Ameen Qudir

Published:
2020-01-02 22:20:10 BdST

প্রবীণ মানসিক স্বাস্থ্য : প্রবীণদের নয় অবহেলা অবজ্ঞা:পাশে থাকার করো প্রতিজ্ঞা


ডা. সুলতানা এলগিন
সহযোগী অধ্যাপক
মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ এবং কনসালটেন্ট, ও সি ডি ক্লিনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সম্পাদক, ডাক্তার প্রতিদিন.কম
___________________________

বিশ্বের সকল প্রান্তে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের সিনিয়র সিটিজেন বা প্রবীণ ব্যক্তি হিসেবে সমাজে একটা আলাদা গ্রুপে চিহ্নিত করা হয়েছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী সিনিয়র সিটিজেনদের ১৫% মানসিকরোগে ভোগে। তার মধ্যে ডিপ্রেশন ১৫%-২০% । বাংলাদেশে বর্তমানে দেশে প্রবীণ জনসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮% এবং বৃদ্ধির হার ৪.৪১ %।
শারীরিক অসুস্থতা ,মানসিক সমস্যা টানাপোড়েন এ বয়সে অন্যান্যদের চেয়ে কোন অংশে কম নয় বরং বেশীই। জীবনের বিরাট অংশের দায়দায়িত্ব শেষে একাকীত্ব,অর্থসংকট, শারীরিক জীর্ণতার বোঝা চেপে বসে। পঞ্চান্ন উর্ধ্ব ব্যক্তিদের প্রায় ২০% মানুষ সাধারণত যে সকল মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন : উদ্বেগ,বিষন্নতা,খাদ্যে অরুচি, আত্মহত্যার চিন্তা,স্মৃতিভ্রম ইত্যাদি।

প্রবীণদের নয় অবহেলা অবজ্ঞা
পাশে থাকার করো প্রতিজ্ঞা

সিনিয়র সিটিজেন বা প্রবীণ ব্যক্তিদের মানসিক সমস্যাগুলো কেন উপেক্ষিত হয় ?
মানসিক রোগ সব দেশে সব বয়সে একটা উপেক্ষিত বিষয় হিসেবে ছিল আর এখনও আছে। কুসংস্কার, ভ্রান্তধারণা বা বয়সের ¯ স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে অজ্ঞতা বৃদ্ধবয়সে মানসিক স্বাস্থ্যর যত্নের বদলে অবহেলা মুখ্য হয়ে দাড়ায়। চিকিৎসকরাও শারীরিক রোগের দিকে বেশী নজর দিয়ে থাকেন। বৃদ্ধ বয়সে বিষন্নতার লক্ষণ যেমন শারীরিক রোগের ঈঙ্গিত করে তেমনি অনিয়ন্ত্রিত শারীরিক রোগও মানসিক রোগের দিকে আঙ্গুলী নির্দেশ করে। শারীরিক ব্যথাবেদনা, অনিয়ন্ত্রিত হাইপার টেনশন.ডায়াবেটিস,অনিদ্রার পিছনে লুকিয়ে থাকে মানসিক ব্যথাবেদনা।আবার বিষন্নতা রোগ ডিমেনশিয়ার লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।এই দুইয়ের চিকিৎসার ভারসাম্য না হলে সিনিয়র সিটিজেন ক্রমেই সমাজে বোঝা হয়ে উঠবে। মানসিকরোগের জন্য রয়েছে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা । সঠিক চিকিৎসায় রোগী সহজেই সেরে ওঠে। আর এজন্য দরকার সামাজিক সচেতনতা, সকলের দায়িত্ববোধ আর চিকিৎসার সুব্যবস্থা।

কি কি কারণে বৃদ্ধবয়সে মানসিক রোগের সূত্রপাত হয় :
দীর্ঘকালীন শারীরিক ব্যথাবেদনা, অনিয়ন্ত্রিত হাইপার টেনশন. ডায়াবেটিস , এসব রোগের কারণে দীর্ঘকাল ওষুধ সেবন,অনিদ্রা, একাকীত্ব, জীবনের কোন বড় দুর্ঘটনা বা আপনজনের মৃত্যু ,খাদ্যে অনীহা, স্মৃতিভ্রম ইত্যাদি ।

