

ওসিডি এবং সুইসাইড: যা করবেন, যা খেয়াল রাখবেন


 


অধ্যাপক ডা সুলতানা আলগিন
কনসালটেন্ট, ওসিডি ক্লিনিক
মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা
____________________

আজ বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। ডব্লিউ.এইচ.ও এর জরিপে বলা হয়েছে বিশ্বে প্রতি বছর ৮লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। বয়স ৪৫ থেকে ৫৪ বছর। মহিলাদের তুলনায় পুরুষেরা বেশী ইমোশনাল । হয়তো সে কারণেই মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশী। বিভিন্ন কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে।

এর চিন্তাকে দুইভাগে ভাগ করা যেতে পারে। ১. একটিভ ২.প্যাসিভ । যারা একটিভ তারা আত্মহত্যার প্রস্তুতি মাফিক চলে এবং আত্মহত্যা করে। আর যারা প্যাসিভ তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে কিন্তু কোন প্রস্তুতি থাকে না। এই দুই গ্রুপই আশংকাজনক।
ওসিডি একটি দীর্ঘমেয়াদী মানসিক রোগ। হাজারো রকমের চিন্তা নিজের অজান্তে ইচ্ছার বিরুদ্ধে মানুষের মনে আসতে থাকে। যা মনকে শুধু ভারাক্রান্তই করে না তাকে আত্মহত্যাপ্রবণও করে তোলে। ওসিডি/ শুচিবায়ুরোগীদের আত্মহত্যার হার সাধারণ মানুষের তুলনায় ১০গুণ বেশী । জীবনের যে কোন সময় ৫%-২৫% মানুষ আত্মহত্যাপ্রবণতায় ভোগে।


ওসিডি রোগের লক্ষণগুলোকে ৪টা ডায়মেনশনে ভাগ করা যেতে পারে।

১.জীবাণূুএবং সংক্রমণজনিত উদ্বেগ,
২.ক্ষতি,আঘাত বা দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ী ভেবে উদ্বেগ, ৩.অগ্রহণযোগ্য চিন্তা সমূহ,
৪.সামঞ্জ্স্যপূর্ণ, সম্পূর্ণ এবং ’একদম ঠিক” বা নিখুঁতভাবে করার বিষয়ে উদ্বেগ ।

এসব চিন্তা যখন তাদেরকে অশান্ত করে তোলে তখন অনেকে নিজেকে আঘাত করে বা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
অনেক ওসিডি রোগীদের মধ্যে একটা লক্ষণ বলতে শোনা যায় “ভয় ভয় লাগে”। কিন্তু কিসের ভয় বুঝিয়ে বলতে পারে না। মৃত্যুভয় ,হারানোর ভয় বিচলিত করে। নিজের দ্বারা আপনজনের বা কারও কোন ক্ষতি হবে এই আতংক চিন্তা বিশেষকরে শিশুকিশোরদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। তখন তাদের মধ্যে নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা দেখা যায়। ধর্মের বিরুদ্ধে চিন্তা বা অনাকাঙ্খিত যৌনচিন্তা মানুষের মধ্যে পাপবোধ জাগিয়ে তোলে । তাতে অনেকে বিষন্নতায় ভোগে । নিজেকে জাহান্নামী ভাবে। অনেকে না বুঝেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।


সুইসাইডাল ওসিডি:

সুইসাইডাল ওসিডিতে শুধুই “আত্মহত্যা সংক্রান্ত চিন্তা ” ঘুরে ফিরে আসতে থাকে।এদের কেউ আত্মহত্যা করতে চান না। কিন্তু মন থেকে এই চিন্তা সরাতে পারে না। কিভাবে সুইসাইড করবে যেমন রশিতে ফাঁসি দিয়ে , ছাদ থেকে লাফ দিয়ে ,একমুঠো ওষুধ খেয়ে মারা যাবে-- সারাক্ষণ এসব চিন্তা তাকে আতংকিত করে তোলে। সুইসাইডের বিভিন্ন ছবি চোখের সামনে আসতে থাকে। ধর্মীয় বাধা তাকে নিয়ন্ত্রণ করে । অনেকে এই সময় ধর্মীয় কাজ বাড়িয়ে দেন। কেউকেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এই ধরণের সুইসাইডাল ওসিডি সম্পর্কে সতর্ক থাকা জরুরী।

কেন হয় ?

ওসিডির জন্য বংশগত কারণ যদি ৫৫% দায়ী হয় তবে পারিপার্শ্বিক কারণ ৪৫% দায়ী । বংশগত কারন ছাড়াও এই রোগ হতে পারে তবে যাদের এই কারন আছে তাদের রিস্ক বেশি। মানসিক চাপ অনেকাংশে দায়ী । শরীরে জৈব রাসায়নিক যেমনঃ সিরোটনিন, গ্ল­ুটামেট, ডোপামিন এর হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। ফলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। আত্মহত্যার মত দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

যা করণীয়:

ওসিডি রোগকে বা রোগীকে হেসে উড়িয়ে দিবেন না । অবহেলা করবেন না। তার সমস্যাগুলোকে মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। আত্মহত্যা কারও কাম্য নয়। রোগীর আচারআচরণে বা কথাবার্তায় কোন রকম অস্বাভাবিকতা দেখলে তাকে অবশ্যই মূল্যায়ন করুন।
অন্যান্য শারিরীক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ চিকিৎসার মাধ্যমে যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ঠিক তেমনি এই ওসিডি রোগটিও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। এইসব আচরণসমূহকে অস্বাভাবিক না ভেবে কমিয়ে আনতে চেষ্টা করুন। সচেতন হন। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। ওষুধের পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজকর্ম ,খাবারদাবার,ব্যায়াম শরীরচর্চা নিয়মিত ভাবে করুন।

নিম্নলিখিত সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাবারগুলি নিয়মিত খাওয়া উচিত ----
* আমিষ জাতীয় খাবারঃ মাংস, কলিজা, ডিম, দুধ, সামুদ্রিক মাছ।
* ফলমুল জাতীয় খাবারঃ কলা, আনারস, আম, আঙুর, খেজুর।
* শাকসবজিঃ পালং শাক, পুই শাক, বেগুন, ফুলকপি, শিম জাতীয় বীজ, মাশরুম, টমেটো, ব্রকলি।

যে সকল খাবার কম / খাবেন না ----

মিষ্টি জাতীয় খাবার, ক্যাফেইন যুক্ত খাবার যেমন-চকলেট, চা, কফি, সফ্ট ড্রিংকস, ক্যাফেইন যুক্ত কিছু ওষুধ, মদ জাতীয় পানীয়, কৌটায় সংরক্ষিত খাবার।

আপনি কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডারে: ওসিডি তে ভুগছেন?
যেভাবে বুঝবেন
১।আপনি কি অতিরিক্ত ধোয়া-মোছা করেন অথবা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন?
২।আপনি কি কোন কিছু অতিরিক্ত চেক/ যাচাই-বাছাই করেন?
৩।আপনার মাথায় অযাচিত ভাবে কি কোন চিন্তা আসে? যা কিনা আপনি চাইলেও মাথা থেকে সহজে বের করতে পারেন না ?
৪।আপনার দৈনন্দিন কাজ শেষ করতে কি অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়?
৫। আপনার মধ্যে আসবাবপত্র, বই খাতা, কাপড়-চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখার প্রবণতা আছে কি ?
Z-FOCS: (Zohar Fineberg Obsessive Compulsive Screen))
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর যে কোন একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ বোধক হয় তবে মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়