শারীরিক রোগ করতে নিয়ন্ত্রণ
মানসিক রোগের চিকিৎসা প্রয়োজন

বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুলে পাক ধরা, চামড়া ঢিলে হওয়া , ভুলে যাওয়া , দুর্বলতাবোধ স্বাভাবিক। কিন্তু যখনই দেখবেন আপনার / প্রবীণ নিকটজনের চারিত্রিকপরিবর্তনগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক তখনই দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ।
যেসব লক্ষণ আপনাকে ভাবিয়ে তুলতে পারে:
  খাদ্যে অনীহা ,বদহজম, দুর্বলতাবোধ বা চিরপরিচিত ¯^ভাবে কোন পরিবর্তন
  হতাশাবোধ, একাকীত্ব , অনিদ্রা, উদ্বেগ বা খিটখিটে মেজাজ, রাগ অভিমান বা আক্রোশ বেড়ে যাওয়া, হিসাব কাজ বা সংখ্যাসংক্রান্ত কাজে ব্যঘাত ঘটলে, দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা দেথা দিলে
  আচরণগত সমস্যা যেমন- অহেতুক রেগে যাওয়া, উদ্ধত আচরণ, ভাঙচুর করা, অসংলগ্ন কথাবার্তা ,যখন তখন বাইরে বের হয়ে যাওয়া ,নিজের প্রয়োজনের কথা গুছিয়ে বলতে না পারা
  সাইকোসিস -- একা একা হাসা ও কথা বলা, সন্দেহ প্রবণতা, অসংলগ্ন কথা ও আচরণ
  মুড ডিসঅর্ডার -- ডিপ্রেশন,ম্যানিয়া
  উদ্বেগরোগ -- সিদ্ধান্তহীনতা,মৃত্যুভয়,ফোবিয়া ,ওসিডির লক্ষণ
  স্মৃতিভ্রম -- ডিমেনশিয়া,ডিলিরিয়াম
ডিমেনশিয়া ও ডিপ্রেশন এই বয়সে পাশাপাশি থাকে । এদের পার্থক্য করতে না পারলে রোগীর চিকিৎসা ভুল হবে। ভুল / অপ্রয়োজনীয় ওষুধ খেলে রোগীর সমস্যা আরও বাড়বে।
তাই আপনি আপনার নিকটজনের মধ্যে নীচের কোন সমস্যাগুলো লক্ষ্য করছেন ,মিলিয়ে দেখুন।
  আপনার বয়বৃদ্ধ আত্মীয়ের ভুলে যাওয়া সমস্যাটি কতদিন ধরে শুরু হয়েছে ?
  আপনার বয়বৃদ্ধ আত্মীয়ের ভুলে যাওয়া সমস্যাটি কার কাছে বেশী সমস্যাপূর্ণ মনে হয় -- আপনার না আপনার বয়বৃদ্ধ আত্মীয়ের কাছে
  আপনার বয়বৃদ্ধ আত্মীয় কোন কথাটি বেশী বলে--ভুলে যাই / মন খারাপ /অস্থিরভাব/ অশান্তি লাগা
  আপনার বয়বৃদ্ধ আত্মীয় কি প্রায়ই সব প্রশ্নের উত্তরে “জানি না ”বলে ? অথচ পরে জিজ্ঞেস করলে দেখা যায় তার সবকিছু মনে আছে ।
  আপনার বয়বৃদ্ধ আত্মীয়ের কি সঠিক শব্দচয়নের অভাবে কথপোকথন করতে সমস্যা হয়?


ডিপ্রেশন ডিমেনশিয়া
তফাৎ বুঝে করো চিকিৎসা

মানসিকরোগের সঠিক চিকিৎসা না নিলে কি হতে পারে :
  কর্মক্ষমতা অকালে কমে যায়
  অকারণে হাসপাতালে ভর্তির আশংকা বেড়ে যায় ।
  সিনিয়র সিটিজেন এবং আপনার পরিবারের দুর্ভোগ বাড়তে থাকে অথচ পূর্ণসুস্থতার সুযোগ কমতে থাকে।

কাদের সহায়তা / এগিয়ে আসা প্রয়োজন ?
প্রবীণ পরিবার সদস্য অনেকসময় তার সমস্যাগুলো বুঝতে পারেন না বা বুঝিয়ে বলার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসে । তাদের মতামত বা সমস্যা শোনার জন্য কাছেপিঠের লোকজন পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না । তখন একমাত্র আপনিই আপনার নিকটজনের সমস্যা, লক্ষণ গুলো দ্রুত চিহ্নিত করতে পারেন ।
মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের সুপরামর্শ আপনাদের অহেতুক কষ্টভোগের হাত থেকে রেহাই দিতে পারে । মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞ আপনার আত্মীয়ের অন্যান্য শারীরিক রোগের ওষুধের সাথে যাতে কোন রকম ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া না হয় তেমন ওষুধই দিবেন । আর এক্ষেত্রে ওষুধের ডোজও বেশ কম লাগে। তখন শারীরিক রোগগুলো সহজেই নিয়ন্ত্রণে আসে। আপনার সচেতনতা আর প্রয়োজনে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ দিতে পারে সুস্থ ¯স্বাভাবিক জীবন।

বয়স্কজনের জন্য কার্যক্রম
যৌথ পরিবারই মৌলিক বৃদ্ধাশ্রম

এবার এই ছড়াকথাগুলো আসুন মনে গেঁথে নিই।

 

ডিপ্রেশন ডিমেনশিয়া
তফাৎ বুঝে করো চিকিৎসা
বয়স্কজনের জন্য কার্যক্রম
যৌথ পরিবারই মৌলিক বৃদ্ধাশ্রম

প্রবীণদের নয় অবহেলা অবজ্ঞা
পাশে থাকার করো প্রতিজ্ঞা
যৌথ পরিবারকে করলে খতম
সময়ের দাবি বৃদ্ধাশ্রম

ডিপ্রেশন ডিমেনশিয়া
তফাৎ বুঝে করো চিকিৎসা
শারিরীক রোগ করতে নিয়ন্ত্রণ
মানসিক রোগের চিকিৎসা প্রয়োজন

সমাজের শিরোমনি বৃদ্ধা বৃদ্ধা
সর্বদা তাদের করো শ্রদ্ধা

 

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়